আতিকুর রহমান, ইবি
আলোকবালী ইউনিয়ন ব্লাড ডোনার ক্লাব
‘এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য
বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,
প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।’
সুকান্ত ভট্টাচার্য্যরে আঠারো বছর কবিতায় যুবক শ্রেণির নানা গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হলো এই বয়সি ছেলেরা রক্তদানের পূণ্য সম্পর্কে অবগত আছে।
আলোকবালী ইউনিয়ন। মেঘনার মাঝে জেগে ওঠা এক টুকরো দ্বীপ। নরসিংদী শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। যোগাযোগের ক্ষেত্রে সাধারণত নৌকা ব্যবহার করা হয়, তবে জরুরি প্রয়োজনে স্পিডবোটও ব্যবহার করা হয়।
দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় স্বাস্থ্যসচেতনতা সম্পর্কে সঠিক ও পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকাই স্বাভাবিক। দীর্ঘ একটা সময় ধরে ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে এই কুসংস্কার প্রচলিত ছিল যে, রক্তদান করলে অসুস্থ হয়ে যায়, রক্তশূন্যতা তৈরি হয়, এমন অনেক কুসংস্কার। ফলে রক্তের প্রয়োজন হলে রক্তদাতা খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হতো।
২০১৮ সালের পরবর্তী সময়টা আলোকবালী ইউনিয়নে রক্তদান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির সময়। এর মূল কারিগর হিসেবে সালাহ উদ্দিন, রাকিব গাজী, আহমেদ, সুমন, রবিউল্লাহ ও সাদেকসহ অন্য যুবকদের নাম উল্লেখ করা যায়।
তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে রক্তদান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিজেরা রক্তদান করার মাধ্যমে মানুষদের উৎসাহিত করছিল।
রক্তদানের কার্যক্রম ইউনিয়নব্যাপী বিস্তৃত করার জন্য তাদের যৌথ উদ্যোগে আলোকবালী ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আলোকবালী ইউনিয়ন ব্লাড ডোনার ক্লাব’।
করোনাকালীন সময়ে আলোকবালী ইউনিয়ন ব্লাড ডোনার ক্লাব নরসিংদী, ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, নবীনগরসহ আশপাশের মানুষের রক্ত, করোনা রোগীর প্লাজমা, প্লাটিনাম সংগ্রহ করে সুনাম কুড়িয়েছে।
ব্লাড ডোনার ক্লাবের সভাপতি সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনার সময়ে যখন মানুষ ঘরবন্দি আর ওইসময়ে হাসপাতালে করোনা রোগীদের রক্ত, প্লাজমা, প্লাটিনাম প্রয়োজন পড়ছিল তখনই ব্লাড ডোনার ক্লাবের যাত্রা। করোনায় মানুষের সেবা করার মাধ্যমে আমরা মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। ব্লাড ডোনার ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাকিব গাজী বলেন, আলোকবালী ইউনিয়ন ব্লাড ডোনারের কাজ মানুষের প্রয়োজনে রক্ত সরবরাহ করা এবং রক্তদান সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। ইতিমধ্যে আমরা ইউনিয়নব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একাধিক ব্লাড গ্রুপ নির্ণয় ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করেছি।
আলোকবালী ইউনিয়ন ব্লাড ডোনার ক্লাব যদিও করোনাকালীন সময়ে করোনা রোগীদের রক্ত, প্লাজমা ও প্লাটিনাম সরবরাহের জন্য তৈরি হয়েছিল কিন্তু বর্তমানে ক্লাবটি একটি সর্বজনীন সামাজিক সংগঠনে রূপান্তরিত হয়েছে। ইউনিয়নব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্যাম্পেইন কার্যক্রম, সংগঠনের সদস্যদের মাঝে উদ্দীপনা তৈরি করতে নৌকা ভ্রমণ, সমাজের গরিব মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রম বর্তমানে সংগঠনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে সংগঠনটি মানুষের কাছে আস্থার জায়গায় পরিণত হয়েছে।
"