‘স্বপ্নগুলো নিছক টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেল!’
অবকাঠামোর ধোঁয়াশা, সঙ্গে অস্থিমজ্জায় দূর্নীতি, খুবলে খাচ্ছে দেশের সার্বিক অবস্থা। সাম্প্রতিককালে অভিযোগ উঠেছে পিএসসির প্রশ্ন ফাঁসের। নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগ্যতাসহ বাকিদের ওপর এসেছে আপামর অনাস্থ। সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর এহেন কর্মকান্ড বিমূঢ় করছে সবাইকে, ভাবিয়ে তুলেছে খোদ শিক্ষার্থীদেরই। তাদের মতামত তুলে ধরেছেন সানজিদা জান্নাত পিংকি
‘বিসিএস’ ছিল ভরসার নাম
বাংলাদেশের তরুণদের কাছে এত দিন পর্যন্ত সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে একটি ভরসার নাম ছিল পিএসসি পরিচালিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষা তথা ‘বিসিএস’। লাখো তরুণ বছরের পর বছর প্রস্তুতি নিয়ে এ পরীক্ষায় অংশ নিলেও সাম্প্রতিক প্রশ্ন ফাঁস-কান্ডের পর তারা তাদের শ্রম ও মেধা হয়তো বাংলাদেশের প্রশাসনিক সেক্টরে আর বিনিয়োগ করতে চাইবে না। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিকট ভবিষ্যতে সুদক্ষ আমলা ও কর্মকর্তা সংকটে পড়তে পারে। সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে পিএসসির প্রতি তরুণদের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা। বর্তমানে যেসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং পরবর্তী পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও বিতরণের সময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বজায় রাখা। বাংলাদেশ কর্মকমিশনের অভ্যন্তরীণ সব অর্থনৈতিক কাজে স্বচ্ছতা বজায় রাখা সময়ের দাবি। তবেই হয়তো দেশের তরুণরা বাংলাদেশে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তাদের ভরসা ফিরে পাবে।
রেদোয়ান আহমেদ
দর্শন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
‘তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন নিয়ে প্রতারণা’
বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (বিপিএসসি) দীর্ঘদিন ধরে দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে পিএসসির অধীনে বিসিএস ক্যাডার এবং নন-ক্যাডারের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে। পিএসসির মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে এমন প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা যেন তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন নিয়ে প্রতারণা। বিসিএস একটি পরীক্ষা নয়, এটি লাখো মেধাবী তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন। যা তারা নিজেদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জন করতে চায়। সাম্প্রতিক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে। যারা তাদের স্বপ্ন পূরণের আশায় বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেন, তাদের জন্য এ ধরনের ঘটনা হতাশাজনক। সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যাতে পিএসসির প্রতি আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য দেশের মেধাবীদের জন্য নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছ নিয়োগ নিশ্চিত করে, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে শক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতেই হবে। প্রমাণসাপেক্ষে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের দ্রুত শাস্তির আওতায় নেওয়া উচিত। তরুণদের স্বপ্নপূরণের জন্য প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম নির্মূল জরুরি।
জেসিকা শেখ জেবা
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়
‘যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ নিশ্চিত হবে’
পিএসসির প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তরুণ চাকরিপ্রার্থীর মনে হতাশার ঝড় তুলেছে। সাধারণের বিশ্বাস, পাবলিক পরীক্ষায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ নিশ্চিত হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনা সেই বিশ্বাসকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে শুধু পিএসসির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্বপ্নের চাকরিতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার আশায়। কিন্তু প্রশ্ন ফাঁসের মতো অনৈতিক কাজ সেই স্বপ্নের পথে একটি বড় বাধা সৃষ্টি করেছে। মনে হচ্ছে, এখন যোগ্যতার চেয়ে অনৈতিক পথে সুযোগ নেওয়ার প্রবণতাই জয়ী হবে। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। একই সাঙ্গে পিএসসিকে স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে এই গুরুতর বিষয়ের সমাধান করে মেধাবীদের নিয়োগ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এভাবেই পিএসসির মর্যাদা রক্ষা হবে এবং চাকরিপ্রার্থীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে। মেধা ও পরিশ্রমের মূল্য অস্বীকার করে অনৈতিক পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কখনোই সফল হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে দরকার ন্যায়সংগত সমাধান।
মো. রাকিবুল হাসান নিরব
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
‘ভবিষ্যৎ এখন দায়িত্বশীলদের হাতে মুষ্টিবদ্ধ’
বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিশ্চিত ভবিষ্যৎ প্রয়োজন। আর বেশির ভাগ শিক্ষার্থী অনার্সে ভর্তি হয়েই নিশ্চিত ভবিষ্যতের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেন বিসিএস নামক সোনার হরিণের জন্য। প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভিড়ে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। ৪/৫ বার করে পরীক্ষা দিতে দিতে, তবুও কোনো ভালো সংবাদ আসে না। তারপরও আমরা হাল ছেড়ে দিই না। কারণ এত প্রশ্ন ফাঁসের ভিড়ে নিশ্চিত থাকি যে পিএসসিতে অন্তত এমন কিছু হবে না। এখানে মেধার মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে এটাও সম্ভব। হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন একটি সংবাদেই ধূলিসাৎ। মেধা দিয়ে যুদ্ধ করেই পূরণ করব মা-বাবার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নগুলো নিছক টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেল! প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় অনেকেই অবাক হইনি। দুর্নীতির খবর দেখেশুনে সরকারি চাকরি না করাই অনেক তরুণের জেদ। মধ্যম আয়ের, দীর্ঘ সময়ের বাছাই প্রক্রিয়ায় অনেকেই যুক্ত হতে অনাগ্রহী। পাশাপাশি এখন যুক্ত হলো প্রশ্ন ফাঁস। তাহলে বলা যায়, তরুণদের ভবিষ্যৎ এখন কয়েকজন মানুষের হাতে মুষ্টিবদ্ধ। তরুণদের হতাশ হয়ে আত্মহত্যার জন্য কারা দায়ী? কোটা নেই, টাকা নেই, আছে পরিশ্রম আর মেধা। নেই মূল্যায়ন। তাহলে কোথায় আমাদের ভবিষ্যৎ?
আলিফা ইয়াসমিন
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
"