রাবিকে নিয়ে ৭১তম ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা
জীবনের নানা অধ্যায়ের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন। দেশে লাখ লাখ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করলেও, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাদ খুব অল্পকিছু শিক্ষার্থীই পায়। আর এই অধ্যায়ের শুরুতে প্রত্যেক সৌভাগ্যবান শিক্ষার্থীরই তার নিজের ক্যাম্পাস নিয়ে কিছু শুভ চিন্তা, কিছু প্রত্যাশা এবং আকাঙ্ক্ষা থাকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১তম ব্যাচ (২৩-২৪)-এর ক্লাস শুরুর দিনটি কয়েকবার পেছানোর পরে অবশেষে গত ২২ সেপ্টেম্বর শুরু হয়। ক্যাম্পাস এখন নবীন শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর; তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজনের অনুভূতি সংগ্রহ করেছেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিম মুনতাসির রাফিন
আদর্শ শিক্ষকদের হাত ধরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শুধু তো একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৭১ বছরের অনেক ইতিহাস, অনেক নাম। এই প্রাঙ্গণে আছে অনেক গৌরবের ইতিহাস আবার এই প্রাঙ্গণেই লেগে আছে রক্তের দাগ। ৭১ এ রাবির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারীদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়া মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে চলছে এই সবুজ চত্বর, বধ্যভূমি; মিশে আছে ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ড. শামসুজ্জোহার ইতিহাস। ড. শামসুজ্জোহা গুলির সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র, সমাজ এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি তার উত্তরসুরী শিক্ষকদের দায় বাড়িয়ে দিয়ে গেছেন। সেই দায় মাথায় নিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদের শিক্ষকদের বেশ কয়েকজন সাহসী ভূমিকা আমাদের আশাবাদী করে, স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করে। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যে স্বপ্ন তা মূলত দেশকে নিয়েও স্বপ্ন। মুক্তিযুদ্ধের যে মূল আদর্শ সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার তার প্রয়োগ এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরু হোক। অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞান ভিত্তিক, মানবিক ক্যাম্পাস হোক। শিক্ষার মান আরো বৃদ্ধি পাক, শিক্ষা হোক জ্ঞান উৎপাদন ভিত্তিক। নবীন শিক্ষার্থী হিসেবে এটাই ভাবনা, এটাই স্বপ্ন।
শাহেদ মাহমুদ মাশরাফি
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
র্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাসে অগ্রজ-অনুজদের বন্ধন অটুট থাক
বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যায়তন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। নানা গৌরব এবং অর্জনে গাঁথা ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠিত অপরূপ সৌন্দর্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক এই রাবি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য সল্প পরিসরে বর্ণনা করা কষ্টসাধ্য। শত ক্লান্তির মাঝেও আমার এই সবুজ চত্বরে একবার চুপ হয়ে চোখ বুলিয়ে গেলে কোথাও যেন ক্লান্তির রেশটুকু থাকে না। সমৃদ্ধ এই প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রাণের মতিহার চত্বরকে এভাবেই প্রাণোজ্জ্বল দেখতে ও রাখতে চাই। রাবিতে যেসব আদর্শ শিক্ষকরা রয়েছেন তাদের শিক্ষা ও ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিজেকে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণময় করতে চাই। সর্বোপরি সেমিনার, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিষয়ে বড় ভাই-বোনদের যে মায়ার সাহায্য সহযোগিতা ও ভালোবাসা পাচ্ছি তেমনি র্যাগিং নামক ব্যধিমুক্ত সুন্দর, সুশৃঙ্খল ক্যাম্পাস সব সময় পাওয়ার প্রত্যাশা রাখছি। আমার প্রাণের এই ক্যাম্পাস এভাবেই প্রাণোজ্জ্বল হয়ে থাকুক চিরন্তন।
জান্নাতুল ফেরদৌস পুষ্প
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
বৈষম্যহীন শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাস চাই
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বলতে আমরা নিজেদের দ্বিতীয় ঘর বুঝি। নিজেদের বাড়ির ক্ষেত্রে যেমন আমরা নিরাপত্তা, সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশকে গুরুত্ব দেই তেমনি ক্যাম্পাসের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু নয়। যেখানে শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের আমাদের পূর্ণ নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা থাকবে, থাকবেনা কোনো নির্দিষ্ট ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীর আধিপত্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দিতে হবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ ও অবাধে তাদের মাদক সেবন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ক্যাম্পাসে কোনো প্রকার ধর্মীয় দাঙ্গা আমাদের কাম্য নয়। শিক্ষার্থী হিসেবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সম-অধিকার, সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা, সত্যিকার অর্থেই ধর্মীয় রীতি নীতি চর্চার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা দরকার। এছাড়াও হলগুলোতে পর্যাপ্ত সিটের অভাবে অনেক বৈধ সিট থেকে বঞ্চিত। অনেক মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী অবৈধভাবে হলে অবস্থান করে। দুজনের জন্য একটা করে বেড, রিডিং টেবিল বরাদ্দ, যা সুষ্ঠু পড়াশুনার ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটায়। হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের সিট সংখ্যা বাড়িয়ে, ক্যান্টিনে স্বাস্থ্যকর খাবারের নিশ্চয়তা প্রদান করে শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ তৈরি করা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার; এগুলো নিশ্চিত হোক।
সাব্বির খান জিয়াম
শিক্ষার্থী, চারুকলা অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
উদযাপনের ভঙ্গিতে কথা-কাজের চর্চা বহমান রাখা দরকার
একটা আইডিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মূল (core)’— একাডেমিক্যালি রিচ, গবেষণা, জ্ঞান উৎপাদনকে পাশে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের Cultural Politics এ নজর দিচ্ছি। আমার ধারণা রাজশাহীর অবস্থান প্রান্তে হবার কারণে ইন রিয়ালিটি মেলা কিছু প্রান্তীয়। কিছু প্রস্তাব দিচ্ছি: চিন্তার ক্ষেত্রে প্রান্তিক অবস্থান লাভজনক কিছু না। প্রাইড-রয়্যালিটি ঝেড়ে দিয়ে ইন্টারডিপার্টমেন্টাল কোলাবোরেশনের চর্চা দরকার। অভ্যন্তরীণ-আন্তর্জাতিক সংকটাপূর্ণ মূহূর্তে আইন-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-পরিবেশগত এছাড়াও একজিস্টিং ডিসকোর্সগুলোতে ইতিহাসকে মাথায় রেখে সামঞ্জস্যপূর্ণ তত্ত্বীয় আন্দাজ-আলাপ করার দক্ষতা এবং মাঠপর্যায়ে নেমে কাজ করবার মানসিক চর্চা প্রয়োজন। কিছু সংস্কার মানসিক কিন্তু দ্রুততর হলেই ভালো-তেমন হলো-প্রগতি-ধর্মের পোলারাইজেশনকে না করা। কিন্তু; ইউটোপিয়া ইউটোপিয়াতে সম্ভব; বাস্তবে না কিন্তু ইউটোপিয়ার যত নিকটে পৌঁছানো যায় আরকি। সংস্কার দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া কিন্তু মোদ্দাকথা, এখন কাজ-উৎযাপনের ভঙ্গিতে কথা-কাজের চর্চা বহমান রাখা।
তাসনুভা তাজিন তুবা
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠুক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণের জায়গা
অজস্র আবেগ, ভালোবাসামিশ্রিত এক নাম : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। স্কুলজীবনে যাদের সান্নিধ্যে কেটেছে তারা এই বিদ্যাপীঠেরই ছাত্র ছিল তাই আমারও অন্যরকম এক আকর্ষণ কাজ করত এই ক্যাম্পাস পড়াশোনা করার জন্য। যেদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম সেদিন যেন মনে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছিলো। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রতি আছে বহু প্রত্যাশা। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির সম্পূর্ণ মিল হয় না বা পাওয়া হয় না। তবুও একজন নবীন শিক্ষার্থী হিসেবে এই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রতি কিছু চাওয়া তুলে ধরলাম। স্বপ্নের ক্যাম্পাসে চালু হোক সুস্থ ধারার দলীয় লেজুড়বৃত্তিহীন রাজনীতি। যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী যাতে রাজনীতির সুস্থ ধারার চর্চা করতে পারে। থাকবে না কোনো সেশন জট; কোনো শিক্ষার্থীর যেন জীবন থেকে মূল্যবান সময় নষ্ট না হয়। প্রতিটি বিভাগ হয়ে উঠুক গবেষণার সূতিকাগার। ক্যাম্পাসে খাবারের দাম থেকে শুরু করে যাতায়াতের ভাড়া হোক শিক্ষার্থীবান্ধব। আর সর্বোপরি বিশ্বিবিদ্যালয় হয়ে উঠুক প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণের জায়গা স্বপ্ন ভঙ্গের নয়; নবীন হিসেবে এটাই প্রত্যাশা।
শাহরিয়ার আহমেদ সৌরভ
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসের সব ভালো কাজে নিজেকে অংশীদার করতে চাই
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে শিক্ষক এবং সিনিয়রদের নিয়ে একটা ভয় কাজ করতো কিন্তু ক্যাম্পাসে আসার পর নিজেকে আশীর্বাদপুষ্ট মনে হয়েছে। পৃথিবীর সব মানুষের কাছেই তার নিজের জিনিস সুন্দর এবং শ্রেষ্ঠ। আমার কাছেও আমার ক্যাম্পাস সবার সেরা। আমার সৌভাগ্য যে এত পরিপাটি এক ক্যাম্পাসকে আমার ক্যাম্পাস বলে পরিচয় দিতে পেরে। ক্যাম্পাসের প্রত্যেক ভালো কর্মকান্ডে নিজেকে অংশীদার করতে চাই; বৃহত্তর এই ক্যাম্পাসকে নিজের করে পাওয়ার অনুভূতি সত্যি লিখে প্রকাশযোগ্য নয়। ভর্তিযুদ্ধে প্রতি রাতে ঘুম ভাঙলে মনে হতো ‘আমি চান্স পারো তোহ পাব তোহ।’ এখন আমি সানন্দচিত্তে বলতে পারি আমি একজন গর্বিত রাবিয়ান।
নাফিসা নাজরাতুন হৃদি
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
"