রায়হান আবিদ, বাকৃবি
সমতলে পাথর বিছানো রূপকথার ঝরনা
কুয়াশার নির্জনতায় ঢাকা সারি সারি পাহাড় আর নিচে সমতলে সাদা পাথর বিছানো যেন রূপকথার এক ঝরনা বয়ে যাচ্ছে। এদিকে শাঁ শাঁ আওয়াজে বয়ে যাওয়া জলধারায় রোদের স্পর্শে চিক্ চিক্ আলো। সবকিছু মিলিয়ে কোন স্বর্গে এলাম আমরা, তা নিয়ে ভাবছি!
সেমিস্টারের মাঝেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন অনুষদের স্ফূরণ-৫৬-এর শিক্ষা সফর ঠিক হলো সিলেটের সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামারে। খামার ঘুরা শেষে হাতে ছিল একদিন। সবাই ঠিক করল ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর দেখবে। প্রায় দেড় শ শিক্ষার্থীর তিনটি বাস রওনা হলো সকাল ১০টায়। চায়ের রাজ্যের মধ্য দিয়ে পাহাড়ের বুক চিরে নেমে যাওয়া রাস্তা পাড়ি দিয়ে চলে এলাম সাদা পাথরে যাওয়ার ঘাট।
ধলাই পেরিয়ে সাদা পাথরের স্বর্গরাজ্য। তপ্ত রোদে পুড়ছে বালু আর সেই পথ শেষে চোখে পড়বে পাথর রাজ্য! পাথর বিছানো বিছানার ওপর দিয়ে ধেয়ে যাচ্ছে ঝরনার পানি। এবার দাঁড়িয়ে দেখলাম মাথার ওপরে তুলোর মতো মেঘ। সীমান্তের দিকে ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো সবুজ পাহাড়। নিচে পানি-পাথরের সংমিশ্রণ। পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলেছে হিমাচলের পানির স্রোত। সে পানিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শিশু থেকে বয়োজ্যেষ্ঠরা।
ছোট-বড়, গোলাকার-ডিম্বাকারসহ সব কাল্পনিক আকারের পাথরের উৎস ধলাই নদ। ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে প্রচুর পরিমাণে পাথর ঝরনার পানিতে নেমে আসে। স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে জানলাম তাদের জীবকার অন্যতম উৎস এই পাথর।
শীতল জলধারায় পা দিলেই মিলবে প্রশান্তি। জলে শান্ত করে মন-প্রাণ। এবার পানিতে নেমে ধাপাধাপি করা শুরু। কে থামায় এ তীব্র গরমের শীতল বাতাসে স্নিগ্ধ জলে শরীর ডোবানো থেকে। পানির গভিরতা কম তবে স্রোতের বেগটা কম নয়। কিছু পিচ্ছিল পাথর আছে, তাই পা টিপে টিপে হাঁটতে হয়। সেই পাথরের ওপর পা রেখে ধেয়ে আসা হাঁটুপানির জলাধারা পার হওয়া কম কষ্টসাধ্য না।
সেখানে গিয়ে নিজেদের মতো ভাগ হয়ে গেল সবাই। কেউ কেউ পাঁচজন, দশজন নিয়ে আবার অনেকে দুজনের এক দৃষ্টান্তমূলক গ্রুপ করে বাকিদের পারোয়া না করে চলে গেল। তবে সবার উদ্দেশ্যই ছিল ঘুরব। গ্রুপের বিবাহিত কাপল আলাউদ্দিন-শান্তির জুটি ছিল দেখার মতো। এদিকে ব্যাচেলরদের এক বিশাল গ্রুপ নেমে পড়ল জলধারা জয় করতে। পাহাড় সমান আনন্দ আর চলে যাওয়ার সময় বিষাদ অনুভব হয়েছিল সেদিন। অনেকেরই এটি হয়তো শেষ আসা। পাথর কুড়িয়ে পাহাড় বানানোর মতো ছেলে খেলায় মাতল অনেকে। এদিকে ছিল শিক্ষকদের গ্রুপ, যারা নজরে রেখেছিল সবাইকে। ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল লুলংপুঞ্জি ও শিলংয়ের চেরাপুঞ্জি। তাই দুদেশের সীমান্ত বাহিনী বিজিবি-বিএসএফের বিশেষ নজরদারি। সাদা মেঘে আবর্তিত পাহাড়গুলো প্রতিবেশী দেশের আওতাধীন হওয়ায় কাছে যাওয়ার অনুমতি নেই। তাই পেছনে রেখেই চলল ছবি তোলা।
"