আব্দুল্লাহ আল মুনাইম, ইবি
সিফাতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরস্কার কি পঙ্গুত্ব?
‘মন সইলেও,
শরীর সহে না মনা...
শ্বাস চাপা গেলেও,
ব্যথার স্পন্দন চাপা যায় কি মনা?’
বলছি কোটা আন্দোলনে অংশ নিয়ে পায়ে পুলিশের ছোড়া বুলেট বিদ্ধ হয়ে বিছানায় কাতরানো বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির ছাত্র সিফাত হাসান সৌরভের কথা। গত ১৯ জুলাই মিরপুর ১০ নম্বরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সময়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এতে ডান পায়ের হাঁটুর ভেতর দিয়ে গুলি ভেদ করে বেরিয়ে যায়। মুহূর্তেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে সে। পরে আন্দোলনকারীদের সহায়তায় হাসপাতালে ভর্তি হয় সে। এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় অর্থাভাবে পাচ্ছে না প্রয়োজনীয় সু-চিকিৎসা। ভবিষ্যতের ঠিকমতো হাঁটতে পারবে কি না তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে সিফাত হাসানের একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘জীবন যেন আমার উদ্দেশ্যবিহীন বহতা নদীর মতো! গুলিবিদ্ধ পায়ে ৭ কেজি ওজনের রিং নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ছোটাছুটি! আহ্ জীবন, আহ্!’
রোজ রোজ গাদি গাদি ওষুধ আর ইনজেকশন নিতে নিতে আমি আজ বড্ড ক্লান্ত। মানুষের হাড়ের এবং রগের ব্যথা যে এতটা তীব্র বেদনাবিধুর হতে পারে, তা শুধু ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ-ই বুঝবে না! মনে হয় মরে গেলেই বেঁচে যেতাম! (আস্তাগফিরুল্লাহ)
মনে হয় সমস্ত পৃথিবীর চাপানো ওজন আমার এই গুলিবিদ্ধ পায়ে! ব্যথা হলো তার নিত্য সঙ্গী, কিযে তীব্র ব্যথা, আল্লাহ্ যেন এমন কষ্ট আমার শত্রুদেরও না দেন। আমি তো এটাও জানি না ভবিষ্যতে আবার হাঁটতে পারব কি না, দৌড়ানো তো স্বপ্নের ব্যাপার এখন। তবুও শুধু অপেক্ষা আর ধৈর্য ধরা ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমার বা চিকিৎসকদের।
গত ১৯ জুলাই মিরপুর ১০ নম্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হই ডান পায়ের একদম হাঁটুর মাঝে। এতে আমার ভেতরের হাড় ভেঙে যায় মারাত্মকভাবে। এখনো পর্যন্ত ৪টি সার্জারি সম্পন্ন হয়েছে। ভবিষ্যতে আবারও সার্জারি করাতে হবে ভেতরের প্লেট এবং স্ক্রুগুলো বের করার জন্য।
তবুও সর্বোপরি, আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই যারা এবং যেসব মানবিক প্রতিষ্ঠান আমার এই দুঃসময়ে আমার পাশে দূতের মতো এসে দাঁড়িয়েছেন। আল্লাহ্ নিশ্চই আপনাদের উত্তম প্রতিদান দেবেন। দেশের যে স্বাধীনতার জন্য আমার এবং আমাদের মতো অসংখ্য ভাই-বোনেরা আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, অন্ধ হয়েছেন এবং শহীদ হয়েছেন দয়া করে তাদের এবং তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন।
সরকার এবং সব সমন্বয়ক ও উপদেষ্টামন্ডলীর কাছে আকুল আবেদন আপনারা সুষ্ঠু লিস্ট করুন এবং সাহায্যে এগিয়ে আসুন। যে দেশে ১৫ কোটিরও বেশি টাকা ভিক্ষুক থেকে শুরু করে আবালবৃদ্ধবনিতা দান করতে পারে বন্যার্তদের সাহায্যে। সেখানে ১৮-২০ হাজার আহতদের সুচিকিৎসার জন্য কেন এখনো আসছে না! কেন মা তার শিশুকে বিক্রি করে গুলিবিদ্ধ অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা করাবেন?
স্বাধীনতা কোথায়? স্বাধীনতা কি এটাই বলে, গণতন্ত্র কি এটাই?
আপনাদের কাছে আমাদের আবেদন, আমাদের রাজনীতির শিকার বানিয়ে নিজেদের এবং দেশের সম্মানহানী করবেন না। যদি এমন হয় তবে আগামীতে দেশের বিপদে কোনো তরুণ বা যৌবন বিলিয়ে দেওয়া যুবক যুবা দের পাবেন না। মানুষ হয়ে মানুষের জন্য এগিয়ে আসুন, দেশ গড়ার দঢ় প্রত্যয় নিয়ে একতাবদ্ধ হন এবং দেশের স্বাধীনতার সূর্যকে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করার জন্য একত্রে কাজ করুন।
ভুলে যাবেন না আমার সবাই মানুষ, আমরা সবাই একই দেশমাতার সন্তান। দল বল নির্বিশেষে সবাই একত্র হয়ে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসি, এটাই হোক আমাদের একান্ত প্রত্যয় এবং অঙ্গীকার।
তারা ভিক্ষুক নয়। বরং তারা তাদের জীবন বাজি রেখে লড়েছে শহিদী তামান্না নিয়ে, সেটা কি কেবলই তাদের জন্য? আজ তাদের মতো তরতাজা ফুলগুলোর জীবন রক্ত এবং ঝরে যাওয়ার মধ্যেই অর্জিত হয়েছে এই স্বাধীনতা। তাই তাদের আপনার ভাই, বোন এবং আপনাদের একজন ভেবেই এই স্বপ্নবাজ তরুণদের এই খারাপ সময়ে অন্তত এগিয়ে আসুন। এটা মানবতা, দয়া নয়। এটা হোক তাদের মতো অঙ্গ হারা জীবনের অধিকার। আল্লাহ্ তাদের সহায় হন।
"