‘বাড়ি না ফেরার শঙ্কা থেকে দেশ জয়’
দীর্ঘ সময় পড়ার টেবিল রেখে রাজপথে থেকেছেন শিক্ষার্থীরা। উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ার। সেই কারিগররা সফলতার একধাপ পেরিয়ে আবার ফিরছেন তাদের সুপরিচিত ক্যাম্পাসে। মেতে উঠছেন প্রিয় আড্ডায়। বহু তিতিক্ষার পরে গন্তব্যে ফিরে আসার সেসব গল্পই জানিয়েছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) শিক্ষার্থীরা। লিখেছেন সানজিদা জান্নাত পিংকি
কঠিন সময় শেষ হোক
কোটাবিরোধী আন্দোলন, ব্যাপারটা নিয়ে বলতে গেলে আমার মাথায় যে বিষয়টা শুরুতেই আসে তা হচ্ছে এই আন্দোলনের নির্মমতা। এত স্বল্প সময়ে পরিস্থিতি এমন বিভীষিকাময় রূপ নেবে তা বুঝে ওঠার আগেই ঘটে যায় এতসব। আমরাও দমে যাইনি। নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে ছিনিয়ে এনেছি স্বাধীনতা এবং আমাদের যৌক্তিক দাবি রূপ নিচ্ছে বাস্তবে। এ রকম একটা অনিশ্চিত সময় পেরিয়ে দেশের অবস্থা পরিবর্তনেও কাজ করে যাচ্ছে ছাত্ররা। ক্লিনিং, গ্রাফিতি এমন কি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করেছে তারা। কঠিন সময় দ্রুত শেষ হোক এই কামনা সবার। তবে আমরা অবশেষে ফিরেছি আমাদের বিশ্ববিদালয়ে। মাসখানেক পর অনিশ্চিত সময় পার করে আমরা আবার ক্লাস শুরু করতে সক্ষম হয়েছি। সেই পুরোনো করিডর, পরিচিত মুখ সব মিলিয়ে একটা শান্তি কাজ করছে।
নিশাত লুবনা মিতু
চতুর্থ সেমিস্টার
ফার্মেসি বিভাগ
অনিশ্চয়তার সময় পেরিয়েছি
এত বড় একটি সফল বিপ্লব/বিদ্রোহ শেষে আসলে আমাদের মতো ফাঁকিবাজ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ফিরে আসা আসলে কষ্টদায়ক আবার খানিকটা আনন্দদায়কও বটে। সেই জুলাইয়ের মাঝামাঝি দেশব্যাপী যে বিপ্লব শুরু হয়, তা সফল করতে আমাদের মতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। যোগাযোগের ব্যাঘাত, শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি নির্যাতন, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়াসহ নানা সমস্যা পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের। সারা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পর খুব অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলাম যে দেশ বাঁচবে নাকি মরবে! তখন একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করার
একমাত্র সম্বল ছিল ফোন কল। এসব উপেক্ষা করে
অভিনব উপায়ে আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলাম। অবশেষে অপেক্ষমান মুহূর্তে আসে, দেশ দ্বিতীয়বারের মতো
স্বাধীন হয়। তখন সারা দেশবাসীর সঙ্গে ওই মুহূর্তে উদযাপন করার পাশাপাশি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ দেশের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন ধরনের কর্মে লিপ্ত
থেকে আসলে ওই সময়টা খারাপ কাটেনি। অবশেষে
দীর্ঘ এক মাস পর পড়াশোনায় ফিরতে পেরে মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে।
কাজী আতাহার হোসেন
পঞ্চম সেমিস্টার
রসায়ন বিভাগ
সংগ্রামের উপসংহারে জয় ছিনিয়ে এনেছি
দুর্যোগের ঘনঘটা কাটিয়ে সুদিনের বার্তা নিয়ে বাংলার আকাশে উদিত হয়েছে নতুন সূর্য। আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন ফিরছে নতুন রূপে। অথচ মাসখানেক আগের চিত্রটা ছিল ভিন্ন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, পড়াশোনা, পরীক্ষা, আড্ডা- এসবের জলাঞ্জলি দিয়ে তথাকথিত অলস জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা নিজেদের দাবি এবং অধিকার আদায়ে জ্বলে উঠে ফুলকির মতো। সমাজের মানুষ কী ভাববে তার তোয়াক্কা না করে মেয়ে হয়েও নিজের মাতৃভূমি সংস্কারের সংগ্রামে নামি। শুরুতে আমরা ছিলাম ১১ জন, কিন্তু শেষটা হয় শতাধিক গবিয়ানদের নিয়ে। প্রতি মূহূর্তে মনে হতো আর বুঝি বাড়ি ফেরা হবে না। কিন্তু সংগ্রামের উপসংহারে আমরাই জয় ছিনিয়ে এনেছি। যুদ্ধ শেষে ফিরেছি ক্লাসরুমে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাহবা আর উষ্ণ ভালোবাসায় মনের গহিনে এক অদ্ভুত তৃপ্তি অনুভব হয়। ডা. জাফরুল্লাহ স্যারের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হয়ে, তার আদর্শ মেনে নিজেদের ন্যায্য দাবি আদায় করেছি। সংগ্রামে শহীদদের রক্ত আমাদের ব্যথিত করেছে। দেশকে নতুনভাবে স্বাধীন করার কথা ভেবে প্রফুল্লতাও কাজ করছে। নতুন স্বাধীন বাংলাকে সংস্কার এবং নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি করাই এখন লক্ষ্য।
আদিবা রহমান
তৃতীয় সেমিস্টার
ইংরেজি বিভাগ
উল্লাসে ভরে উঠবে সবার জীবন
ভয়ানক একসময় পেরিয়ে সাধারণ জীবনযাপনে ফিরতে চলেছি। সময়টা ভয়ানক বলছি কারণ প্রতিটি মুহূর্তে মনে হয়েছে আর বুঝি পরিবারের কাছে ফেরা হবে না। বীভৎসতা পেরিয়ে ফ্যাসিবাদ হটিয়ে; বিজয়োৎসব শেষে রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রত্যয়ে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে লম্ব^া সময় পথে-ঘাটে, বাজারে কেটেছে। রাজপথের শিক্ষা নিয়েই দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসে ফিরে, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা-আড্ডা ঘিরেই মন প্রফুল্ল হয়ে আছে। রাষ্ট্র গড়ার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিরাময় প্রয়োজন সেই নিরাময়ে আত্মনিয়োগের সময় এসেছে। হাতে-হাত রেখে প্রতিটি অবান্তকে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়ার মতো সৎ সাহস সঞ্চারই এখন সম্বল। এ ছাড়া পড়ার পরিবেশে ফিরে আসার মধ্যেও আনন্দ অনুভব করছি। আবারও শিক্ষকদের ক্লাস করতে পেরেছি, পরিচিত মুখ দেখছি। দুর্দিন পেরোলে আবারও মেতে উঠব গানের আড্ডায় কিংবা চায়ের কাপে। উল্লাসে ভরে উঠবে সবার জীবন।
মো. রাজিউল ইসলাম শান্ত
তৃতীয় সেমিস্টার
আইন বিভাগ
"