হাবিবুল বাশার সুমন, জবি
অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে জবি ও জবিয়ানরা
হাজারো ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে অতীতের সেই ছোট্ট ব্রাহ্ম স্কুলটি আজ একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু মজার ব?্যাপার হলো স্বতন্ত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়টি জগা বাবুর পাঠশালা থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নাম ধারণ করলেও কাঠামোগতভাবে জগা বাবুর পাঠশালাই রয়ে গেছে। অতীতের সব সংগ্রাম থেকে শুরু করে সম্প্রতি সংঘটিত জুলাই বিপ্লবে সম্মুখ সারিতে অংশগ্রহণ করা স্বতন্ত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে এখনো অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ভেবে ভুল করেন, যা সতি?্যই দুঃখজনক। ঢাকার বুকে জবির অস্তিত্বের জানান দেওয়ার জন?্য যে বৃহৎ ক?্যাম্পাস ও হল থাকা প্রয়োজন, তার কোনোটাই জবিতে নেই। লজ্জাজনক হলেও সত?্য যে পুরো দেশ তো দুরের কথা পুরান ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দাদের মধে?্যই এমন অনেকেই আছে যারা এখনো জানে না, পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এ যেন জবি ও জবিয়ানদের অস্তিত্বের প্রশ্ন!
প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পূর্ণ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে হয়নি কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন। ক?্যাম্পাস এতটাই ছোট যে অনেকেই তাচ্ছিল্য করে একে কখনো কিন্টারগার্টেন, কখনো স্কুল আবার কখনো কখনো কলেজের সঙ্গে তুলনা করে। শ্রেণিকক্ষের সংকটের কারণে কিছু কিছু বিভাগের শিক্ষার্থীদের সেশনজট নামক অভিশাপকে প্রায়শই বরণ করে নিতে হয়। একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরেও এখানে নেই কোনো আধুনিক গবেষণাগার, ফলে উদ্ভাবনী শক্তি বিকাশের সুযোগ খুবই সীমিত।
মুক্তবুদ্ধি চর্চা করার মতো উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় মুক্ত আকাশে পাখা মিলতে পারে না জবিয়ানদের সৃজনশীলতাগুলো। যেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য্য হিসেবে তার হলগুলোকে বিবেচনা করা হয়, সেখানে জবিতে ছাত্রদের জন?্য কোনো হলই নেই। একটি ছাত্রী হল থাকলেও তা এত বেশি শিক্ষার্থীর আবাসন সমস?্যা নিঃসরণে অক্ষম। ফলে আবাসন সমস?্যায় ভুগছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী।
নিজের মেসের ভাড়া ও খাওয়ার খরচ জোগাতে মধ?্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা জবিয়ানদের রঙ্গিন সময়গুলো হারিয়ে যায় পুরান ঢাকার সস্তা টিউশন কিংবা পার্টটাইম জবের অতল গহ্বরে। অন?্যান?্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন নিজের ক?্যারিয়ার গঠনে ব?্যস্ত, তখন জবিয়ানরা একবেলা একমুঠো খাবার কিংবা মেসের ভাড়া জোগাতে অবিরাম ছুটছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করলে প্রয়শই এমন অনেক পোস্ট দেখা যায় যেখানে জবিয়ানরা থাকা খাওয়ার বিনিময়ে টিউশন করাতে চায়। কতটা কষ্টে থাকলে একজন শিক্ষার্থী এরকম করতে পারে সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। পড়ালেখার খরচ চালাতে না পেরে কেউ কেউ মাঝপথেই পড়ালেখার ইতি টেনে ফিরে যায় নিজ গ্রামে, কেউ আবার এই অসহ??নীয় কষ্ট সহ?্য করতে না পেরে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। এভাবেই কতশত ফুল অকালেই ঝরে যায়, কতশত মেধাবী হারিয়ে যায় অন্ধকার জগতের চক্রগুহে, কতশত বাবা মায়ের সপ্ন ভেঙ্গে যায় নিমিষেই।
অনেক নাটকীয়তার পর জবির দ্বিতীয় ক?্যাম্পাস নির্মাণকাজ শুরু হলেও কাজের কোনো অগ্রগতি নেই, নেই দ্রুত হল নির্মাণের ব?্যবস্থাগ্রহণ। কয়েক দফা বাজেট নিয়েও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জবিকে কাজের বদলে মুলো উপহার দিয়েছে। পিডি নিয়োগ নিয়ে মতানৈক্য, বিভিন্ন ভুয়া প্রপাগন্ডা, জবিয়ানদের প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা, হলহীন প্রভোস্ট নিয়োগ, অস্থায়ী আবাসন ইত?্যাদি নিয়ে সমস?্যা যেন জবির নিত?্যদিনের অংশ হয়ে উঠেছে। জবি যেন এক নাট?্যমঞ্চ যেখানে নাটকের পরিচালক এসি রুমে বসে জবিকে নিয়ে একটির পর একটি নাটক রচনা করছে আর তা সুকৌশলে মঞ্চস্থ হচ্ছে জবিয়ানদের সামনে। এ নাটকের যেন শেষ নেই, এ যেন অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত। নাটক দেখতে দেখতে জবিয়ানরা আজ বিরক্ত। নানা সমস্যায় জর্জরিত জবিয়ানরা এখন নিজের অস্তিত্ব টিকে রাখার লড়াইয়ে ব?্যাস্ত। দুর্নীতি আর বৈষম্যের বেরাজালে আটকা পরে জবি ও জবিয়ানদের পিঠ আজ দেয়ালে ঠেকে গেছে।
"