ইসরাত জাহান, বাকৃবি
উদ্ভাবন উন্মোচনে সগৌরবে যাপিত বাকৃবির ৬৩ বছর
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদ এবং কৃষির টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৬১ সালের ১৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। তৎকালীন ‘পূর্ব পাকিস্তান বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৬১’-এর প্রেক্ষিতে ১৯৫৯ সালে জাতীয় শিক্ষা কমিশন এবং খাদ্য ও কৃষি কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। ওই সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৬১ সালে প্রায় ১২০০ একর জায়গা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় বাকৃবির। সূচনালগ্নে বাকৃবির নেতৃত্বের হাল ধরেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এম ওসমান গণি। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও দেশের ঘুরে দাঁড়ানোর একমাত্র হাতিয়ার ছিল কৃষি। তাই কৃষিকে স্বপ্ন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছুটে এসেছিলেন কৃষি শিক্ষার এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে। দেশের মানুষের মুখে অন্ন জোটাতে দেশ যাতে স্বনির্ভর হয় সে স্বপ্নের বীজই বপন করে দিয়েছিলেন তিনি কৃষিবিদদের মধ্যে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সরকারি চাকরিতে কৃষিবিদের মর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার ঘোষণা দেন তিনি। এরপর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকম-লী এবং গবেষকরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে নিরলস কাজ করে গেছেন। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
কৃষিশিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসা এ প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই দেশ-বিদেশে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে। অনেকেই এখন বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গবেষণার আঁতুড়ঘর হিসেবে জানেন। এ বছর ১৮ আগস্ট বাংলাশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তার গৌরবের ৬৩ বছর পূর্ণ করে ৬৪ বছরে পা রেখেছে। দীর্ঘ ৬৩ বছরের পথ চলায় প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে নানা উদ্ভাবন, উন্মোচন ও সফলতার গল্প।
বাকৃবির বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম ও সাফল্য
জলবায়ু ও প্রতিকূলতাসহিষ্ণু ও উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন : বিভিন্ন সময়ে জলবায়ু ও বিভিন্ন প্রতিকূলতাসহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভবন করেছেন বাকৃবির গবেষকদল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- লবণাক্ততা সহিষ্ণু ৩টি সরিষার জাত (বাউ সরিষা-১, বাউ সরিষা-২ ও বাউ সরিষা-৩), বন্যা ও লবণাক্ততাসহিষ্ণু সরিষার জাত বাউ সরিষা-৯, ছত্রাকজনিত অলটারনারিয়া ব্লাইট ৯৯ শতাংশ প্রতিরোধী ও অতিরিক্ত আর্দ্রতাসহিষ্ণু ৫টি সরিষার জাত (বাউ সরিষা-৪, বাউ সরিষা-৫, বাউ সরিষা-৬, বাউ সরিষা-৭ এবং বাউ সরিষা-৮), লবণাক্ততা ও জলমগ্নতাসহিষ্ণু ধানের জীবন রহস্য উন্মোচন, ব্লাস্ট প্রতিরোধক ও ঠান্ডা সহনশীল বাউ ধান-৩, উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতিকূলতাসহিষ্ণু মুগডাল, খরা সহনশীল বাউ ধান-১ ও বাউ ধান-২, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও রোগ প্রতিরোধী মিষ্টি আলুর তিনটি জাত (বাউ মিষ্টি আলু-৪, বাউ মিষ্টি আলু-৫, বাউ মিষ্টি আলু-৬) এবং ব্লাস্ট প্রতিরোধী গমের জাত। বাকৃবি উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল শস্যের জাতের মধ্যে অন্যতম হলো- কমলা সুন্দরী ও তৃপ্তি নামে দুটি আলুর জাত; লতিরাজ, বিলাসী ও দৌলতপুরী নামে তিনটি মুখীকচু জাত; ডেভিস, ব্র্যাগ, সোহাগ, জি-২ ও বিএস-৪ নামে ৫টি সয়াবিন জাত; ধানের জাত বাউ-৬৩; জনপ্রিয় বাউকুল; চারটি সরিষার জাত (বাউ-এম/৩৯৫, বাউ-এম/৩৯৬, সম্পন্ন, সম্বল)।
বর্তমানে, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবসহিষ্ণু ধান, ভুট্টা ও টমেটোর নতুন জাত উদ্ভাবনে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে অত্যাধুনিক গ্রিনহাউস। এর মাধ্যমে পরিবেশের তাপমাত্রা, আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য, লবণাক্ততা, আর্দ্রতা ইত্যাদির মাত্রা সার্বক্ষণিক পরিমাপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় রাখা যাবে। বিভিন্ন ফসলের ওপর ওইসব উপাদানগুলোর প্রভাব বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করে বছরব্যাপী যেকোনো ফসলের উৎপাদন অব্যাহত রাখার প্রত্যাশায় কাজ করছেন বাকৃবি গবেষক দল।
প্রাণিসম্পদ ও পোল্ট্রি গবেষণা : গবাদি পশু ও পোলট্রির বিভিন্ন সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন ও বিভিন্ন চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন বাকৃবি গবেষকরা, যা দেশের প্রাণিসম্পদ সুরক্ষায় বিশাল অবদান রেখেছে। এ পর্যন্ত ছাগল ও ভেড়ার পিপিআর ভ্যাকসিন, ব্রুসেলোসিসের ‘হিট ফিল্ড ভ্যাকসিন’, মোরগ-মুরগির রানীক্ষেত রোগ ও ফাউলপক্সের প্রতিষেধক টিকার উপাদান, হাঁসের প্লেগ রোগের ভ্যাকসিন, হাঁস-মুরগির ফাউল কলেরার ভ্যাকসিন, সালমোনেলা ভাইভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন, বিসিআরডিভি ভ্যাকসিন, আরডিভি ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেছেন বাকৃবি গবেষকরা। এ ছাড়া ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জীবনরহস্য উন্মোচন, একটি গাভীর গর্ভে একাধিক ভ্রূণ উৎপাদন করে তা সংরক্ষণ এবং পরে একাধিক গাভীর গর্ভে সেগুলো প্রতিস্থাপন করে একাধিক বাচ্চা উৎপাদন, ছাগল ও মহিষের কৃত্রিম প্রজনন, হিমায়িত ভ্রূণ সংরক্ষণ করে ভেড়ার কৃত্রিম প্রজনন, কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহৃত ষাঁড়ের আগাম পরিপক্বতা নির্ণয়ের কৌশল, গাভীর উলানপ্রদাহ রোগ প্রতিরোধ, ওমেগা-৩ সম্পন্ন মুরগি ও ডিম উৎপাদন, মুরগির হিট স্ট্রেস কমাতে আমলকির ব্যবহার, বাউ ব্রো-হোয়াইট নামের ব্রয়লার মুরগির জাত উদ্ভাবন, রেড চিটাগাং জাতের গরু সংরক্ষণ, ভেড়ার মাংসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বাড়ানো ও ৫ থেকে ৭ শতাংশ বেশি শারীরিক বৃদ্ধিসহ নানা গবেষণার মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ ও পোলট্রি উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছেন বাকৃবি গবেষক দল।
মৎস্য গবেষণা : মোনোসেক্স তেলাপিয়া চাষের প্রযুক্তি উদ্ভাবন থেকে শুরু করে ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচন, পাঙাশ মাছের নতুন চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন, দেশি শিং ও মাগুর মাছের কৃত্রিম প্রজনন কলাকৌশল, ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি, বাইম ও বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি, দেশীয় পাঙাশের কৃত্রিম প্রজনন, মাছের রোগ প্রতিরোধে ভেষজ প্রতিষেধক ব্যবহার, মাছের বংশ পরিক্রম নির্ণয়ে আনবিক পদ্ধতির ব্যবহার, ধানের জমিতে চিংড়ি চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবনসহ মৎস্য সম্পদের টেকসই উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছেন বাকৃবির গবেষকরা। এ ছাড়া মাছের শুক্রাণু শত বছর সংরক্ষণের প্রযুক্তি, কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি, লোনা পানির মাছকে স্বাদু পানিতে চাষের পদ্ধতি, রুই, কাতলা, মৃগেলসহ বিপন্ন প্রজাতির মাছ মহাশোল, বাঘাইর ও তারাবাইম মাছের কৃত্রিম প্রজননসহ দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় মাছের সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন বাকৃবি গবেষকরা। এ ছাড়া, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশীয় শিং মাছের জীবনরহস্য উন্মোচন করে পুরুষ ও স্ত্রী শিং মাছ নির্ধারণকারী জিন শনাক্তকরণ এবং মাছের ত্বক থেকে জেলাটিন উদ্ভাবন করেছেন বাকৃবির গবেষক দল।
অপ্রচলিত উদ্ভিদ ও থেকে পণ্য উদ্ভাবন : চালের ওপর নির্ভরতা কমাতে অপ্রচলিত উদ্ভিদ কাসাভা (দেশীয়ভাবে শিমুল আলু হিসেবে পরিচিত) থেকে ১৩ পদের মুখরোচক খাবার এবং পুষ্টিসম্পন্ন গো-খাদ্য তৈরি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক। এ ছাড়া সম্ভাবনাময় ঔষধি গুণসম্পন্ন আরেকটি উদ্ভিদ রোজেলের (দেশীয়ভাবে চুকাই বা চুকুর নামে পরিচিত) বৃতির অংশ প্রক্রিয়াজাত করে জ্যাম, জেলি, পুডিং, চাটনি, আচার, চকলেট, চা, জুসসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাদ্য ও পানীয় উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেন বাকৃবি গবেষকরা।
অপ্রচলিত ডালজাতীয় উদ্ভিদ অড়হরের শুকনো বীজ থেকে অড়হর-রুটি, অড়হর-পুরি, অড়হর-সিঙ্গারা, সেদ্ধ কাঁচা বীজের পেস্ট দিয়ে অড়হর-হালুয়া ও অড়হর-কাবাব, অড়হর বীজ ভাজা এবং কাঁচা বীজের সবজি তৈরির কৌশল উদ্ভাবন করেছেন বাকৃবি গবেষকরা।
বিভিন্ন মাছের মূল্যসংযোজিত পণ্য উদ্ভাবন : আঁশটে গন্ধের কারণে অনেকেই মাছ খেতে চান না। তাই মাছের পুষ্টি ভিন্ন ভিন্ন রূপে সবার কাছে পৌঁছে দিতে গুণগত মান নির্ণয় করে ফিস বার্গার, ফিস বল, ফিস ফিংগারের মতো জনপ্রিয় খাবার উদ্ভাবন করেছেন বাকৃবি গবেষকরা। মৌসুম ছাড়াও সারা বছর ইলিশের পুষ্টি পেতে ইলিশের স্যুপ ও নুডলস উদ্ভাবন করেছেন গবেষক দল। এছাড়াল সিলাভার কার্পের স্যুপ ও নুডলস, পাঙাশের আচার, জ্যাম, জেলি ও পাউডারসহ মুখরোচক ১১টি মূল্য সংযোজিত পণ্য উদ্ভাবন করা হয়েছে। বাচ্চাদের মাঝে ছোট মাছের পুষ্টি পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাকৃবি গবেষকরা উদ্ভাবন করেছেন কাচকি মাছের চানাচুর। সম্প্রতি সামুদ্রিক শৈবালের নির্যাস ব্যবহার করে ক্যান্ডি ও সাবান উদ্ভাবন করেছেন বাকৃবি গবেষক।
অর্থনীতির মাঠে টেকসই কৃষি : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্বব্যিালয়ের গবেষণায় কৃষি অর্থনীতিতে টেকসই উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর বিস্তারিত গবেষণা করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে করা এই গবেষণা কার্যক্রমগুলোর মধ্যে টেকসই শস্য বীমা কার্যক্রম, শস্যের বহুমুখীকরণ এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন অন্যতম। এছাড়াও পশুসম্পদ ও ডেইরি উৎপাদনের উন্নয়ন, মুক্ত জলাশয়ে মাছ চাষের জন্য প্রতিষ্ঠানিক ঋণ সহায়তা প্রদান এবং পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের সমবায় সংগঠনকে সুসংহত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী সুপারিশ প্রদানেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। কৃষি অর্থনীতিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা এবং শস্য, মৎস্য, পোলট্রি ও ডেইরি বিভাগে ভ্যালু-চেইন বিশ্লেষণ কার্যক্রম একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। কৃষির সব বিভাগে অর্থনীতি ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের কৃষি খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বাকৃবি গবেষকরা।
কৃষিপ্রযুক্তি উদ্ভাবন : বাকৃবি কৃষিক্ষেত্রে নানা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে দেশের কৃষকদের উন্নত প্রযুক্তির সুবিধা প্রদান করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিগুলো হলো- ধান শুকানোর যন্ত্র বিএইউ এসটিআর ড্রায়ার, সোলার ড্রায়ার, হাইব্রিড ড্রায়ার, বাকৃবি গবেষকের নিজস্ব নকশাকৃত জিরো টিলার মেশিন, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো উদ্ভাবিত স্বয়ংক্রিয় আলু বাছাই যন্ত্র, স্বয়ংক্রিয় আগাছা ও কীট শনাক্তকর ও দমন যন্ত্র, রাইজোবিয়াল জৈব সার উৎপাদন প্রযুক্তি, সয়েল টেস্টিং কিট, সৌরতাপের সাহায্যে পাট ও ধান বীজের ফাংগাস আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি, অ্যারোবিক (স্বল্প পানি) পদ্ধতিতে ধান চাষ প্রযুক্তি। বাকৃবি গবেষক উদ্ভাবিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কৃষি প্রযুক্তিগুলো হলো- স্বল্পব্যয়ে সেচ নালা তৈরি, উন্নত ধরনের লাঙল ও স্প্রে মেশিন তৈরি, বাউ-জিয়া সার ও বীজ ছিটানো যন্ত্র, বিএইউ রিসার্কুলেটিং প্যাডি ড্রায়ার, সিঙ্গেল শেড সার্ভিস পয়েন্ট মডেল, বায়োগ্যাস প্লান্ট উদ্ভাবন, আইওটি (ইন্টারনেট অফ থিংস)-ভিত্তিক সেচ পদ্ধতি, পশুখাদ্য কর্তন যন্ত্র, ধান ও গমের ভুষির বিশেষ ব্যবহার কৌশল, স্বল্পব্যয়ে ধান কাটার যন্ত্র ইত্যাদি।
বাংলাশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস) : স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি এই দুই পর্যায়ে মূলত গবেষণা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশি এবং বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার অর্থায়নে কোনো সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রকল্পভিত্তিক গবেষণাও পরিচালিত হয়। গবেষণা প্রকল্পগুলোর সুষ্ঠু সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস)। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাকৃবির গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় প্রধান ভূমিকা পালন করে আসছে বাউরেস। এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৪৫টি গবেষণা প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করেছে বাউরেস। বর্তমানে ৬১৫টি প্রকল্প চলমান। গবেষণা কাজে শিক্ষকদের অনুপ্রাণিত করতে প্রতি বছর ‘বার্ষিক গবেষণা অগ্রগতি কর্মশালা’ আয়োজন করে বাউরেস। কর্মশালায় গবেষণার ভিত্তিতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা গবেষদের সম্মাননা দেওয়া হয়। পাশাপাশি দেশব্যাপী কৃষিতে সেরা অবদানকারীদের অনুপ্রাণিত করতে প্রফেসর ড. আশরাফ আলী খান স্মৃতি কৃষি পুরস্কার দেওয়া হয়। বাউরেসের মাধ্যমে বাকৃবি দেশে কৃষি উন্নয়নের অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও র্যাংকিং : টাইমস হায়ার এডুকেশন, কিউএস ও সাংহাই র্যাংকিং- এই তিনটি র্যাংকিংয়ের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বিশ্বব্যাপী। এই তিনটি র্যাংকিংয়েই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করেছে বাকৃবি। টাইমস হায়ার এডুকেশন র্যাংকিংয়ের (টিএইচই) এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (আঞ্চলিক) র্যাংকিং-২০২৪-এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৩৫১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে। এ র্যাংকিংয়ে ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ৪০১ থেকে ৫০০ এর মধ্যে। ২০২৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাপ্ত স্কোর ৩১ দশমিক ৮, যা ২০২৩ সালে ছিল ২৪। অবস্থান ও স্কোর দুই ক্ষেত্রেই অনেক এগিয়েছে বাকৃবি। ২০২২ সাল থেকে টিএইচই র্যাংকিংয়ে তালিকাভুক্ত হয়ে প্রতি বছরই আঞ্চলিক পর্যায়ের র্যাংকিংয়ে স্কোর বৃদ্ধি করে এগিয়েছে বাকৃবি। ২০২২ সালে প্রকাশিত ‘সাংহাই র্যাংকিং’র ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগে বাকৃবি প্রথমবারের মতো বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সেরা ৩০০-এর মধ্যে স্থান লাভ করে। ‘আলপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্স’-এর ২০২৪ সালের তালিকায় বাকৃবির ৩৯২ জন গবেষক বিশ্বসেরা গবেষকরে তালিকায় স্থান পেয়েছেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) র্যাংকিংয়ে লাইফ সায়েন্স অ্যান্ড মেডিসিন ক্যাটাগরিতে এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফরেস্ট্রি বিষয়ে বাকৃবি বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৩৫১ থেকে ৪০০ অবস্থানে রয়েছে, যেখানে দেশের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায়নি।
"