সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক, বেরোবি
কেমন উপাচার্য চান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ নেওয়ার ২৫ দিন পেরিয়ে গেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে তৎপর সরকার। কারণ একসঙ্গে প্রায় ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদ খালি। সরকার পতনের সঙ্গে তাদেরও পদত্যাগ করতে হয়। সরকারের চেষ্টা নিরপেক্ষ, যোগ্য, সৎ, নৈতিকতাসম্পন্ন, অ্যাকাডেমিক এবং গবেষণায় দক্ষ উপাচার্য পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
পক্ষান্তরে ২৫ দিন ধরে উপাচার্যবিহীন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানায়ক আবু সাঈদের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। পথচলার ১৬ বছরে চারজন শিক্ষাবিদকে উপাচার্য হিসেবে পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ৪র্থ উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হাসিবুর রশীদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে গত ৯ আগস্ট ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করে।
দুই মাস ধরে ক্লাস পরীক্ষাসহ সব ধরনরে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মহলে এ বিষয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ৭ দিনের মধ্য ভিসি নিয়োগের দাবিতে মধ্যরাতের মিছিল বেগম করে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য নিয়োগ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও অ্যাকাডেমিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব। এতে শিক্ষার্থীদের নতুন করে সেশনজটে আটেকে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কেমন উপাচার্য চায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীর মতামত তুলে ধরলাম-
শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে সবার জন্য কাজ করবেন- এমন কেউ একজন উপাচার্য হন। যিনি হবেন সৎ, শিক্ষার্থীবান্ধব ও প্রশাসন চালাতে দক্ষ। রাজনৈতিক কোনো মতাদর্শের চাটুকারিতা থেকে মুক্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মতামতকে প্রাধান্য দেবেন এবং চাটুকার শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, ছাত্র পাশে রাখবেন না। সর্বোপরি, বেগম রোকয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নে কাজ করার দৃঢ় মানসিকতা থাকবে- এমন একজনকে আমরা উপাচার্য হিসেবে দেখতে চাই। ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, উপাচার্যের প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক নেতৃত্ব দেওয়ার গুণ যেমন থাকা জরুরি, সেই সঙ্গে কাজে সততা, স্বচ্ছতা, দূরদর্শিতা, নিরপেক্ষতা থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে না, তাই একজন উপাচার্যের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকাটা স্বাভাবিক। তবে দায়িত্বের জায়গায় বৈষম্য করা, স্বৈরাচারী আচরণ করা এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তির কাছে কাম্য নয়।
শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক কামরুজ্জামান পুলক বলেন, উপাচার্য হিসেবে এমন একজন শিক্ষককে চাই, যিনি নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না করে শিক্ষার্থীবান্ধব দক্ষ একজন প্রশাসক হয়ে উঠবেন। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী করার পাশাপাশি আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগোপযোগী ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রেনি আক্তার বলেন, দলীয় রাজনীতিমুক্ত, শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য চাই। আমরা গত ১৫ বছর পেছনে তাকিয়ে পর্যালোচনা করলেই দেখতে পাব, বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় রাজনীতির বিষয়টি উঠে এসেছে। রাজনৈতিকভাবে প্রাপ্ত নিয়োগের পর দেখা যায়, এর ভেতরে আবদ্ধ থেকে চিন্তা করতে হয়। শিক্ষার্থীবান্ধব চিন্তা কমই আসে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। দিনশেষে এটাই চাওয়া থাকবে, দলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য চাই।
শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফারহান সাদিক সাজু বলেন, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়কে আপন করে ভাববেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র-শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে চলবেন, যোগ্যতা অনুযায়ী সবার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবেন এবং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নততর করার সার্বক্ষণিক চেষ্টা করবেন। যিনি শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সর্বদা কাজ করবেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সঙ্গে গবেষণাকে সমানভাবে প্রাধান্য দিয়ে আমাদের ক্যাম্পাসকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে তুলে ধরতে সাহায্য করবেন।
শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক আজিজুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ক্ষেত্রে তিনটি দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, তিনি একজন মানুষ হিসেবে মানবিক মর্যাদা ও মূল্যবোধসম্পন্ন হবেন এবং ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য তৈরি করে ন্যায়ের পথ অনুসরণ করবেন। দ্বিতীয়ত, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষা ও গবেষণার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মানুষ হিসেবে নিজেকে বিকশিত করে সেই ন্যায়ের পথে চলতে সহায়তা করবেন। তৃতীয়ত, একজন প্রশাসক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে সেই পথকে মসৃণ করবেন।
"