মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর, বাকৃবি
কৃষি সাংবাদিকতার বাতিঘরে
বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে অর্থনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে কৃষিকে এককভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়। স্বাধীনতা উত্তর এদেশের জনসংখ্যা আড়াইগুণ বৃদ্ধি পাবার পরেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে কৃষি খাত। আর কৃষির অভূতপূর্ব উন্নতিতে কৃষি সাংবাদিকদের অবদান নেহাতই কম নয়।
কৃষির নিত্য নতুন গবেষণা, আবিষ্কার, কৃষি বিজ্ঞানীদের পরামর্শ মাঠ পর্যায়ে খামারিদের কাছে পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে থাকেন কৃষি সাংবাদিকেরা। প্রযুক্তির উৎকর্ষে কৃষি সাংবাদিকতায়ও এসেছে বড় রকমের পরিবর্তন। এখন প্রতিটি সংবাদমাধ্যমে কৃষিকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে কয়েক দশক বা যুগ ধরে যারা কৃষি সাংবাদিকতার মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে অতি পরিচিত হয়ে উঠেছেন, তারাই মূলত আমাদের পথিকৃৎ।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) সাংবাদিকতার সুবাদে দেশের এমন কয়েকজন প্রখ্যাত কৃষি সাংবাদিকদের সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়েছে। বিভিন্ন সভা, সেমিনার, কর্মশালায় মত বিনিময়েরও সুযোগ হয়েছে। তেমনই আরেকটি অভিজ্ঞতা হলো মিডিয়া হাউজ পরিদর্শনে গিয়ে। বাকৃবির গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (জিটিআই) আয়োজিত সাত দিনব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার অংশ হিসেবে মিডিয়া হাউজ পরিদর্শনে যান বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা। মাঠ পর্যায়ে কৃষিকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজগুলো সুচারুভাবে শেখার জন্য মূলত এই ভ্রমণ।
গেল বছর গিয়েছিলাম দেশের অন্যতম খ্যাতনামা একটি পত্রিকা অফিসে। এবছর সেই পরিধি আরো বিস্তৃত হলো। দুইটি টেলিভিশন চ্যানেল পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা হয়ে গেল একই সঙ্গে। তবে এক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে কৃষি সাংবাদিকতাকে।
শীতের অলস সকালের ঘুম ফেলে খুব ভোরে রওনা হলাম জিটিআই-এর নিজস্ব গাড়িতে। পথে সেরে নিলাম সকালের নাশতা। এরপর বেলা বাড়তেই মিলল রোদের দেখা। আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল চ্যানেল আই অফিস। সেখানে আমাদের অভ্যর্থনা জানান ডিজিটাল এন্ড মাল্টিমিডিয়া বিটের তানভীর আশিক ও তাওফিক হাসান। তাদের সাংবাদিকতার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও কাজের ধরন সম্পর্কে জানালেন তারা। এরপর আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন দেশের কৃষি সাংবাদিকতার সবচেয়ে পরিচিত মুখ ও পথিকৃৎ শাইখ সিরাজ। গত চার দশকের সাংবাদিকতার বিভিন্ন গল্প, প্রেক্ষাপট আর অম্ল মধুর স্মৃতি তুলে ধরেন তিনি। বিশেষত সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত কৃষি সাংবাদিকতার সেকাল-একাল নিয়ে আলোকপাত করেন তিনি। এসময় আমাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেন। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ, জ্ঞানগর্ভ আলোচনা ও অভিজ্ঞতার গল্পগুলো শোনা ছিল আমাদের জন্য সৌভাগ্যের। এরপর চ্যানেল আই অফিসের বিভিন্ন ডেস্ক ঘুরে ঘুরে দেখি এবং আরো কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়।
আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল চ্যানেল টুয়েন্টিফোর অফিসে। সেখানে আমাদের সাদরে গ্রহণ করেন কৃষি সাংবাদিক ফয়জুল সিদ্দিকী। তিনি আমাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার অন্যতম প্রশিক্ষক থাকার দরুণ তার সঙ্গে আগে থেকে পরিচয় ছিল। একসঙ্গে দুপুরের খাবার শেষে টেলিভিশন অফিসের কনফারেন্স রুমে নিয়ে আসেন তিনি। সেখানে ব্যক্তিগত ও পেশাগত বিবিধ আলোচনা ও মত বিনিময় করি আমরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন।
এরপর আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম পুরো অফিসের কার্যক্রমগুলো। বার্তা কক্ষ থেকে শুরু করে সংবাদ সম্পাদনা, ভিডিও সম্পাদনা, টক শো স্টুডিও, নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কার্যক্রম সবই প্রত্যক্ষ করলাম খুব কাছ থেকে। কিভাবে সরাসরি সম্প্রচার হয়, কিভাবে ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ হয়, উপস্থাপক কিভাবে সংবাদ পাঠ করেন, একটি সংবাদ কিভাবে সম্পাদনা হয়, সেখানে আলাদাভাবে ভিডিও ও অডিও সম্পাদনা করা হয় কেমন করে- সবকিছুই দেখার সুযোগ হলো। অফিসের সাংবাদিক ও কর্মকর্তা প্রত্যেকেই সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও সহযোগিতায় আমাদের কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ করে দেন। পাশাপাশি অনেক চেনা সাংবাদিক, যাদের টিভির পর্দায় দেখতাম, তাদের সঙ্গেও সরাসরি কথা বললাম। বিশেষভাবে খেলাধুলার প্রতি বরাবরই আগ্রহী ছিলাম, তাই ক্রীড়া সাংবাদিক রেজওয়ানুজ্জামানের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বললাম, ছবি তুললাম। অসাধারণ কিছু সময় কাটল এই ভ্রমণে। সঙ্গে চেনা, জানার পরিধিও বিস্তৃত হলো। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতার প্রায়োগিক বিষয়গুলো ভবিষ্যতে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অনেক ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
সবশেষে একই ভবনের সমকাল অফিসে কর্মরত বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির প্রাক্তন সদস্য জাহেদ রুবেল ভাইয়ের সঙ্গেও দেখা হয়।
কর্মশালার আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান রনি বলেন, বর্তমান সময়ের সাংবাদিকতা আগের তুলনায় অনেক গতিশীল ও বহুমুখী। তাই মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আমাদের মিডিয়া হাউজ পরিদর্শন। এর মাধ্যমে বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা অনেক উপকৃত হয়েছেন। কৃষি সাংবাদিকতায় মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তির ব্যবহার করে পেশাগত দায়িত্ব পালন আরো সহজ ও উন্নত হবে বলে আশা করি। আমরা ধন্যবাদ জানাই জিটিআইকে, পাশাপাশি চ্যানেল আই ও চ্যানেল টুয়েন্টিফোর কর্তৃপক্ষকে আমাদের অভিজ্ঞতা অর্জনের এত বড় সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
"