সাদিকুর রহমান সাদি, বিএমইউ
ফ্রম পলিউশন টু সলিউশন : প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি প্রচারণা
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) কালশী ইসলামিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে টিম ‘পলিউশন টু সলিউশন’ OMLAS- ওয়ান মিলিয়ন লিডারস এশিয়ার অধীনে ‘পলিউশন টু সলিউশন’ প্রকল্পের জন্য একটি প্রচারণা শুরু করেছে, যার মূল উদ্দেশ্য প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর। এতে শিক্ষার্থীরা উৎসাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে। প্রোগ্রামের শুরুতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটি সচেতনতামূলক সেশন পরিচালিত হয়। এরপর যারা আর্ট ও লেখার প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়েছে, তাদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। শেষপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের গাছ, বিভিন্ন স্টেশনারি আইটেম প্লাস্টিকের বোতলের পরিবর্তে বিতরণ করা হয়।
প্লাস্টিক দূষণ পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য উল্লেখযোগ্য হুমকি সৃষ্টি করছে। এটি লিচেটের মাধ্যমে মাটি ও পানি দূষিত করে, যা উদ্ভিদ ও প্রাণীদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। প্লাস্টিক দূষণের ক্রমবর্ধমান সমস্যাটি কমাতে, বাংলাদেশের একটি দল OMLAS ফেলোশিপ প্রোগ্রামের অধীনে একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে। প্রকল্পটির নাম ‘ফ্রম পলিউশন টু সলিউশন : রিসাইকল টুডে ফর টুমরো’ এটি ওয়ান মিলিয়ন লিডারস এশিয়ার ফেলো মোহিমা রহমান দ্বারা পরিচালিত। এই প্রকল্পটি একটি টেকসই বিশ্ব গঠনেরওউপর গুরুত্বারোপ করে। প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে ছোট পদক্ষেপগুলো একটি টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, যা দলটি কঠোর পরিশ্রম করে প্রমাণ করছে।
OMLAS ফেলোশিপ প্রোগ্রাম হলো একটি প্ল্যাটফরম যেখানে এশিয়ার যুব নেতারা সংযুক্ত হয়। এটি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-SDG)) সম্পর্কিত প্রকল্পগুলোকে সামনে আনার দিকে মনোনিবেশ করে। ২০২৪ সালে নির্বাচিত ১৭টি উদ্যোগের মধ্যে বাংলাদেশ দলের ফেলো ও চ্যাম্পিয়নদের দেওয়া হয়েছে ‘পলিউশন টু সলিউশন’ উদ্যোগটি। এই প্রচারণাটি শুধু একটি পরিবেশগত পরিচ্ছন্নতা প্রচেষ্টা নয় বরং এটি এমন একটি কর্মযজ্ঞ, যা সম্প্রদায়ের মধ্যে দায়িত্ববোধ এবং স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, প্লাস্টিক সংগ্রহ, পুনর্ব্যবহার এবং শিক্ষার্থী সম্পৃক্ততার মতো সৃজনশীল পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য এই উদ্যোগটি OMLAS নেতৃত্ব এবং টেকসই উন্নয়নের জটিল মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটায়।
‘পলিউশন টু সলিউশন’ প্রচারণাটি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে চায়। প্লাস্টিক হলো জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম বিপজ্জনক কারণ। OMLAS ফেলো চ্যাম্পিয়নদের নেতৃত্বে এই প্রকল্পটি স্কুলে শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম এবং বাজারভিত্তিক পুনর্ব্যবহার কার্যক্রম পরিচালনা করে সম্প্রদায়-কেন্দ্রিক বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সমর্থন অর্জন করেছে।
এই প্রচারণার লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা। ইন্টারেক্টিভ সেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পুনর্ব্যবহারের গুরুত্ব শেখানো। এ ছাড়া তারা জানতে পারবে কীভাবে প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করে ব্যক্তিগত দায়িত্ব নিয়ে সমাজকে টেকসই করা যায়। তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে এই প্রচারণা একটি পরিবেশ-সচেতন প্রজন্মের বীজ বপনের লক্ষ্য নিয়েছে, যা নিশ্চিত করে যে প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই দীর্ঘ সময় ধরে চলবে। টেকসই উন্নয়নের উদ্দেশ্য হলো আমাদের চাহিদা পূরণ করা যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণের পথে কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়। তাই দলটি তরুণ প্রজন্মকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যাতে তারা পরিবেশের উপর প্লাস্টিকের খারাপ প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। ফলে তারা এই পৃথিবীকে আরো টেকসই করতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এবং কাজ করতে পারবে।
দলের লক্ষ্য জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) ১৩, ১৪, এবং ১৫-এর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, যা বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণের গুরুতর সমস্যাকে সমাধানের জন্য কার্যকর। দেশটি প্রতি বছর প্রায় ২৪,৬৪০ টন প্লাস্টিক উৎপাদন করে, যার বেশির ভাগই সামুদ্রিক পরিবেশে শেষ হয় এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য উল্লেখযোগ্য হুমকি সৃষ্টি করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে আরো ত্বরান্বিত করে। এ ছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্য মাটির উর্বরতা কমিয়ে দেয় এবং ভারী বৃষ্টির সময় ড্রেনেজ ব্যবস্থা আটকে দিয়ে শহুরে জলাবদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
OMLAS ফেলো এবং চ্যাম্পিয়নদের দলটি স্থানীয় বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সম্প্রদায়কে পুনর্ব্যবহারমূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, বেসরকারি সংস্থা (NGO) এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে একত্রে কাজ করে দলটি প্লাস্টিক দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় একটি বহুস্তরীয় পদ্ধতির বিকাশ ঘটাচ্ছে। এই প্রকল্পটি পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমষ্টিগত পদক্ষেপ এবং সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা উদাহরণস্বরূপ উপস্থাপন করে।
‘পলিউশন টু সলিউশন’ প্রচারণাটি আমাদের বর্তমান পরিবেশগত সিদ্ধান্তগুলো কীভাবে একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে ভূমিকা রাখছে তার গুরুত্বকে তুলে ধরে। এটি বাংলাদেশের মতো দেশে প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই এবং টেকসইতা প্রচারের জন্য এমন একটি ব্যাপক এবং কৌশলগত পদ্ধতি দেখার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক।
‘পলিউশন টু সলিউশন’ দলটি শুধু একটি ছোট উদ্যোগ, যা একটি পরিচ্ছন্ন-সবুজ ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দলটি প্রতিটি ব্যক্তি, সম্প্রদায়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসার এবং প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। একটি বৃত্তাকার অর্থনীতির মাধ্যমে আমরা একত্রে দূষণকে সমাধানে পরিণত করতে পারি। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারি। OMLAS ফেলোশিপের মাধ্যমে চলমান এই প্রচারণাটি এই অঞ্চলে এবং এর বাইরেও অন্যদের জন্য উদাহরণ হিসেবে কাজ করছে।
"