মো. নেছার উদ্দিন চৌধুরী, রাবি
স্মৃতি বিজড়িত মেলবন্ধন

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার জগন্নাথ ইউনিয়নের বিজয়করা গ্রাম। ১৯৬২ সালে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বিজয়করা ছুফিয়া রাহমানিয়া দাখিল মাদরাসা’। এর প্রতিষ্ঠাতা বিখ্যাত সুফি সাধক সুফি আব্দুর রহমান (রা.হি) (ম"ত্যু-১৩৩৬ বাংলা)এর সুযোগ্য পুত্র সুফি দলিলুর রহমান (রা.হি) (মৃত্যু-১৯৮৭)। উনি এ অঞ্চলের মানুষকে ধর্মের দিকে আহ্বান করেছেন বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে। তার মধ্যে অন্যতম ছিল এই প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রতিষ্ঠানের সর্বপ্রথম সুপারিনটেনডেন্টে ছিলেন হাজী জামাল উদ্দিন। উনার হাত ধরেই এই মাদরাসায় প্রথম থেকে দাখিল (দশম শ্রেণি) পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু হয়। অদ্যাবধি যার কার্যক্রম চলমান। এই প্রতিষ্ঠানের অনেক গৌরবময় ইতিহাসের পাশাপাশি কিছু ম্লান স্ম"তিও রয়েছে। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে এ প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের রাজনৈতিক ট্যাগের শিকার হয়ে তার অস্তিত্ব প্রায় অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের শিক কর্মকর্তা ও শিার্থীরা। এজন্য প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ প্রতিষ্ঠানে একটি পুনর্মিলনী করাও সম্ভব হয়নি।
শুধু তাই নয়, এখান থেকে চাকরি করে বিদায় হয়ে যাওয়া শিকদেরও অফিসিয়ালি কোনো বিদায়ের ব্যব¯'া করা সম্ভব হয়নি। এজন্য মাদরাসার এসএসসি ২০১৯ ব্যাচের শিার্থীরা ২০২২ সালে অনেক চেষ্টা করেও শিক সংবর্ধনা ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানকে সফল করতে পারেনি। তবে এই গৌরবময় ব্যাচের শিার্থী মো. নেছার উদ্দিন চৌধুরী ও আশিক মাহমুদ চৌধুরী’র একান্ত প্রচেষ্টার পাশাপাশি পুরো ব্যাচ যেমন হাল ছাড়েনি, তেমনি প্রাক্তন ছাত্রদের একটা সম্মিলিত দল বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি। অবশেষে, ১১ জানুয়ারি ‘সাবেক-বর্তমান ছাত্র মিলনমেলা ও বিদায়ী-বর্তমান শিক সংবর্ধনা ২০২৫’ নামে এই প্রোগ্রামটি বাস্তবায়িত হয়। সকাল ৯টা থেকে প্রাক্তন-বর্তমান শিার্থীদের মাঝে পাঞ্জাবি এবং নাশতা বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের কর্মসূচি শুরু হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান ছিলেন চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. পেয়ার আহমেদ। প্রধান অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ করেন মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা সিরাজুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে ভাইস চ্যান্সেলর তার বক্তৃতায় বলেন, মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীরা অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে তাদের মেধার মাধ্যমে সমাজ, রাষ্ট্রে ও বিশ্বে নেতৃত্ব দিয়ে যা"েছ। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে মাদরাসা ছাত্রদের অসামান্য অবদানের কথাও তুলে ধরেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কোরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. নাছির উদ্দীন মিজি। তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, শিার্থীদের ঐক্য, ভালোবাসা এবং শিা প্রতিষ্ঠানের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আরো দ"ঢ় করতে এ ধরনের উদ্যোগ অনন্য ভূমিকা রাখবে। পরবর্তীতে বিদায়ী ও বর্তমান শিকদের হাতে সম্মামনা স্মারক তুলে দেন উপ¯ি'ত অতিথিব"ন্দ এবং বিদায়ী শিকদের সম্মাননা হিসেবে কিছু অর্থও প্রদান করা হয়। এই অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল শিকদের এবং প্রাক্তন ছাত্রদের স্ম"তিচারণ। প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে ১৯৬৭, ৬৮, ৮০ ও ৮৪ এবং সর্বোপরি ১৯৯০ ব্যাচ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত সব শিার্থীর একাংশ উপ¯ি'ত ছিলেন। যাদের স্ম"তিচারণ, বর্তমানে অব¯'ান, তাদের কাটানো শৈশবের সোনালি অতীতের প্রাণবন্ত উপ¯'াপনা উপ¯ি'ত সবাইকে মু" করেছে। এই জাঁকজমক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাদরাসার সাবেক ছাত্র ও ইবনে সিনা ট্রাস্টের ম্যানেজার মহিউদ্দিন কাইয়ুম। মাদরাাসার প্রাক্তন ছাত্র এমএ আলীম ভূঁইয়া (শামীম) ও সাদ্দাম হোসেনের সঞ্চলনায় উক্ত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
জোহরের নামাজের পরে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পবে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেখানে উপ¯ি'ত ছিলেন ইসলামিক সংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ কলরব শিল্পীগোষ্ঠী। যেখানে সাফিন আহমেদের কণ্ঠে ‘বন্ধু! ভুলে যেও না কখনো’ গানটি অনুষ্ঠানের মধ্যমণি হিসেবে কাজ করেছে। যেটিকে অনুষ্ঠানের মূল বিষয়ও বলা চলে। সাংস্কৃতিক আয়োজনে আরো ছিল সন্দীপন ও মুক্ত কুঁড়ি শিল্পীগোষ্ঠীর নান্দনিক পরিবেশনা। অনুষ্ঠানে কুমিল্লার বিখ্যাত নাট্য অভিনেতাদের দল ইতিব"ত্ত সংসদের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। যাদের নাট্য মঞ্চায়ন দর্শকদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করেছে। প্রত্যেকটি উপ¯'াপনায় একটি শিা নিহিত ছিল। সেগুলো শিার্থীদের জন্য যেমন ছিল আনন্দের তেমনি শিণীয়। এই সফল আয়োজনের পেছনে অকান্ত পরিশ্রম করা সবার প্রতি রইলো আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
"