মো. সুমন ইসলাম, ইবি

  ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

চড়ুইভাতি এবং হৃদ্যতার বন্ধনে স্বর্ণালি দিন

হেমন্তের শিশির স্নিগ্ধ কুয়াশার চাদর ভেদ করে পূর্বাকাশে সূর্যের মিষ্টি রোদ জানান দিচ্ছে, নতুন দিনের সূচনা হয়েছে। সবুজ ঘাসের শিশির বিন্দুগুলোও শীতের আমেজের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। সেই সঙ্গে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেন নতুন উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে। কেননা দীর্ঘদিন পর বিভাগের সবার মেলবন্ধনের একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুন্দর একটি চড়ুইভাতি আয়োজন করেছে। তাই সকাল থেকেই সবার মাঝে একটা উৎসব উৎসব ভাব বিরাজ করছে। ভোরের শীত শীত আবহাওয়া ঠেলে বিভাগের পাঁচটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সমবেত হওয়া শুরু করেছে। আমিও গোসল সেরে নতুন পোশাক পরিধান করে গুটি গুটি পায়ে এগুতে থাকলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সংস্কৃতি কেন্দ্রের দিকে। সেখানে ভোর থেকেই শুরু হয়েছে চড়ুইভাতির বিভিন্ন আয়োজন।

আয়োজিত চড়ুইভাতি অনুষ্ঠানটি তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল। প্রথম অংশে ছিল সব শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে বিভিন্ন খেলাধুলা, দ্বিতীয় পর্বে মধ্যাহ্নভোজ এবং তৃতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। খেলাধুলা অংশে প্রথমেই ছিল মেয়েদের জন্য বালিশ চালনা। খুব উৎসাহ এবং আনন্দের সঙ্গে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক এ এইচ এম নাহিদ খেলা পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এরপর মেয়েদের আরো একটি ঝুড়িতে বল নিক্ষেপ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলাধুলার মধ্যে ছেলেদের জন্য ছিল তিন পায়ে দৌড় প্রতিযোগিতা এবং রশি টানা খেলা। এর মধ্যে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর খেলা ছিল রশি টানা খেলা। আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মহোদয় ছিলেন উক্ত খেলার মূল পরিচালনাকারী। শুরুতেই তিনি আমাদের প্রত্যেকটি ব্যাচের সেশন লিখে লটারির মাধ্যমে পক্ষ-বিপক্ষ নির্বাচন করেন। সেই অনুযায়ী প্রতি দুই ব্যাচের মধ্যে রশি টানা খেলা শুরু হয়। রশি টানা খেলা যেমন রোমাঞ্চকর তেমনি শক্তির লড়াইও বটে। রশির দুই প্রান্তে দুই ব্যাচের প্রতিযোগীরা দাঁড়ানোর পর সম্মানিত শিক্ষকের বাঁশির শব্দে রশি টানা শুরু হয়। যে দল তাদের নিজেদের দিকে অন্য দলকে নিয়ে যেতে পারবে তারাই হবে বিজয়ী। পর্যায়ক্রমে সব ব্যাচের খেলা শেষে বিজয়ী হয় ২০-২১ ব্যাচ।

একদিকে চলছিল সব শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে খেলাধুলা, অন্যদিকে রান্নার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের চলছিল মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন। খেলাধুলার শেষে কিছু সময় বিরতির পর সবার একত্রে মধ্যাহ্নভোজের পালা। খাবারের মেনুতে ছিল পোলাও, খাসির মাংসের ভুনা, বুটের ডাল, সালাদ এবং প্রত্যেকের জন্য একটা করে কোমল পানীয়। অনেক দিন পর বিভাগের সবার সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের এই অসাধারণ আয়োজনে সবাই যেন আনন্দের সঙ্গে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খাবার শেষ করলেন। রান্নাও ছিল দারুণ স্বাদের। খাওয়া শেষে প্রতিটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ব্যাচ ভিত্তিক এবং সব ব্যাচ মিলে একটা দলগত ছবি উঠানো হয়।

মধ্যাহ্ন ভোজের কিছু সময় পর শুরু হয় একদল সাংস্কৃতিকমনা শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে জমকালো সাংস্কৃতিক আয়োজন। নাচ গানের মাধ্যমে সবাই একটা অন্যরকম আমাজে নিজেকে হারায়। যেখানে সবাই গানের তালে তালে নাচছিল। অনেক দিন পর বিভাগের এমন একটি সুন্দর অনুষ্ঠানে আমিও একটি কবিতা আবৃত্তি করলাম।

আয়োজনের শেষ মূহূর্তে ছিল খেলাধুলার পুরস্কার বিতরণী এবং চড়ুইভাতি অনুষ্ঠানের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর এবং আকর্ষণীয় অংশ লটারির ড্র। লটারিতে ২৮টি পুরস্কারের ব্যবস্থা ছিল। ড্র-তে শেষ থেকে অর্থাৎ ২৮তম পুরস্কার থেকে ড্র শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে ড্র চলছিল এবং আয়োজকসহ সবার মাঝে একটা উচ্ছ্বাস এবং উৎকন্ঠা বিরাজ করছিল। সবাই লটারির টিকিট হাতে নিজের ভাগ্য সুপ্রসন্নের প্রহর গুণছিল। এই বুঝি আমার টিকিট নাম্বারটাই ঘোষণা করা হবে এমন একটা উৎসুক ভাব সবার চোখেমুখে। আমিও এমনই একজন প্রতীক্ষিত চাতকের মতো টিকিট হাতে বসে ছিলাম। একে একে সব লটারির কুপণ তোলা শেষ পর্যায়ে। আমার কাছে দুটি টিকিট ছিল, আমি তো লটারির আশা ছেড়েই দিয়েছি, যে আমার ভাগ্যে লটারির পুরস্কার লেখা নেই। এখন বাকি ছিল প্রথম পুরষ্কারের কূপণ তোলা। বড় ভাই-আপুরা সবাই মিলে বাক্স থেকে শেষ কুপণটা তুলছিলেন। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল প্রথম পুরষ্কারটা কে পাবে। এমন সময় ঘোষণা এলো ৬৩১৭ কূপণ নাম্বার। ভাগ্যক্রমে আমার কাছে রক্ষিত দুটি টিকিটের একটি মিলে যায়। আমি তো খুশিতে আত্মহারা। শেষ পর্যন্ত ভাগ্য যে এতটা সুপ্রসন্ন হয়ে ধরা দেবে তা আমার কল্পনার বাহিরে ছিল। যাইহোক, লটারির প্রথম পুরষ্কার আমার হাতে তুলে দিলেন বিভাগের ১৮-১৯ ব্যাচের বড় ভাই-আপুরা। এরপর কিছু সময় নাচ গানের মধ্য দিয়ে আমাদের চড়ুইভাতি অনুষ্ঠানটি সফল হয়। সেই সঙ্গে আমাদের সবার স্মৃতির পাতায় জমা হয় সুন্দর, মনোমুগ্ধকর এবং উৎসব মুখর একটা দিন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close