সানজিদা জান্নাত পিংকি, গবি
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ লেখকের গল্প
দিন দিন তরুণদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা সৃজনের মধ্য দিয়ে নিজেদের কাজকে সবার সামনে হাজির করছেন। আলোকিত করতে চান সমাজ তথা দেশকে। কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই কবিতার মতো বলতে হয়, ‘একটি আলোর পরশ পেলে লক্ষ প্রদীপ জ্বলে/ একটি মানুষ মানুষ হলে বিশ্বজগৎ টলে।’ একটা প্রদীপই পারে লাখ লাখ দ্বীপ জ্বালাতে। বলছিলাম গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৮ম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী মো. আলীনূর ইসলামের কথা।
যে আজ সারা বাংলাদেশে পরিচিত তরুণ কবি ও গবেষক ‘বঙ্গ রাখাল’ নামে। আলীনূরের জন্ম ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার গোলকনগর গ্রামে। ছোট থেকেই পেয়েছিলেন লেখা-লেখির হাতেখড়ি। গ্রামের প্রবাদ-প্রবচন সংগ্রহ ও মঞ্চনাটক করে হয়ে ওঠেন গ্রামের পরিচিত মুখ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে জড়িয়ে পড়েন নানা সংগঠনের সঙ্গে। যিনি সাহিত্য থেকে শুরু করে রচনা প্রতিযোগিতা, সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় রচনা প্রতিযোগিতায় নিজ বিভাগ থেকে প্রথম হয়ে পেয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা ‘স্বাধীনতা’ ৭১ বই। এখানেই থেমে যায়নি তার অর্জন। ভালো ফলাফল অর্জনের দরুন পেয়েছেন বিখ্যাত ফরাশি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করা পুরোধা ব্যক্তি শিক্ষাবিদ ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক; একুশে পদকপ্রাপ্ত মাহমুদ শাহ কোরেশী বৃত্তি।
এমনকি সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে সাহিত্যের কাগজ বঙ্গস্বর ও অনত্র্য নামক ভাঁজপত্র। বঙ্গ রাখাল ইতিমধ্যেই লোকসাহিত্য ও গবেষণার মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেছেন। কাজ করেছেন বাউল-ফকির-মরমী সাধক লালন শাহ, পাগলা কানাই, পাঞ্জু শাহ ছাড়াও নানা মহাজনকে নিয়ে। সংস্কৃত মন্ত্রণালয়ের অনুকূল্যে গণহত্যা জাদুঘরের গবেষণা প্রকল্পের একজন গবেষক হিসেবে করেছেন ছোটবোয়ালিয়া জয়ন্তীনগর ও বসন্তপুর গবেষণার অভিসন্দর্ভ, যা পরে গণহত্যা জাদুঘর থেকে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণাকর্মটি ধারাবাহিকভাবে দৈনিক বাংলাদেশের খবরে ‘শৈলকূপার তিন গ্রামের গণহত্যা’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া তিনি অংশ নিয়েছেন তুর্কি বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহিরের উপস্থাপনায় ‘দেশটাকে ভালোবেসে’ অনুষ্ঠানেও। এ ছাড়া করেছেন ‘কামান্না গণহত্যা’র ওপর বিশদ গবেষণা।
লোকসাহিত্য নিয়েও নিরলসভাবে গবির এই সাবেক শিক্ষার্থী কাজ করে যাচ্ছেন; যা প্রকাশিত হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক, লিটলম্যাগ ও জার্নালে। এই বছর বঙ্গ রাখালের মরমী কবি পাগলা কানাইয়ের গ্রন্থটি তাকে আরো বেশি সবার কাছে পরিচিত করে তুলেছে।
এ ছাড়া প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে- সংস্কৃতির দিকে ফেরা (প্রবন্ধ, ২০১৫), লোক মানুষের গান ও আত্ম অন্বেষণ (গবেষণা, ২০১৬), মানবতাবাদী লালন জীবন অন্বেষণ (প্রবন্ধ, ২০১৭), হাওয়াই ডাঙ্গার ট্রেন (কবিতা, ২০১৮), মনীষা বীক্ষণ ও অন্যান্য (প্রবন্ধ, ২০১৮), অগ্রন্থিত রফিক আজাদ (সম্পাদনা, ২০১৯), লণ্ঠনের গ্রাম (কবিতা-২০১৯), যৈবতী কন্যা ইশকুলে (কবিতা, ২০২০), কবিতার করতলে (প্রবন্ধ, ২০২০), কবিতায় ঘরবসতি (২০২০), অন্ধ যাজক (কবিতা-২০২১), জন্মান্ধ ঘোড়া (২০২৩), কে বলে দাঁড়িয়ে আছি তোমার অপেক্ষায় (২০২৪)।
বঙ্গ রাখাল শুধু নিজেই আলোকিত হতে চাননি-২০০৯ সালে অকাল প্রয়াত পিতার নামে নিজগ্রামে প্রায় ৬০০০/৭০০০ হাজার বই, পত্র, পত্রিকার সমারয়ে তৈরি করেছেন বিশাল পাঠাগার। যা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের মাঝে আলো ছড়াচ্ছে, যা নিয়ে দৈনিক খবরের কাগজের টিনেজার পাতায় প্রতিবেদন প্রকাশিতও হয়েছে।
তিনি গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ইকোনমিকস ডিগ্রি এবং গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র থেকে গণহত্যার ওপর পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সদস্য। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি জীবন শুরু করেন শিক্ষকতা। নোয়াখালী লক্ষ্মীপুর ভবানীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পেশাজীবনে প্রবেশ করলেও পরে যোগ দেন- অরগানাইজেশন ফর সোসাল অ্যাডভান্সমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল অ্যাকটিভিটিস (ওসাকা) নামক বেসরকারি সংস্থায়। এই মেধাবী তরুণ প্রবন্ধে ডেইলি স্টার থেকে পেয়েছেন আবুল মনসুর আহমদ পুরস্কার ২০২০। জলধি সম্মাননা-(কবিতা ২০২১), অনুপ্রাণন সাহিত্য সম্মাননা (২০২২), কাব্যশ্রী সাহিত্য পুরস্কারসহ (২০২৪) আরো পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা।
"