reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪

সংবিধান বিতর্ক : গণতান্ত্রিক রূপান্তর কতদূর!

সংবিধান একটি রাষ্ট্রের মৌলিক আইন। রাষ্ট্রের জনগণের ইচ্ছা-অভিপ্রায়ের প্রকাশের জন্য জনগণের অংশগ্রহণেই প্রণীত হবে সংবিধান। কথা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। সংকট সম্ভাবনার সময়ে প্রশ্ন উঠেছে সংবিধান কেমন হবে। সে-সম্পর্কেই জানিয়েছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের, ভিন্ন-ভিন্ন চিন্তার শিক্ষার্থীরা। পাঠকের জন্য সেসব মতামত তুলে ধরেছেন গণবিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী তাহমিদ হাসান

সংবিধান হবে মৌলিক অধিকার রক্ষক

সংবিধান বলতে আমরা বুঝি, মৌলিক নীতি-প্রতিষ্ঠিত নজিরগুলোর সমষ্টি যা একটি রাষ্ট্র, সংস্থা বা অন্য ধরনের সত্তার আইনি ভিত্তি গঠন করে এবং সাধারণত সেই সত্তাকে কীভাবে পরিচালিত করা হবে তা নির্ধারণ করে থাকে। এক কথায় সংবিধান হলো মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষক। স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সর্বোত্তম রক্ষাকবচ। কিন্তু বর্তমান সংবিধান একটি আওয়ামীপন্থী সংবিধান। সংবিধানের চতুর্থ পরিচ্ছেদের ১০২ অনুচ্ছেদ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগকে মৌলিক অধিকার বলবৎ করার এখতিয়ার দিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা তা ব্যবহার করেছে নিজের জন্য। অন দেশের মতো বাংলাদেশেরও সংবিধান থাকলে ইতিপূর্বে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার সেই সংবিধানকে তার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। ফলে ছাত্র জনতার আন্দোলনের তোপের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারকে, যে তার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে এদেশের সংবিধানকে নিজের মতো করে সাজিয়ে রেখেছেন। এর ফলে সংবিধান থাকলেও তা যথাযথভাবে প্রয়োগ হয়নি। সংবিধান বা গঠনতন্ত্র প্রয়োগে স্বৈরাচারী পতিত আওয়ামী লীগ সরকার স্বেচ্ছাচারিতা করায় এদেশের সাধারণ জনগণ তাদের নাগরিক অধিকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ মানুষরা ন্যায় বিচার পাননি, অবিচার আর শোষণের শিকার হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে বারবার নির্যাতন ও নিপীড়িত হয়েছে। শুধু তাই নয় সংবিধান অনুযায়ী নিরেপক্ষ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও স্বৈরাচারী সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করে, রাতের আঁধারে ভোট চুরি করে দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছেন। শিক্ষা, চাকরি, ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এদেশের মানুষ। বিশেষ করে যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না তারাই বেশি নিপীড়িত হয়েছেন। দ্রুত দেশের সংবিধান সংস্কার বা বাতিল করে পুনরায় নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন প্রয়োজন। এদেশের মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাস বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নতুন একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন করবে যা এদেশের মানুষের সামনের দিনগুলোর জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং দৈনন্দিন শান্তি শৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করবে।

জেসিনা মুর্শীদ প্রাপ্তি

ইংরেজি সাহিত্য

যশোর সরকারি মহিলা কলেজ।

মীমাংসিত বিষয় অক্ষুণ্ণ রেখে সংশোধন করতে হবে

সংবিধানের মীমাংসিত বিষয়গুলো অক্ষুণ্ণ রেখে সংশোধন করার মাধ্যমে দেশকে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পথে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভার ক্ষমতার পৃথককরণ করতে হবে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ভালো নির্বাচন করা সম্ভব ছিল। সেটি অপপ্রয়োগ হলেও মেরামত করা যেত। তবে সেটিকে বাধাগ্রস্ত করে এমনভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা নষ্ট করা হয়েছে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনগুলো প্রহসনে পরিণত হয়েছে। ২০২৪ সালের ‘ডামি নির্বাচন’ও তাই হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাংবিধানিক সংস্কার করতে হবে যাতে বিচার বিভাগের ক্ষমতা খর্ব না হয়, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় এবং গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। নতুন নতুন আইন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এজন্য সংবিধানের আরো গণতান্ত্রিকীকরণ এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। ভবিষ্যতে যেন কোনো স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে না পারে, সেই লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধন করা প্রয়োজন।

লাবিব বিন শাহেদ

কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।

ন্যায়বিচারের সংবিধান প্রয়োজন

বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান পর্যালোচনা করলে আমরা দেখব সংবিধানের সমস্ত ক্ষমতা একব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে, যা বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদী শাসনের উপযোগী করে তুলেছিল। যার মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠা না হয়ে বরং তাকে অধিকারহীন করে ফেলা হয়েছিল। ফলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে সেই ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করেছি। পতিত ফ্যাসিবাদ পরবর্তী সময়ে এখন আমাদের এমন সংবিধান দরকার যা জনগণের সব গণতান্ত্রিক অধিকারকে সংরক্ষণ করে, সর্বস্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়। প্রতি স্তরে মানুষের অধিকার সম্যকভাবে নিশ্চিতের লক্ষ্যেই এই সমাধান দ্রুত প্রয়োজন।

সীমা আক্তার

সংগীত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্যই সংবিধান

সংবিধানের যত কালো কানুন আছে, তা নসাৎ করতে হবে, এবং পরবর্তীতে কোনো ক্ষমতাসীন দল যাতে নিজের কর্তৃত্ব স্থাপন হয় এমন কোনো আইন যাতে না পেশ করতে পারে সংসদে, এর জন্য সংবিধানে আলাদা রকম বিধান থাকতে হবে। রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গে, যাতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সুপারিশে কিংবা কোনো ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবে যেন কেউ নিয়োগ না হতে পারে এর জন্য আলাদা বিধান তৈরি করতে হবে। ধারা-৭ সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। এ ধারার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয় না এমন কোনো ধারা সংবিধানে লিপিবদ্ধ হতে দেওয়া যাবে না। এমনকি আমলাতন্ত্রকে তার কাজের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দিতে হবে, কোনো অনৈতিক হস্তক্ষেপ তার কাজে বাধা দিলে আমলা যেন তা প্রতিহত করতে পারে সেই পুর্ণাঙ্গ ক্ষমতা আমলাকে প্রদান করতে হবে। কখনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা যেমন: পুলিশ, বিজিবি, তারা যেন আইন বহির্ভূত কোনো কার্যকলাপ কিংবা সরকার দলীয় কোনো নেতৃত্বের দেওয়া অবৈধ আদেশকে, প্রয়োগ করতে না পারে তা নিশ্চিত করে হবে। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য সংবিধান পরিবর্তন এখন আবশ্যক।

তাওহীদ আহমদ সালেহীন

আইন বিভাগ, গণবিশ্ববিদ্যালয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close