অনিরুদ্ধ সাজ্জাদ, জাককানইবি
বন্যার্তদের পাশে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা, ফেনী, ও নোয়াখালী- তিন জেলার মানুষ বন্যার তাণ্ডবে বিপর্যস্ত। ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকেই আশ্রয়হীন। এমন সংকটকালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ত্রাণ সহায়তার মাধ্যমে তাদের এই উদ্যোগ বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
বন্যার খবর জানার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ক্রিয়াশীল সংগঠন এবং আঞ্চলিক ও আদিবাসী ছাত্র সংগঠনগুলো দ্রুত অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে মিলে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে অর্থ জোগাড় করেন। এই অর্থে কেনা হয় প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী, যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বাস ছুটে যায় বন্যাকবলিত এলাকায়। ত্রাণের ব্যাগে ছিল মুড়ি, চিড়া, গুড়, বিস্কুট, খেজুর, স্যালাইন, পানি, ন্যাপকিন, মোমবাতি, দিয়াশলাই এবং জরুরি ওষুধ। এ ছাড়া ছিল কাপড় ও মেডিকেল সাপোর্টের ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এই ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করে এবং বিতরণ করার জন্য বেরিয়ে পড়ে।
প্রথম ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস দুটি কুমিল্লা সেনানিবাসে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেয়। এরপর তারা নোয়াখালী ও ফেনীর পথে রওনা দেয়। সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। একদল স্বেচ্ছাসেবক নৌকায় করে ফেনীতে ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, সংকটের সময় সবাই মিলে একত্র হয়ে এই উদ্যোগ নিয়েছে। তারা বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করেছি। আমাদের চেষ্টা ছিল বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সাহায্য করা।’
শিক্ষকরাও ছিলেন এই উদ্যোগের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করা হয় এবং শিক্ষকরাও তাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করেন। এক শিক্ষক জানান, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই উদ্যোগ সম্ভব হতো না।’
ত্রাণ বিতরণের সময় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। এক শিক্ষার্থী জানান, ‘কিছু জায়গায় রাস্তায় নিরাপত্তার অভাব ছিল, তাই আমাদের যাত্রা মাঝেমধ্যে থামাতে হয়েছে। তবে আমাদের লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট। আমরা জানতাম, আমাদের কোথায় যেতে হবে এবং কী করতে হবে।’
জাককানইবির শিক্ষার্থীদের এই প্রচেষ্টা মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সংকটময় সময়ে তারা দেখিয়েছে, কীভাবে নিজেদের উদ্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের এই প্রচেষ্টা আমাদের সমাজকে মনে করিয়ে দেয়, একতাই শক্তি এবং বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার দায়িত্ব। এই উদ্যোগের মাধ্যমে জাককানইবির শিক্ষার্থীরা দেখিয়েছে, সংকট মোকাবিলায় তরুণদের অবদান কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তাদের উদ্যোগের প্রশংসা না করে পারা যায় না। আমরা আশা করি, তাদের এই উদ্যম সমাজের অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে এবং ভবিষ্যতে অনেক এমন উদ্যোগ দেখা যাবে।
"