
নতুন বছরে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা
দক্ষিণ বঙ্গের অন্যতম বিদ্যাপীঠ সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ। শিক্ষার আলো ছড়ানোর পাশাপাশি আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস বহন করে চলেছে এ বিদ্যাপীঠ। বরিশালে ২৪ এর জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল এই ক্যাম্পাস থেকেই। সেই গৌরবময় অধ্যায় পেরিয়ে আমরা প্রবেশ করেছি ২০২৫ সালে। নতুন বছর মানেই নতুন সম্ভাবনা, নতুন স্বপ্ন। বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে জেগে আছে নানা ভাবনা আর প্রত্যাশা। তারা চায় একটি সমৃদ্ধ, সুষ্ঠু ও উদ্ভাবনী পরিবেশ, যেখানে মেধা, মনন ও সৃজনশীলতা বিকাশের সর্বোচ্চ সুযোগ থাকবে। ক্যাম্পাস হবে বৈষম্যহীন এবং সবার প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী। নতুন বছরে বিএম কলেজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশার কথাগুলো তুলে ধরেছেন বিএম কলেজের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মো. মেহেরাব হোসেন রিফাত

দক্ষিণ বঙ্গের অন্যতম বিদ্যাপীঠ সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ। শিক্ষার আলো ছড়ানোর পাশাপাশি আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস বহন করে চলেছে এই বিদ্যাপীঠ। বরিশালে ২৪ এর জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল এই ক্যাম্পাস থেকেই। সেই গৌরবময় অধ্যায় পেরিয়ে আমরা প্রবেশ করেছি ২০২৫ সালে। নতুন বছর মানেই নতুন সম্ভাবনা, নতুন স্বপ্ন। বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে জেগে আছে নানা ভাবনা আর প্রত্যাশা। তারা চায় একটি সমৃদ্ধ, সুষ্ঠু ও উদ্ভাবনী পরিবেশ, যেখানে মেধা, মনন ও সৃজনশীলতা বিকাশের সর্বোচ্চ সুযোগ থাকবে। ক্যাম্পাস হবে বৈষম্যহীন এবং সবার প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী। নতুন বছরে বিএম কলেজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশার কথাগুলো তুলে ধরেছেন বিএম কলেজের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মো. মেহেরাব হোসেন রিফাত
সংকট কাটিয়ে এগিয়ে চলার প্রত্যায়
দক্ষিণ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারি ব্রজমোহন কলেজ। সর্বশেষ ২০১৫ সালে কলেজটি দেশসেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল। তবে সেই থেকে এখন পর্যন্ত কলেজটির স্কোর ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী, যা একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের গভীর উদ্বেগের কারণ। ৬০ একর জমির ওপর স্থাপিত এ বিশাল ক্যাম্পাসে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। প্রতিদিন অসংখ্যা শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত থাকে কলেজটি। কিন্তু ক্যাম্পাসে শিক্ষার সঠিক পরিবেশ তৈরির অভাব, অবকাঠামোগত সমস্যাসহ রয়েছে প্রশাসনিক জটিলতাও। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠ পরিবেশ এবং তাদের অধিকার রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ছাত্র সংসদ নির্বাচন। উল্লেখ্য, বিএম কলেজে সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন (বাকসু) অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০২ সালে। কিন্তু সেই থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম এ প্ল্যাটফর্মটি অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। নতুন বছরে প্রত্যাশা প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ক্যাম্পাসের পরিবেশকে শিক্ষার্থীবান্ধব করে তুলবে। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেই যেন ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এর মাধ্যমে ক্যাম্পাসে একটি সুষ্ঠ ধারার রাজনীতি চর্চার সুযোগ সৃষ্টি হবে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে, অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
মো. সাহাদাত হোসেন
বাংলা বিভাগ।
ক্যাম্পাস হোক সৃজনশীলতার কেন্দ্রস্থল
নতুন বছর মানেই নতুন সম্ভাবনা, নতুন লক্ষ্য এবং নতুন স্বপ্ন। প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে কলেজ ক্যাম্পাস শুধুমাত্র শিক্ষার স্থান নয়, বরং এটি হতে পারে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন বিকাশের এক আদর্শ কেন্দ্র। আমাদের প্রত্যাশা হলো, ক্যাম্পাস হবে এমন একটি জায়গা, যেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে পারবে। গবেষণার উপযোগী পরিবেশ এবং নতুন জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে ক্যাম্পাস হবে সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ক স্থান। আমরা চাই, একটি নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্যাম্পাস, যেখানে সবাই সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবে। ক্লাব কার্যক্রম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এবং খেলাধুলার আয়োজন শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং গাইডেন্স আরো উন্নত হবে বলে আমরা আশা করি। নতুন বছরে এই ক্যাম্পাস হবে এমন একটি জায়গা, যেখানে শিক্ষার্থীরা শুধু জ্ঞান অর্জন করবে না, বরং নৈতিকতা, সৃজনশীলতা, এবং নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করে নিজেদের ভবিষ্যতকে আরো উজ্জ্বল করে তুলবে।
মো. শাহেদ খান
পদার্থবিদ্যা বিভাগ।
জুলাই-আগস্টে আমাদের অন্যতম দাবি ছিল বাকসু
আমরা শিক্ষার্থীরা যখন আমাদের যৌক্তিক দাবি কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন করছিলাম, তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করার জন্য সরকার দলীয় সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ১৬ জুলাই অতর্কিত হামলা করে। আন্দোলনকারীদের উপর সেই হামলার স্মৃতিচারণ করলে এখনো শরীর কেঁপে ওঠে। আমাদের আন্দোলন ছিল মেধা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের আন্দোলন, যে আন্দোলনের সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত ছিলাম দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আমি মনে করি, ছাত্ররাজনীতি ব্যাতিত কখনো কোনো ক্যাম্পাস পরিচালিত হতে পারে না। তবে সে রাজনীতি হতে হবে সুস্থ সুন্দর সুশৃঙ্খল আদর্শিক এবং শিক্ষার্থী বান্ধব। আমাদের প্রত্যাশিত ছাত্ররাজনীতি বাস্তবায়নের একমাত্র মাধ্যম লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি পরিহার করে প্রতিনিধিত্ব ভিত্তিক রাজনৈতিক পরিবেশ বাস্তবায়ন করা। যেটা কেবল মাত্র বাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যে দিয়েই সম্ভব। আমরা জানি, শেষ বারের মতো বাকসু নির্বাচন হয় ২০০২ সালে এর পরে আর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের দ্বারা ছাত্রদের অধিকার ধ্বংস করা হয়েছে। ২৪-এর আন্দোলনে অন্যতম দাবি ছিল নিয়মিত বাকসু নির্বাচন দেওয়া। এক রক্তক্ষয় আন্দোলনের মাধ্যমে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণের পরেও এখন পর্যন্ত বাকসু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। যদি বাকসু নির্বাচন নিয়ে বিড়ম্বনা করে। তবে বাকসু নির্বাচনের জন্য আমরা প্রয়োজনে জুলাই-আগস্টের মতো আন্দোলন গড়ে তুলব। সুতরাং দায়িত্বশীল প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব গঠন্তন্ত্রের মাধ্যমে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকসু নির্বাচনের সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য।
শাহাবুদ্দিন মিয়া
অর্থনীতি বিভাগ।
নতুন রূপে ক্যাম্পাস দেখব
সরকারি ব্রজমোহন কলেজ দক্ষিণাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। ফ্যাসিস্ট পতনের পর ক্যাম্পাসের পরিবেশ কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়েছে। নতুন বছরে ক্যাম্পাসকে নতুন করে দেখতে চাই। ক্যাম্পাস থেকে যেরকম ফ্যাসিস্ট দূর হয়েছে, ঠিক একইরকম সব অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করতে চাই। ক্যাম্পাস হবে লেজুরভিত্তিক রাজনীতিবিহীন। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি থাকবে, তবে এটি লেজুরভিত্তিক নয়; শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের রাজনীতি। মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস দেখতে চাই। ক্যাম্পাসকে সুশৃঙ্খল এবং লেখাপড়ার উপযুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এবং ক্যাম্পাস থেকে অপরাজনীতি ও লেজুরভিত্তিক রাজনীতি দূর করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। যেমন : শীঘ্রই ছাত্র সংসদ (বাকসু) নির্বাচন আয়োজন করা। মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ সীমিত রাখা। ক্লাস চলাকালীন সময়ে বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা। ক্যাম্পাসের মূল দুই গেইটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পর্যাপ্ত সিকিউরিটি গার্ডের ব্যবস্থা করা। দলীয় রাজনীতির কর্মসূচি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা। ক্যাম্পাসের মূল পয়েন্টগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা। ক্যাম্পাসের ক্যান্টিন অতি দ্রুত চালু করার ব্যবস্থা করা। ক্যাম্পাসে অবস্থিত ভাসমান দোকানগুলো অপসারণ করা। ক্যাম্পাসের পরিবেশ ঠিক রাখতে অন্ধকার নিরসনে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা। জলাবদ্ধতা নিরসনে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
আমরা বিশ্বাস করি, উক্ত পদক্ষেপগুলো কার্যকর হলে ক্যাম্পাসের শান্তি, শৃঙ্খলা এবং শিক্ষার মনোরম পরিবেশ ফিরে আসবে।
মো. সাব্বির হোসেন সোহাগ
অর্থনীতি বিভাগ।
জুলাই-আগস্টের রঙে রাঙাব আমার ক্যাম্পাস
যে প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্য এবং শিক্ষার মান সর্বজনবিদিত, কিন্তু কলেজের শিক্ষকদের অভাব একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই শিক্ষক সংকটের কারণে পড়াশোনার গুণগত মান কমে যাচ্ছে। একদিকে যেমন পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ধারাবাহিকতা নষ্ট হচ্ছে। কলেজের উন্নতির জন্য জরুরি হলো, দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়া। শিক্ষার্থীরা যদি তাদের পরীক্ষার খাতার সঠিক মূল্যায়ন না পায়, তবে তাদের প্রতি আস্থা হারিয়ে যায়। এ কারণে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে এবং সময়মতো মূল্যায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। তার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতির জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরি। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি কলেজের পরিবেশকে আরো প্রগতিশীল করবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার রক্ষার জন্য এবং তাদের স্বার্থে কাজ করার জন্য একটি কার্যকর ছাত্র সংসদ থাকা আবশ্যক। সুতরাং, ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া শুধু কলেজের পরিবেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এমনই না, বরং এটি শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা ও নেতৃত্বের গুণাবলী গড়ে তোলার একটি মৌলিক সুযোগও নষ্ট করছে। তাই কলেজে ছাত্র রাজনীতির একটি সঠিক কাঠামো থাকা উচিত। বিএম কলেজের ইতিহাসে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের এক বিশেষ স্থান রয়েছে। কলেজের ছাত্রদের এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ঐতিহাসিক আন্দোলনের মূল্যবোধ সংরক্ষণ করা এবং পরবর্তী প্রজন্মকে তার গুরুত্ব বোঝানো একান্ত প্রয়োজন। কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে আহ্বান জানাচ্ছি, যেন তারা এই আন্দোলনের স্মৃতি ও শিক্ষা আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। নতুন বছর, নতুন প্রত্যাশা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ব্রজমোহন কলেজ আরো ভালো, আরো উন্নত এবং আরো সুষ্ঠ হবে। ২০২৫ সালে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমরা আমাদের ক্যাম্পাসকে রাঙিয়ে তুলব, যেন এটি সত্যিই আমাদের গর্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।
মো. রাইসুল ইসলাম
বাংলা বিভাগ।
ক্যাম্পাস হোক শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র
সত্য, প্রেম ও পবিত্রতার ধারক মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণবঙ্গের অক্সফোর্ডখ্যাত ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারি ব্রজমোহন কলেজ। দেশের যেকোনো ক্লান্তিলগ্নে এ কলেজের শিক্ষার্থীরা সদা জাগ্রত ছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সহ অর্ধশতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী শহীদ হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বরিশাল বিভাগের মধ্যে সর্বপ্রথম বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সর্বোত্তম এই কলেজ থেকেই কলেজ প্রশাসন ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে বিএম কলেজের মো. তাহিদুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী শহীদ হন।
ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের পর নতুন বছরে বিএম কলেজের বিভিন্ন সংকট নিরসনে ও কলেজের মানোন্নয়নের জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যপক প্রত্যাশা। শতবর্ষী এই কলেজটিতে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। কলেজে নামমাত্র ৭টি আবাসিক হল থাকলেও অধিকাংশই বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। দূর দূরান্ত থেকে নিয়মিত ক্লাস করতে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য যথেষ্ট পরিবহন ব্যবস্থা নেই। দেশের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নামমাত্র তিনটি কলেজ বাস রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের তুলনায় অতি নগণ্য। তাই কলেজের পরিবহন পুলে কমপক্ষে আরো ৩-৪টি বাস হলে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে ভোগান্তি পোহাতে হত না। কলেজের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর অডিটরিয়াম বন্ধ রয়েছে, এটা সংস্কার দরকার। একমাত্র ক্যান্টিন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত সময় নষ্ট করে কলেজের বাইরে গিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার খেতে হয় শিক্ষার্থীদের। তাই যত দ্রুত সম্ভব ক্যান্টিন চালু করা শিক্ষার্থীদের বহুদিনের দাবি। ক্যাম্পাসে চিকিৎসক না থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। অথচ শিক্ষার্থীরা চিকিৎসার জন্য আলাদা ফি দিয়ে থাকেন। বিএম কলেজ ক্যাম্পাস হোক শিক্ষার্থীদের জন্য জ্ঞানচর্চার উর্বর ক্ষেত্র। ক্যাম্পাসে বড় দুটা খেলার মাঠ আছে কিন্তু তা বছরের অধিকাংশ সময়ই খেলার অনুপযোগী থাকে। তাই মাঠ-দুটো খেলার উপযোগী করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এসব সংকট নিরসনে কলেজ প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে কলেজটি তার ঐতিহ্য ফিরে পাবে বলে আমার বিশ্বাস।
মুহাইমিনুল ইসলাম ফরহাদ
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ।
"