reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শিক্ষক রাজনীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা

৫ আগস্ট কোটা সংস্কার আন্দোলনের বড় ধাক্কা খেয়ে গদি থেকে পড়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ধাক্কার শুরুটা স্বাভাবিক থাকলেও শিক্ষার্থীদের মৃদু চাপ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। এই চাপে সঙ্গে সজোরে চাপ প্রয়োগ করে আমজনতা। তবে কিছু শিক্ষক ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষক সংগঠনের ভূমিকা নীরব লক্ষ করা যায়। এতে শিক্ষার্থীদের মনে শিক্ষকদের আস্থার জায়গায় অনেকটা কাদাপানি ওঠে। যৌক্তিক আন্দোলনে শিক্ষকদের সমর্থনসহ অভিভাবক হিসেবে তাদের অগ্রণী ভূমিকা কামনা করেছিল শিক্ষার্থীরা। তবে সেই ভূমিকা দাঁড়িপাল্লায় পরিমাপযোগ্য। যাই হোক, লেজুড়বৃত্তিক শিক্ষক রাজনীতি শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বরাবরই হরণ করে আসছে বলে শিক্ষার্থীরা মনে করেন। তবে বিপ্লবের মাধ্যমে শিক্ষক সংগঠনগুলোর সার্বিক আচরণ ও ব্যবস্থাপনার প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোভাব তুলে ধরছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সাকিব আসলাম

শিক্ষকদের দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে

‘শিক্ষা’ যদি একটা জাতির মেরুদণ্ড হয়, তাহলে একজন আদর্শবান শিক্ষক সেই জাতির স্নায়ুতন্ত্রস্বরূপ। স্নায়ুতন্ত্র যদি নির্দেশনা অনুযায়ী সঠিক সময়ে সঠিক অঙ্গে উদ্দীপনা প্রবাহিত না করে, তাহলে সে শরীরকে অসাড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তদ্রূপ একজন শিক্ষক যদি তার ছাত্রছাত্রীকে সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে নীতি-আদর্শবান সৎ ও যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে না-ই পারেন, তাহলে তার পেশাদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, সেটাই স্বাভাবিক।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে জঘন্যতম একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষক রাজনীতি। রাজনীতিকে জঘন্যতম বিষয় বলছি কারণ; ক্যাম্পাসে শিক্ষক রাজনীতি যে একেবারে ছিল না এমনটা না। শিক্ষক রাজনীতি সেই পাকিস্তান শাসন আমল থেকেই ছিল কিন্তু সেই ৫০-৬০-এর দশক কিংবা ৮০ দশকের শিক্ষক রাজনীতি আর এ সময়ের রাজনীতির নীতি-আদর্শ এক না। তখনকার শিক্ষক রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে। সেই স্বাধিকার আদায়ের রাজনীতি আজ রূপান্তরিত হয়েছে স্ব-অধিকার আদায়ের রাজনীতিতে ‘স্ব-অধিকার’ কেন বলছি?

লক্ষ করুন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যে শিক্ষক রাজনীতি হচ্ছে, সেগুলো দলীয় লেজুড়বৃত্তিক। এই দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে জড়িয়ে তারা জ্ঞান বিতরণের পরিবর্তে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষকের দায়িত্ব পালন না করে বেতন নেওয়া, নিয়োগবাণিজ্য, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকদের এহেন কর্মকাণ্ডের দরুন শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠন ঘাটতি থেকে শুরু করে সেশনজটের শিকার হচ্ছে। আমি এমনো জানি, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ডিপার্টমেন্টে (নাম না বলি) ৩০-এর অধিক শিক্ষক কিন্তু তাদের একেকটা সেশনের ৪ বছরের অনার্স শেষ হতে লেগে যায় ৬ থেকে ৭ বছর। ওই ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের কাছে সেশনজট সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা তাদের এরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে শিক্ষক রাজনীতিকে-ই দুষছেন। এ ছাড়া আরো শতসহস্র অভিযোগ রয়েছে শিক্ষক রাজনীতির পেছনে।

আমি একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের একমাত্র প্রধান এবং একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত তাদের অর্জিত জ্ঞানদান করা। যখন তারা তাদের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বে, ঠিক তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য ব্যাপকভাবে লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে। আর এর পেছনের খারাপ প্রভাব সরাসরি শিক্ষার্থীদের ওপর এসে পড়বে। ফলাফল একটা মেধাহীন সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত সমাজে আমরা রূপান্তরিত হব।

নীরব হোসেন লিখন

সমাজকল্যাণ বিভাগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

কুষ্টিয়া

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক রাজনীতি

ভয়ংকর

শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। সমাজের ভবিষ্যৎ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষকরা শুধু জ্ঞান বিতরণকারীই নন, তারা শিক্ষার্থীদের জীবনে নৈতিক মূল্যবোধ, দায়িত্ববোধ এবং নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে তুলতে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। তবে বর্তমানে শিক্ষকদের মধ্যে একটি প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে, যা শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে- তা হলো শিক্ষকদের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের রাজনীতি করা উচিত নয়, কারণ এটি শিক্ষার পরিবেশকে বিঘ্নিত করতে পারে। যখন শিক্ষকরা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন, তখন তারা নিজের অজান্তেই শিক্ষার পরিবেশকে কলুষিত করে ফেলেন। রাজনীতির কারণে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতভেদ এবং বিভাজন তৈরি হতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগ নষ্ট করতে পারে।

শিক্ষকরা রাজনীতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজেদের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব এবং অবিচারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একজন শিক্ষক যদি নিজ প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার করেন, তবে তা শিক্ষার্থীদের মাঝে ভ্রান্ত ধারণার জন্ম দিতে পারে। এমনকি, শিক্ষকরা নিজেদের মতাদর্শের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচার করতে পারেন বা কিছু শিক্ষার্থীকে বিশেষ সুবিধা দিতে পারেন। এ ধরনের আচরণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে।

শিক্ষকদের মূল দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের যথাযথ নৈতিক জ্ঞান প্রদান করা। কিন্তু রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লে শিক্ষকদের পেশাদারিত্বের মান কমে যেতে পারে। শিক্ষকরা যদি রাজনীতিতে সময় ব্যয় করেন, তাহলে শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের মনোযোগ কমে যায়। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছ থেকে শিখে এবং অনুপ্রাণিত হয়। যদি শিক্ষকরা রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত হন, সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা রাজনীতি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পেতে পারে এবং তাদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতাদর্শিক বিভাজন এবং শত্রুতা সৃষ্টি হতে পারে, যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে।

এ কারণে, শিক্ষকদের উচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি এড়িয়ে চলা এবং শিক্ষাদানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া। শিক্ষার্থীদের একটি সুন্দর এবং সমন্বিত শিক্ষার পরিবেশ প্রদান করতে হলে শিক্ষকদের অবশ্যই নিজেদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে হবে এবং রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে। রাজনীতি করতে হলে তা অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের বাইরে করা উচিত, যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারে।

শিক্ষকদের মনে রাখতে হবে, তাদের আসল দায়িত্ব হলো নতুন প্রজন্মকে সুদক্ষ এবং নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। রাজনীতির চেয়ে এ দায়িত্ব অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

তানভীর আহমেদ

ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া

শিক্ষক রাজনীতির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজকতা চাই না

শিক্ষক রাজনীতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষফোঁড়া বললেও কম বলা হয়। যেই শিক্ষকদের দায়িত্ব ক্লাস, ছাত্র এবং গবেষণায় নিজেকে নিযুক্ত করা শিক্ষক রাজনীতি তাদের বেশির ভাগ সময় ক্লাসের বাইরে থাকতে বাধ্য করছে।

মানসিকভাবেও ছাত্রদের মধ্য দলীয় বিভক্তি কিংবা ভিন্ন মতাদর্শের ছাত্রকে হেনস্তা করা সবই শিক্ষক রাজনীতির অবদান।

শিক্ষক শিক্ষকে বিবাদ কিংবা হিংসা ছড়ানো ছাড়াও শিক্ষক রাজনীতি পুরোব্যবস্থাকে একটা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে। তেমনি একজন দায়িত্বজ্ঞানহীন অযোগ্য শিক্ষককেও সমান আশ্রয় প্রদান করে এই শিক্ষক রাজনীতি। দিনশেষে ভুক্তভোগী হয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সবার কল্যাণের জন্য, এমনকি শিক্ষাঙ্গনে সুস্থ, সাবলীল গবেষণা কিংবা পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক রাজনীতি বাতিলের বিকল্প নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধর্মের, বর্ণের, মতবিশ্বাসের ছাত্র, শিক্ষক আছেন। সবার যার যার মতামতের স্বাধীনতা থাকা উচিত। এজন্যই রাজনীতি কখনোই কাম্য নয়। বিগত বছরগুলোয় আমরা দেখেছি কারো বাকস্বাধীনতা ছিল না। আমি চাই না রাজনীতির দোহাই দিয়ে আবার ক্যাম্পাস অরাজকতার মুখ পতিত হোক।

ইয়ারবি আঁখি

উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close