মো. রিয়াজ হোসাইন, বাকৃবি

  ১০ নভেম্বর, ২০২৪

বাকৃবিতে জাঁকজমকপূর্ণ বিশ্ব ডিম দিবস উদযাপন

ঊর্ধ্বগতির বাজারে গরিবের প্রোটিনের প্রধান উৎস হচ্ছে ডিম। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের খাদ্য তালিকায় ডিম অন্তর্ভুক্ত। সহজলভ্যতা ও স্বাস্থ্যকর বিবেচনায় পছন্দের তালিকায় ডিমের অবস্থান শীর্ষে। ডিমকে বলা হয় সুষম খাদ্য বা সুপারফ্রুট, কারণ ডিমে প্রয়োজনীয় সব খাদ্যকণিকা (কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন এবং মিনারেল) বিদ্যমান, যা দেহ গঠন, কোষের মেরামত, রক্ত সঞ্চালনা, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, রক্তস্বল্পতা দূরীকরণ, চোখের ক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদিতে সাহায্য করে। ডিমের সাদা অংশে অ্যালবুমিন জাতীয় প্রোটিন এবং কুসুমে ফ্যাট, মিনারেল এবং ভিটামিন বিদ্যমান। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় ১৩ ধরনের উপকারী অ্যামিনো অ্যাসিড বিদ্যমান, যা দেহের অস্থি মজবুত এবং মেধার বিকাশে সাহায্য করে। শিশুদের মেধা এবং দৈহিক বিকাশে ডিমের প্রয়োজনীয়তা অনেক।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস রোগপ্রতিরোধে সাহায্য করে। ডিমে বিদ্যমান ভিটামিন ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা দেহের ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করে এবং ত্বকের সজীবতা রক্ষা করে। এটি বয়স কমাতেও সাহায্য করে। ডিমে বিদ্যমান ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। একটি ডিমে এনার্জি থাকে ১৪৩ ক্যালোরি। আর কার্বোহাইড্রেট থাকে ০.৭২ গ্রাম মতো, প্রোটিন থাকে ১২.৫৬ গ্রাম, ফ্যাট থাকে ৯.৫১ গ্রাম। এ ছাড়া ফসফরাস থাকে ১৯৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৩৮ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক থাকে ১.২৯ মিলিগ্রাম। তবে অতিরিক্ত ডিম খাওয়ায় হিতে বিপরীত হতে পারে। যেমন- ডিমের কুসুমে বিদ্যমান কোলেস্টেরল দেহে বৃদ্ধি পাবে, অ্যালার্জির সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, হজমের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি, বিষক্রিয়া হতে পারে।

বর্তমানে দেশে ডিমের চাহিদা দৈনিক ৫ কোটি কিন্তু দৈনিক ডিম উৎপাদন ৪ কোটির একটু বেশি। ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে এবং উন্নতমানের ও সহজলভ্য আমিষজাতীয় খাদ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশন (আইইসি) ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই সংস্থার সদস্যসংখ্যা ৮০। সংস্থাটি প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ, স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী জাতি গঠন এবং সর্বোপরি ডিমের গুণাগুণ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় প্রথম ‘বিশ্ব ডিম দিবস’ পালনের উদ্যোগ নেয়, যা পরে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার পালিত হয়ে আসছে। এবারের প্রধান প্রতিপাদ্য ছিল ‘ডিমে শক্তি, ডিমে পুষ্টি, ডিমে হবে রোগমুক্তি।’ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বিশ্ব ডিম দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেন নানা ধরনের পোস্টার প্রদর্শনী। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে পোস্টারগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি ও হিস্টোলজি ভবনের দেয়াল সামনে লাগানো হয়। শিক্ষার্থীরা রঙিন পোস্টারে ডিমের ইতিহাস, ডিমের উপকারিতা, পুষ্টি গুণাগুণসহ নানা বিষয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন।

পোস্টার প্রদর্শনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাঝে ডিম বিতরণ করা হয়। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী তাবের জুবায়ের অন্তর জানান, ‘ডিম আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সর্বজনীন খাদ্যপণ্য। ডিম প্রোটিনের প্রধান উৎস হওয়ার পাশাপাশি এতে ফ্যাট, ভিটামিন (এ, বি, ডি, ই ও কে) ও মিনারেলস (ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, আয়রন), ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, সেলেনিয়াম বিদ্যমান, যা সুস্বাস্থ্য ও মেধাবী জাতি গঠনের সহায়ক। অপুষ্টি দূর করার জন্য ছোট-বড় সবার প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ২টি করে ডিম খাওয়া উচিত।’ তিনি আরো জানান, ‘বর্তমান অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারণে বাজারে ডিমের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সাধারণ মানুষের প্রোটিনের চাহিদা পূরণে বাধা সৃষ্টি করছে। আশা করি, শিগগিরই বাজারে ডিমের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমায় আসবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদমান মেজবা জানান, ‘বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে বাকৃবিতে ডিমবিষয়ক সেমিনার, পোস্টার প্রদর্শনী, শিক্ষার্থীদের মাঝে ডিম বিতরণ আমাদের ডিম সম্পর্কে জ্ঞানের গভীরতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আমার এই লব্ধ জ্ঞান গ্রামের লোকদের মাঝেও বিতরণ করব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close