মোছা. জান্নাতী বেগম, জাককানইবি
‘সমতল থেকে পাহাড় স্বাধীনতা সবার’
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই জুড়ে চলে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। রক্তাক্ত জুলাই বললেও ভুল হবে না। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ওপরে পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের অমানবিক হামলা চলে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভ ও পরবর্তী সহিংসতায় কমপক্ষে ৬৫০ জন নিহত হয়েছেন।
আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই এবং আগস্ট মাসে শহীদের স্মৃতিতে দেশব্যাপী চলে দেয়ালচিত্র এবং গ্রাফিতির কাজ। বিপ্লব আর বিজয়ের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে দেয়ালে দেয়ালে। এর মধ্যে ছিল তাহমিদ আমাদের শক্তি, বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর, আসছে ফাগুন আমরা আবার দ্বিগুণ হবো, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো জুলাই, পানি লাগবে কারো? পানি, পানি... একজনকে মারতে কয়টা গুলি লাগে স্যার? তাহার চেয়ে হতেম যদি মেট্রোরেল, তোর কোটা তুই নে, আমার ভাইরে ফেরত দে, রক্ত দেখলে বাড়ছে সাহস, ছাত্রদের বুকে গুলি কেন? আমার একটা বোন আছে, আমারে যাইতে দেন, ছাত্র হত্যার বিচার চাই, আমার বেটাক মারলু কেন? সোনার বাংলায় শকুনের থাবা, গণহত্যার বিচার চাই, সোনার বাংলা আজ মৃত্যুপুরী কেন? রক্ত শোক নয়, শক্তি, একদিকে নাটক করে, অন্যদিকে গুম করে, সম্পদের হিসাব পরে, লাশের হিসাব আগে।
এরই ধারাবাহিতায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দেয়ালচিত্র আঁকেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সমসাময়িক বিষয়গুলো অন্যতম বৃহৎ দেয়ালচিত্র এঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ছড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে গত ৫ আগস্ট জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনে দেশের অন্যতম বৃহৎ দেয়ালচিত্র অঙ্কন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। বৃহৎ এই দেয়ালচিত্রে লেখা সমতল থেকে পাহাড়, স্বাধীনতা সবার, Gen-Z, Justice, শুনো মহাজন আমরা অনেকজন এবং মেধা শহীদদের নামসহ বিভিন্ন প্রতিকৃতি।
দেয়ালচিত্র অঙ্কন করতে খরচের বেশির ভাগ বহন করেছেন চারুকলা ১ তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা। এর বাইরে চারুকলার বিভাগের শিক্ষক, অন্যান্য শিক্ষার্থী এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করেছিলেন।
এ নিয়ে ২০২২-২৩ সেশনের চারুকলা বিভাগর শিক্ষার্থী মোখলেছুর রহমান শুভ বলেন, ক্যাম্পাসে খুব একটা রঙিন দেয়াল ছিল না। ক্যাম্পাসে আসার পর থেকেই সেটার অপেক্ষা ছিল। গত ৫ আগস্ট মাথায় আসে সাম্প্রতিক বিষয়ের ওপর কীভাবে ক্যাম্পাসটা রঙিন করা যায়। বড় কিছু করার ইচ্ছে থেকে আমি আমার ব্যাচের (চারুকলা-১৬) সবার সঙ্গে কথা বলি। তারপর আমরা পরিকল্পনামাফিক কিছু করার প্রয়াস থেকে সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলে তাদের পরামর্শ নিয়ে মনির (চারুকলা-১৩) ভাইয়ের সঙ্গে আমরা একটা রূপরেখা তৈরির কাজ শুরু করে দেয়। আমরা সাম্প্রতিক, অসম্প্রদায়িক বিষয়টার বাইরে বাংলাদেশকে একটা পরিবার হিসেবে চিন্তা করে কাজটা করার চেষ্টা করেছি। যেখানে সবার বাংলদেশ, জুলাই বিপ্লব-২৪, আমাদের একতা, নতুন প্রজন্মের হাত ধরে নতুন বিচারব্যবস্থার সূর্যোদয় এবং কি আমাদের ক্যাম্পাস (জয় বাংলা ভাস্কর্য) কেউ ধারণ করার চেষ্টা করেছি। কোনো স্পন্সর না থাকায় কাজের জন্য মাচাটাও আমাদের বানাতে হয়েছে। ৩০/৩২ ফুট উঁচু মাচা বানাতে আমাদের সব থেকে বেশি কষ্ট করতে হয়েছে। বৃষ্টির বাধা ছিল। সব উপেক্ষা করে ৮/৯ দিনের প্রচেষ্টায় আলহামদুলিল্লাহ দেয়ালচিত্রটি আমরা শেষ করতে পেরেছি। আমার ব্যাচের (চারুকলা-১৬) নিরলস সাহায্য, চারুকলার সিনিয়র-জুনিয়র, নৃবিজ্ঞান-১৬ ও এর বাইরেও অনেকের সহযোগিতায় পেয়েছি। সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা প্রাথমিকভাবে তিনটি দেয়াল ঠিক করে যেখান থেকে একটা দেয়ালে দেয়ালচিত্র করতে পেরেছি। ভালো স্পন্সর বা পৃষ্ঠপোষক পেলে সামনে ক্যাম্পাসটা রঙিন করে তোলার ইচ্ছা আছে আমাদের।
"