ছাবিহা জামান, চট্টগ্রাম কলেজ
বর্ণিল রঙে চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগ
পাহাড়-সমুদ্রের গলাগলি বসবাস যেখানে, যেখানে আকাশ হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায়, তা চট্টগ্রাম। আর এই ব্যস্ত নগরীর যান্ত্রিকতার কোলাহলমুখর পরিবেশের মাঝে চট্টগ্রাম কলেজের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই মনোরম ও মনমুগ্ধকর। আকাশের বিশালতায় সবুজের অনুপম ছোঁয়ায় চট্টগ্রাম কলেজের সৌন্দর্য অনবদ্য। জ্ঞানে, মননে, ঐতিহ্যে, সাহিত্য-সংস্কৃতি, শিল্পতে চট্টগ্রাম কলেজ অনন্য। দেশের অন্যতম একটি শীর্ষস্থানীয় কলেজ হলো চট্টগ্রাম কলেজ। ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা কলেজের পর ১৮৬৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজর যাত্রা শুরু। চট্টগ্রাম কলেজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো বাংলা বিভাগ। আমরা দৃষ্টিপাত করলে দেখি বাংলা বিভাগ সবসময় তার নিজস্ব ধারাতে চলে। শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতিতে বাংলা বিভাগের জুড়ি নেই।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তরুণদের বিজয়ের পর দেশ নতুনভাবে পুনর্গঠিত হচ্ছে। বিজয়ের উল্লাস স্বরূপ, প্রতিবাদস্বরূপ বর্ণিল রঙে সেজেছে নগর থেকে গঞ্জের অলিগলি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আন্দোলনের দুর্বিষহ সময়গুলোকে স্মৃতির পাতায় ধারণ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত হয় কাওয়ালী সন্ধ্যা, কবিতা পাঠ, মঞ্চ নাটক আরো কত কি। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের চট্টগ্রাম কলেজের দেয়ালেও রং তুলির ছোঁয়া পায়। প্যারেডের দেয়াল থেকে শুরু করে প্রতিটি বিভাগ নতুন আঙ্গিকে সেজেছে। সেক্ষেত্রে শিল্পমনা বাংলা বিভাগের তো আলাদা চিত্র। কারণ বাংলা বিভাগ তার স্বকীয় সত্তা নিয়ে চলে। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা মিলে বিভাগকে জানানোর পরিকল্পনা করলাম। গাছ লাগানো দিয়ে আমাদের কাজ শুরু করা হলো। শিক্ষার্থীরা সবাই মিলে টব সংগ্রহ, মাটি সংগ্রহ ও গাছ সংগ্রহ করা শুরু করে। তারপর টবগুলোকে বিভিন্ন রং দিয়ে সাজানো হয়।
পরিকল্পনা অনুসারে দ্বিতীয় কাজ হলো গ্রাফিতি করা। বিভাগ জুড়ে আল্পনার ছোঁয়া, দেয়ালে সাহিত্যের প্রচ্ছদ ও বাঙালির ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলা। প্রচ্ছদগুলো ছিল রবীন্দ্রনাথের চন্ডালিকা, নষ্টনীড়, কাবুলিওয়ালা, চোখের বালি। শরৎচন্দ্রের পরিণীতা ও বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী। তাছাড়া কিছু হাস্যরসাত্মক বিষয়, বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকদের ছবি ও তথ্য, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে উক্তি নিয়ে ক্যালিগ্রাফি, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উক্তি দেয়াল জুড়ে আঁকা হয়েছে।
আমাদের বাংলা বিভাগে দুটি গ্যালারি শোভা পায়, রবীন্দ্র ও নজরুল গ্যালারি। পুনর্বার এগুলোকে দেয়ালে আল্পনার মাধ্যমে সাজানো হয়েছে। তৃতীয় কাজ হচ্ছে দেয়ালিকা। কলেজে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ের উপর দেয়ালিকা দেখতে পাই। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শিক্ষার্থীদের লেখনীর মাধ্যমে দেয়ালিকার সৌন্দর্য গোচর হয় এবারও। চতুর্থ কাজ হচ্ছে সাংস্কৃতিক উৎসব। মঞ্চনাটক, গান, কবিতা আবৃতি ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলা বিভাগ কলেজ অডিটোরিয়াম মুখরিত করেছে। বাংলা বিভাগ তার নিজের গতিতে ফিরছে। অবশ্য আগে থেকেই বাংলা বিভাগের ইতিহাস নিজস্ব গৌরবে দীপ্তিমান। আরো একটি বিষয় হচ্ছে নতুনের এই ধারাবাহিকতাগুলো বিভাগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বন্ধন তৈরিতে অনেক ভূমিকা রেখেছে। এসব কাজ করতে গিয়ে চায়ের কাপে আড্ডা, গানের আসর জমানো এগুলোর মাধ্যমে বন্ধন সুদৃঢ় হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষকদের অবিচল অনুপ্রেরণা তো আছেই। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। সাহিত্য সংস্কৃতি আর বাংলা বিভাগ যেন একে অপরের পরিপূরক। বাংলা বিভাগ সবসময় তার স্বকীয়তা প্রকাশে প্রস্তুত। নতুন করে নতুন রূপে আবারো ধারাবাহিকতায় ফিরছে বাংলা বিভাগ।
"