সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী, বাকৃবি
জীম : এক অকুতোভয় সাংবাদিকের গল্প
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা জগতে সাহসিকতা, নিষ্ঠা ও সততার প্রতীক হয়ে উঠেছেন তানিউল করিম জীম। সাংবাদিক হিসেবে তার যাত্রা সহজ ছিল না, বরং শুরু থেকেই তাকে নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সাংবাদিকতার প্রতি তার গভীর ভালোবাসা ও অঙ্গীকার তাকে এ পথের প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সহায়তা করেছে।
২০১৯ সালে বাকৃবি সাংবাদিক সমিতিতে যোগদানের মাধ্যমে জীমের সাংবাদিকতা শুরু হয়। তার ধারাবাহিক ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা অল্প সময়েই তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ২০২১ এবং ২০২২ সালের বর্ষসেরা সাংবাদিক হিসেবে পুরস্কৃত হন জীম।
২০২৪ সালে জীম বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন, যা তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে দাঁড়ায়। তার কর্মজীবনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে তিনি ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হন।
বাকৃবি প্রকৌশলীদের দুর্নীতি-সংক্রান্ত সংবাদ লিখে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতার জগতে রীতিমতো সাড়া ফেলেন তানিউল করিম জীম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান সাজুর জোরপূর্বক নিয়োগ নিয়ে তার প্রকাশিত সংবাদ ক্যাম্পাসে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। জীম একাই সব ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে সাহসী সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত করে তোলে।
তবে, এই সাহসিকতা ও দায়িত্বশীলতার কারণে জীম নানা সময় বিভিন্ন পক্ষের বিরোধিতার শিকার হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে জীমকে তার সততার জন্য সমালোচকরা বারবার বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছেন। তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতির সঙ্গে একটি ছবিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করা হয়। যদিও ছবিটি মিথ্যা এবং ক্রপ করা হয়েছিল, তার সাহসী ও সৎ অবস্থানের কারণে এসব অপপ্রচার তার জনপ্রিয়তাকে ক্ষুণ্ণ করতে ব্যর্থ হয়। শিক্ষার্থীদের কাছে জীমের গ্রহণযোগ্যতা এতটাই দৃঢ় ছিল যে, প্রতিপক্ষরা তাকে এই মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বিতর্কিত করতে বিফল হন।
জীমকে সাংবাদিকতার শুরু থেকেই বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। ফজলুল হক হলে থাকার সময় তাকে তৎকালীন ছাত্রলীগ কর্মীদের পক্ষ থেকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তাকে ভালো সিট দেওয়া হয়নি এবং অনেক সময় মসজিদে ঘুমাতে বাধ্য করা হয়েছিল। তবুও জীম তার কাজের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ থেকে প্রতিটি বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে গেছেন।
তানিউল করিম জীম শুধু দুর্নীতি নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, শিক্ষা ও প্রশাসনের বিভিন্ন বিষয়েও গভীরভাবে কাজ করেছেন। তার সততা, সাহসিকতা এবং নিষ্ঠার জন্য বাকৃবি ক্যাম্পাসে তিনি আজ একজন আদর্শ সাংবাদিক হিসেবে বিবেচিত।
এমন একজন সাহসী সাংবাদিকের যাত্রা কেবল তার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বাকৃবির শিক্ষার্থীদের জন্যও এক অনন্য অনুপ্রেরণার গল্প।
"