রিয়া মোদক, হাবিপ্রবি
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কৃষির সম্ভাবনা তুলে ধরছেন হাবিপ্রবির তরুণরা
কৃষির প্রতি ভালোবাসা থেকে জন্ম নেওয়া একটি উদ্যোগ ‘কৃষি ও কৃষ্টি’। উদ্যোগটির পেছনে রয়েছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ১৯ ব্যাচের কৃষি অনুষদের তিন উদ্যমী তরুণ- মো. সোহেল রানা, শেখ মো. রুহুল আমিন এবং মো. এহসানুল ইসলাম। উদ্ভিদের প্রতি ভালোবাসা এবং কৃষি সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি করাই তাদের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। এই তিন তরুণের চিন্তাভাবনা এবং অভিজ্ঞতা কৃষি ও উদ্ভিদবিজ্ঞানের প্রতি নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করে তুলছে।
২০২০ সালে এই তিন বন্ধুর প্রচেষ্টায় ফেসবুকে চালু হয় ‘কৃষি ও কৃষ্টি’ নামে একটি ফেসবুক পেজ। শুরুর দিকটা ছিল তাদের মজার ভিডিও তৈরির অভ্যাস। ২০১৯ সালে তারা নিজেদের ‘প্রজেক্ট ১৯’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলও চালু করেন, যেখানে নানা ধরনের ফানি ভিডিও আপলোড করতেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তারা উপলব্ধি করেন, তাদের মজার ভিডিওর মধ্যেও কৃষি বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কারণ তারা নিজেরাও তো কৃষি নিয়ে পড়ছেন, তাহলে এই জ্ঞানটি সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যেতেই পারে। এমন চিন্তা থেকেই জন্ম নেয় ‘কৃষি ও কৃষ্টি’।
সোহেলের বাবা কৃষক হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই তার কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল নিবিড়। রুহুল আমিন ছাদবাগানের কাজে পারদর্শী এবং এ বিষয়ে ছোটবেলা থেকেই তার প্রচুর অভিজ্ঞতা। এদিকে এহসান বিজ্ঞানভিত্তিক ও ইনফরমেটিভ বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করতে ভালোবাসেন। তাদের এই অভিজ্ঞতাগুলো মিলিয়ে তারা নিজেদের অর্জিত কৃষি ও উদ্ভিদবিজ্ঞানের জ্ঞান সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে মনস্থ করেন।
‘কৃষি ও কৃষ্টি’র কার্যক্রমে সবচেয়ে বড় প্রভাব ছিল তাদের প্রিয় শিক্ষক প্রয়াত প্রফেসর টি এম টি ইকবালের। সোহেল জানান, ‘স্যার উদ্ভিদের প্রতি এক ভিন্ন দৃষ্টিকোণ আমাদের সামনে তুলে ধরেছিলেন। তার কাছে শিখেছি যে কৃষিবিজ্ঞান বা উদ্ভিদবিজ্ঞানের একজন শিক্ষার্থীর দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত, কীভাবে আমরা উদ্ভিদকে আরো গভীরভাবে বুঝতে পারি।’
কৃষি ও কৃষ্টি পেজটির মাধ্যমে এই তিন তরুণ উদ্ভিদ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেন। তাদের ভিডিওগুলোতে গাছের পরিচর্যা, ছাদবাগান পরিচালনার কৌশল, এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ রোগ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই শিক্ষামূলক ও তথ্যবহুল ভিডিওগুলো সাধারণ মানুষের কাছে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাদের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে ইতিমধ্যে ৫০টিরও বেশি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে, যেখানে তারা উদ্ভিদের প্রতি ভালোবাসা এবং প্রকৃতির প্রতি যত্ন নেওয়ার নানা দিক তুলে ধরেছেন।
এদিকে, সোহেল, রুহুল, এবং এহসান তাদের এই উদ্যোগের মাধ্যমে একাডেমিক এবং সাধারণ কৃষি শিক্ষা প্রসারে অঙ্গীকারবদ্ধ। একদিকে তারা সাধারণ মানুষকে উদ্ভিদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দেন, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের মাঝে কৃষি ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানের মৌলিক ধারণা তৈরি করতেও সচেষ্ট। উদ্ভিদের রোগ-রোগ নির্ণয়, পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ, এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা বিষয়েও তারা সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করেন।
তাদের এই যাত্রা সহজ ছিল না। অ্যাকাডেমিক ব্যস্ততা ও বিভিন্ন প্রতিকূলতা তাদের উদ্যোগকে বারবার থামিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে সোহেল পেজের বেশিরভাগ কাজ সামলাচ্ছেন, রুহুলও শিগগিরই সক্রিয় হবেন বলে জানিয়েছেন। আর এহসান অন্য কিছু কাজে জড়িত থাকায় আপাতত কিছুটা বিরতিতে আছেন। তবুও তারা এই প্রচেষ্টাকে সার্থকভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সর্বদা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আরো বিস্তৃত। তাদের লক্ষ্য আধুনিক কৃষি শিক্ষাকে সাধারণ মানুষের মাঝে আরো জনপ্রিয় করা। অফলাইন এবং অনলাইন মাধ্যমে ট্রেনিং আয়োজনের মাধ্যমে তারা চাষিদের কৃষিতে সার, কীটনাশক ব্যবহারে সঠিক পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিতে চান। তারা মনে করেন, বিভিন্ন উদ্ভিদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে তার সঠিক ব্যবহার বুঝিয়ে দেওয়া গেলে চাষিরা আরো উপকৃত হবেন। তাদের স্বপ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের কৃষি শিক্ষায় আধুনিক জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে একটি সুস্থ ও উন্নত কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলা।
কৃষি ও কৃষ্টির এই যাত্রা এখনো শুরুর পর্যায়ে। তবে তাদের এই উদ্যোগ এক দিন সবার মনে জায়গা করে নেবে বলে তারা আশাবাদী। সোহেল বলেন, ‘জানি না এই প্রচেষ্টায় আমরা কতটা সফল হব, তবে উদ্ভিদের প্রতি ভালোবাসা এবং সাধারণ মানুষের মাঝে কৃষি সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে এই ছোট্ট প্রচেষ্টা কখনোই থামিয়ে দেব না।’
রুহুল আমিন বলেন, ‘কৃষি বিষয়ে পড়াশোনা করায়, কৃষির প্রতি ভালো লাগা বেশ আগে থেকেই ছিল। আর কৃষির সেই জ্ঞান সাধারণ মানুষকে ছড়িয়ে দিতেই আমাদের কৃষি ও কৃষ্টি পেজটির সুচনা, আমদের প্রথম থেকেই লক্ষ্য ছিল কৃষির নানা আকর্ষণীয় ও অজানা তথ্য মানুষের সামনে তুলে ধরা। আমরা স্যারের কাজ কার্টুনের মাধ্যমে, নানা গাছের বৈজ্ঞানিক নামের ইতিকথা এগুলো ইতিমধ্যে প্রচার করেছি, ইনশাআল্লাহ সামনের দিনগুলোতে আমরা আরো ভালো ভালো কাজ করে আমাদের কৃষি লব্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে দেশের কৃষিকে এগিয়ে নিতে আবদান রাখব।
"