নুরুল্লাহ কামিল, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী
রোগ নির্ণয়ে সংস্কার হোক টেকনোলজিস্ট পেশা
মানবদেহের রোগ নির্ণয়ে কাজ করেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বা চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদরা। চিকিৎসাসেবায় এই কর্মীরা সাধারণত প্যাথলজি, রেডিওলোজি, ফিজিও থেরাপি, দন্ত ও ক্যানসার বিভাগে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বিশেষ ক্ষেত্রে তাদের ক্যাথল্যাব, অপারেশন থিয়েটারসহ কাজ করতে হয় বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে। ফার্মেসি বিভাগে ওষুধ তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ এবং বণ্টনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টরা। মোটের ওপর রোগ নির্ণয়, নিরাময় এবং চিকিৎসা সেবার প্রায় প্রতিটি ধাপেই দায়িত্ব পালন করতে হয় এই পেশায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা হলো একজন চিকিৎসকের বিপরীতে কাজ করবেন তিনজন নার্স এবং চারজন চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ। বাংলাদেশে চিকিৎসক এবং নার্সের আনুপাতিক হার কিছুটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও প্রযুক্তিবিদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। এতে রোগ নির্ণয়ের মতো জরুরি পরিষেবা বিশেষভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। চিকিৎসক এবং নার্সদের মতো উচ্চশিক্ষা ও পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর্যাপ্ত সুযোগ নেই এ পেশায়। ইনস্টিটিউট থেকে বিষয়ভিত্তিক কোর্স শেষে অন্যান্য সমমানের ডিপ্লোমায় সরকারি চাকরিতে দশম গ্রেডে যোগ দানের সুযোগ থাকলেও টেকনোলজিস্টদের যোগদান হয় এগারোতম গ্রেডে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, দেশে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যন্ত অধ্যয়নের সুযোগ থাকলেও এ যোগ্যতায় সরকারি চাকরির কোনো পদ এখনো পর্যন্ত সৃজিত হয়নি। নিয়োগের ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা পাসের সনদ ছাড়া আবেদন করা যায় না। পদসংখ্যা ও সীমিত। কিন্তু জনবলের অভাবে সরকারি হাসপাতালে বাক্সবন্দি হয়ে প্রায়ই কোটি কোটি টাকার রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার খবর পাওয়া যায়। বে সরকারি রোগ নির্ণয় কেন্দ্র ও উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেন অধিকাংশ প্রযুক্তিবিদ। প্রাইভেট চাকরির নীতিমালা না থাকায় বেতন ও কর্মঘণ্টা নিয়ে সেখানেও তাদের প্রতিনিয়ত নানা বৈষম্যের শিকার হতে হয়। অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অপেশাদার, অদক্ষ জনবল দিয়ে রোগ নির্ণয়ের কাজ করানো হয়। এতে রিপোর্ট ভুল হয় এবং সঠিক চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হয় না। ফলস্বরূপ ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর খবরও এখন অহরহ।
চিকিৎসাসেবা হলো একটি দলগত কাজ। এই কাজে চিকিৎসক, নার্স, ও অন্যকর্মীদের মতো মেডিকেল টেকনোলজিস্টরাও গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষ চিকিৎসক এবং নার্সিং পেশা সম্পর্কে যতটুকু জানেন, পর্দার আড়ালে রোগ নির্ণয়ে নিয়োজিত এই কর্মীদের সম্পর্কে হয়তো ততটা জানতে পারেন না। রোগ নিরাময়ে চিকিৎসা, নার্সিং পরিষেবা ও ওষুধ যেমন জরুরি, ঠিক তেমনই সঠিক মান বজায় রেখে রোগ নির্ণয় করাও জরুরি। সাধারণ মানুষ চিকিৎসকের বিষয়ে ভালো মতো তথ্য নেন, কিন্তু রোগ নির্ণয়ে কে কাজ করছেন, তিনি দক্ষ কি না সে ব্যাপারে কোনো খোঁজখবর নেন না! এই বিষয়টি নিয়েও জনসচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।
চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের পর্যাপ্ততা থাকা অপরিহার্য। উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণ ও নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য শিক্ষার মান উন্নয়ন করা জরুরি। হেলথ টেকনোলজিতে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন। সে সঙ্গে পেশাজীবীদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর গঠন ও ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিগুলোতেও বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণ ষড়ঞ্জাম ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা।
এই পেশা সংস্কার করে পর্যাপ্ত নিয়োগ নিশ্চিত করলে সরকারি হাসপাতালে সব রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। বহির্বিশ্বেও এখন চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বিশ্বমানের
প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দিলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করারও সুযোগ রয়েছে আমাদের।
"