এস এম তাওহীদ
বর্ণিল উৎসবে বন্ধুত্বের বর্ষপূর্তি
২৩ মে ২০২২। পঞ্জিকার পাতায় দিনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন না করলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের কাছে এ দিন নতুন এক পথচলার নাম। এ দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ আঙিনায় বন্ধুত্ব আর ভালোবাসায় যাত্রা শুরু করে একঝাঁক নবীন শিক্ষার্থী। ভর্তির পরও দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ক্লাস শুরু হচ্ছিল না। স্বপ্নের ক্যাম্পাসে আসার অপেক্ষা আরো দীর্ঘায়িত হয় যখন ঘোষণা আসে অনলাইন ক্লাসের। দুই মাস অপেক্ষার পর ২৩ মে সশরীরে ক্লাস শুরুর ঘোষণা আসে। দুচোখে স্বপ্ন আর বুক ভরা আশা নিয়ে ক্যাম্পাসে আগমন ঘটে স্বপ্নবাজ শিক্ষার্থীদের।
ক্যাম্পাসে আসার পর নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় হতে থাকে, বাড়তে থাকে বন্ধুত্বের পরিসর। পরিবারের অনুপস্থিতিতে বন্ধুরাই যেন হয়ে ওঠে আপনজন। একে অপরের হাসি-কান্না, সাফল্য-ব্যর্থতার অংশীদার হতে থাকে সবাই। একসঙ্গে বসে জীবনের বাঁকে বাঁকে নানা গল্প শোনার এমন সুযোগ আর কোথায় পাওয়া যায়! জাহাঙ্গীরনগর এ জায়গায় তার স্বাতন্ত্র্য ধরে রেখেছে। জাবিয়ানদের ভ্রাতৃত্বের গল্প যেন আত্মিক কোনো সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ। প্রথম পরিচয়েই সহোদরের মতো আপনজন হয়ে ওঠে সবাই।
এ বছরের ২৩ মে বর্ণিল এ ক্যাম্পাসে তাদের পদার্পণের দুই বছর পূর্ণ হলো। এ সময়ে স্মৃতির পাতায় জমা পড়েছে অসংখ্য স্মৃতি। প্রথম বর্ষের আনন্দ উল্লাস থেকে শুরু করে পরীক্ষার আগের রাতে পড়ালেখা করে পরীক্ষা দিতে যাওয়া- সবই জমে আছে মনের কোণে। পূর্ণিমার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে সারারাত ক্যাম্পাসে ঘোরা, বৃষ্টির দিনে একসঙ্গে ভেজা, সময়ের হিসেব ভুলে গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠার স্মৃতি জমা হচ্ছে ধীরে ধীরে।
দুই বছর পেরিয়ে তিনে পদার্পণের সময়টাকে স্মরণীয় করে রাখতে আয়োজন করা হয় দুদিনব্যাপী বর্ণিল উৎসবের। রং মাখামাখি, সাংস্কৃতিক প্রযোজনার যেমন ছিল তেমনই ক্যাম্পাস পরিষ্কার অভিযান ও বৃক্ষরোপণের মতো কর্মসূচিও বর্ষপূর্তি উদযাপনের অনুষ্ঠানে স্থান পায়। ২৩ মে বর্ষপূর্তি পালনের কথা থাকলেও রাষ্ট্রীয় শোকের কারণে পিছিয়ে যায় অনুষ্ঠান। ২৪ ও ২৫ মে আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে ছিল ফ্ল্যাশমব, রং খেলা, ক্যাম্পাস পরিষ্কার অভিযান ও বৃক্ষরোপণ। দ্বিতীয় দিনে ছিল নিজস্ব প্রযোজনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানো দুই বছর সময়কে জীবনের সোনালি অধ্যায় উল্লেখ করে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী জুবাইর ইসলাম বলেন, ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য বাড়ি ছেড়ে এক নতুন জায়গায় আমরা এসেছিলাম। বাবা-মা স্বজন রেখে এক অচেনা পরিবেশে। কিন্তু দুই বছরে এই অচেনা পরিবেশটা একটা চেনা পরিবারে তৈরি হয়েছে। ক্ষীণ হয়েছে বাড়ি ছাড়ার বেদনা। সবাই এই পরিবারের উপহার। ধরাতলে পুনর্জন্মের মতো এখানে এসে যে পরিবারটি পেয়েছি, তার অনুভূতি অতুলনীয়। একঘেয়েমি, মান-অভিমান, দূরত্ব সব কাটিয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ভালো কিছু করার প্রেরণা। সামনের দিনগুলোয় আমরা বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে বাধা কাটিয়ে যেন বিশ্ববিদ্যালয়কে এবং দেশকে ভালো কিছু দিতে পারি এটাই এবারের ব্যাচডের প্রত্যাশা।’
সব মিলিয়ে, আমেজে ভরপুর একটি দিন পর হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম আবর্তনের বর্ষপূর্তিও এ দিনটি। আজ মনে পড়ছে, সেই কথা- বন্ধুত্বের বন্ধনে কীভাবে এতদূর এলাম, কীভাবে এত আপন হলাম। এই তো আছি, থাকব অনন্তকাল, বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে। সবকিছুতে ছড়িয়ে যাক বন্ধুত্বের আবেশ; সামনের দিনগুলো ভরে উঠুক আরো বর্ণিল।
"