এইচ. সাইফুল ইসলাম সাব্বির, সরকারি বাঙলা কলেজ, ঢাকা
ছাত্র সংসদ চালু করা এখন সময়ের দাবি
একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাণ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আর ছাত্র সংসদ হলো শিক্ষার্থীদের যাবতীয় দাবি দাওয়া তুলে ধরার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম। ছাত্র সংসদই একমাত্র শিক্ষার্থীদের পক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করে। ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয় শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই যার ফলে ক্যাম্পাসভিত্তিক সব সমস্যার সমাধান এবং শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের পথ আরো সহজ হয়। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার হলো এই ছাত্র সংসদ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে রয়েছে ছাত্র সংসদের এক গৌরবময় ভূমিকা। যা আমাদের দেশের ছাত্র সমাজের সবচেয়ে বড় অর্জন। ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে ২৪’র গণঅভ্যুত্থান দেশের যেন সংকটময় পরিস্থিতিতে নিজেরদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে এগিয়ে এসেছে এদেশের ছাত্র সমাজ। যদিও আমরা তরুণ প্রজন্ম ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান ও ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি কিন্তু এই ২৪’র গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রসমাজ যে কার্যকারী ভূমিকা রেখেছে তার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হয়েছি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নকালীন সময় শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ন্যায্য দাবি দাওয়া থাকে। এ সব যৌক্তিক দাবি আদায়ে ছাত্র সংসদের রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। আমাদের নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিতে ছাত্র সংসদের ভূমিকা অপরিসীম। ছাত্র সংসদ মূলত শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ ও নেতৃত্বের উন্নয়ন ঘটায়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র রাজনীতি মূলত ছাত্রদের অধিকার আদায়ের রাজনীতি হলেও যা বর্তমানে একটি দেশকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য উৎকৃষ্ট নেতা তৈরি করাই এর অন্যতম উদ্দেশ্য। বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনীতি চর্চার চেয়ে অপচর্চাই বেশি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হিংসাত্মক মনোভাব ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অস্বাভাবিক নির্যাতন করা প্রতিদিনের চিত্র। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক, র্যাগিং, শারীরিক হেনস্তা, মানসিক নির্যাতন, সামাজিক অবমাননার চিত্র পত্রিকায় পাতায় ছাপানো হয়েছে বহুবার। এমন সংবাদ প্রচারের জন্য নানা ভাবে হয়রানির শিকার হয়েছে ক্যাম্পাসভিত্তিক সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা। যার চিত্র প্রতিনিয়ত আমাদের চোখে পড়ছে। খুব বেশি আলোচিত-সমালোচিত না হলে এমন হাজারো গল্প থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালেই। সব ক্ষেত্র বিবেচনা করলে দেখা যায় ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ছাত্র সংসদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
গত ৩০ বছর ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি বললেই চলে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্বাচিত ছাত্র সংসদ না থাকায় অনেক বছর ধরে ক্ষমতাসীনদের ছাত্র সংগঠনগুলো নিজের মতো করে আধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছে বলে মনে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ কখনোই সম্ভব নয়।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে জাতীয় পর্যায়ে অনেক ভালো ভালো নেতৃত্ব উঠে আসবে। রাজনীতি হলো দেশের মৌলিক পরিবর্তন যার মাধ্যমে হবে দেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন। আমরা জানি, একটি রাষ্ট্র সফলভাবে পরিচালনার জন্য অবশ্যই যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন। ছাত্র সংসদ যোগ্য নেতৃত্ব তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলে জাতীয় পর্যায়ে অনেক ভালো ভালো নেতৃত্ব উঠে আসবে। রাজনীতি হচ্ছে সমাজ ও দেশ সেবার সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম। রাজনীতিবিদদের মধ্য থেকেই গড়ে উঠে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব। দেশ ও জাতিকে সঠিক নেতৃত্ব প্রদানের জন্য ছাত্র সংসদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই, ক্যাম্পাসভিত্তিক ছাত্র সংসদ চালু করা এখন সময়ের দাবি।
"