মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর, বাকৃবি
অনন্য উদ্যোগে বন্যার্তদের পাশে বাকৃবি
নতুনের বাংলাদেশ, তারুণ্যের বাংলাদেশ। ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সব বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার পথে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তারা। আবারও তারা প্রমাণ করল সাম্প্রতিক বন্যায়। ভয়াবহ বন্যায় যখন নিমজ্জিত দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চল, তখন উদ্ধারকাজে, ত্রাণ বিতরণে ঝাঁপিয়ে পড়েছে দেশের তরুণসমাজ। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরাও। নিরলসভাবে গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি পরিচালনা করছেন তারা। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা নিজেদের এক মাসের উপবৃত্তির টাকা ত্রাণ হিসেবে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। শুধু ত্রাণ সংগ্রহ নয়, বন্যা-পরবর্তী খাদ্যসংকট মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাহায্য করার জন্য বিনামূল্যে ‘নাবি আমন’ ধানের চারা বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ক্যানটিনে গণত্রাণ সংগ্রহ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কে. আর. মার্কেটেও গণত্রাণ সংগ্রহের জন্য বুথ স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাসায় বাসায় গিয়ে নগদ অর্থ, কাপড়, শুকনা খাবার এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সংগ্রহ করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ডাকে সাড়া দিয়ে বন্যার্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের অঞ্চলের বাসিন্দারাও। মাত্র তিন দিনেই তিন লাখের বেশি নগদ টাকা জমা হয়েছে বন্যার্তদের ত্রাণ তহবিলে। ত্রাণ হিসেবে আসা কাপড়গুলো থেকে শিশু, নারী এবং পুরুষদের কাপড়গুলো বাছাই করে আলাদাভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে। নিজ উদ্যোগে শিক্ষার্থীরা সাধ্যমতো কাজ করছে, কেউ করছে অর্থ সংগ্রহ, কেউ ত্রাণ হিসেবে শুকনো খাবার কিনছে, কেউ করছে প্যাকিং। ইতিমধ্যে দুটো প্রতিনিধিদল পৌঁছে গেছে ফেনীতে।
ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর খান বলেন, শিক্ষার্থীরা সারা দিন বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করছেন। তাদের এ মহতী উদ্যোগকে শিক্ষকরা সাধুবাদ জানাচ্ছেন। আমি দেশের বিত্তবান এবং অন্য শ্রেণির মানুষদের আহ্বান জানাচ্ছি, যেন তারা যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ান। আমরা সবাই মিলে যেন এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারি এবং একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে পারি।
বন্যার ক্ষতি মোকাবিলার পরিকল্পনায়ও এগিয়ে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা। নাবি আমন ধানের চারা বিতরণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই বীজতলা তৈরির জন্য বাকৃবি, নোয়াখালী এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ৬ একর জমি সংগ্রহ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বীজ বপনের জন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) থেকে ১ টন, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখা থেকে ১৫০ কেজি এবং বায়ার ক্রপ সায়েন্স কোম্পানির জামালপুর শাখা থেকে ৫০০ কেজি বিনা ধান-১৭-এর বীজ সংগ্রহ করেছেন তারা। এখন জমি তৈরির কাজ শেষে শিগগিরই বীজ বপন করা হবে।
বাকৃবির কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম আরিফ হাসান খান রবিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগ বন্যা-পরবর্তী দেশের খাদ্যসংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আমরা শিক্ষকরা এই মহৎ উদ্যোগে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এই প্রক্রিয়ায় বেশি সিড এবং বেশি জমির প্রয়োজন। চারা প্রস্তুত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১ একর জমি নেওয়ার ব্যবস্থা করব। এখন যেহেতু আমন মৌসুম চলছে। বন্যা-পরবর্তী সময়ে ব্রি-৫২, ব্রি-৭১, ব্রি-৭৫, এবং বিনা ১৬, বিনা ১৭ ধানের জাতগুলো বন্যা এলাকার জন্য উপযুক্ত হবে। ব্রি-৫২ জাতের ধান পানির নিচে ১৫ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। এ ছাড়া বিআর-২৩, ব্রি-৩৪, ব্রি-৪৬, ব্রি-৪৯ জাতের ধানগুলো সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে নতুন করে বীজ থেকে চারা উৎপাদন করতে ২০-৩০ দিন সময় লাগবে। বন্যাদুর্গত এলাকায় পানি নেমে যাওয়ার পরপরই যেন চারা রোপণ করা যায়, সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমানে ময়মনসিংহ বা তার আশপাশের এলাকায় বিপুল পরিমাণে ধানের চারা আছে। যেসব এলাকার জমিতে ধানের চারা রোপণ করার পরও অতিরিক্ত চারাগাছ পড়ে আছে, সেগুলো দ্রুততার সঙ্গে সংগ্রহ করতে হবে। যেন বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই বন্যাদুর্গত এলাকায় ধানের চারা রোপণ করা সম্ভব হয়।
তারুণ্যের এই সাহসী, উদ্যমী কার্যক্রমে এগিয়ে যাক, আমাদের প্রিয় দেশ, গড়ে উঠুক নৈতিক ও মানবিক সোনার দেশ।
"