মোহাম্মদ এনামুল হক, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদরাসা, চট্টগ্রাম
ঈদ পুনর্মিলনী
বন্ধন সুদৃঢ়ের মেলবন্ধন

বন্ধু মানে সুখ-দুঃখের এক মজবুত ভরসা, চরম বন্ধুর পথে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা। মানুষের জীবনের প্রায় ধাপে ধাপে শত বন্ধুর দেখা মেলে। কেউ স্কুলজীবনের বন্ধু, কেউবা কলেজজীবনের, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের, কেউবা আবার কর্মজীবনের বন্ধু। এর বাইরেও অনেক বন্ধু রয়েছে। তবে জীবনচলার পথে যে বন্ধুদের দিয়ে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা মনের মাঝে আত্মস্থ হয়, তারা স্কুলজীবনের বন্ধু। তাদের কখনো ভোলা যায় না। হয়তো ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হয়ে ওঠে না, কিন্তু তারাই গেঁথে থাকে অন্তরে। বাস্তবে সচরাচর দেখা না মিললেও স্মৃতির পাতায় আজীবন রয়ে যায় অমলিন।
সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জের দেশের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তঘেঁষা অপরূপ পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জেলার অন্যতম সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান ‘ছালেহাবাদ এমএস দাখিল মাদরাসা’র দাখিল ব্যাচণ্ড২০১৬-এর শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় হয় ৯ম ঈদ পুনর্মিলনী। তাই সকাল সকাল আমরা সবাই যার যার মতো তৈরি হয়ে রওনা হলাম মাদরাসার দিকে। বৃষ্টির জন্য অনেক আশঙ্কা ছিল ঠিকঠাকভাবে মাদরাসায় পৌঁছাতে পারব কি না, আমাদের অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে সফল করতে পারব কি না- এ নিয়ে চিন্তিত ছিলাম সবাই। কিন্তু বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে আমরা সবাই উপস্থিত হয়েছিলাম। বুধবার (১৯ জুন) সকাল ৯:৩০টায় সবাই একত্র হলাম। নির্ধারিত সময়ে আমরা সবাই ছালেহাবাদ এমএস দাখিল মাদরাসায় পৌঁছালাম। সেখানে গিয়ে দেখি উপস্থিত রয়েছেন নেয়ামুল, আলাল, দুলাল, আলমগীর, রবিউল, কাউসার আলম, ইব্রাহিম, মুহিবসহ অনেকে। এর কিছুক্ষণ পরেই মাদরাসায় এসে পৌঁছায় মোহাম্মদ এনামুল হক ও হাফিজুর।
পুরোনো সব বন্ধু আর সহপাঠীকে পরস্পর জড়িয়ে ধরে হয়েছেন আত্মহারা। হাতে হাত আর বুকে বুক মিলিয়ে করেছেন কুশলবিনিময়। অনেকে আবার প্রিয় সহপাঠীকে পেয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মোবাইল ক্যামেরায় নিজেদের বন্দি করেন নতুন করে। কেউ কেউ খুঁজেছেন মাদরাসার মাঠসংলগ্ন সেই বিশাল খেলার মাঠের পাশে থাকা বড় গাছগুলো। কেননা ওই গাছের ছায়াতলে সহপাঠীদের নিয়ে আড্ডা দেওয়ার সব স্মৃতিকথা ভিড় করে আছে যে মনের গভীরে।
মাদরাসাজীবনের হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের একসঙ্গে একটি দিনের জন্য ফিরে পাওয়ার এ আয়োজনে দাখিল ব্যাচের ২০১৬ সব সদস্যের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। অনুষ্ঠানের আগের যাবতীয় কাজ সম্পাদনে নানা হইহল্লার মধ্যে ছিল এক অকল্পনীয় আনন্দ। সবার পরিশ্রম ও প্রতীক্ষার প্রহর শেষে যখন স্বপ্নের এই দিনটি আসে, সবার মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। দিনটি ছিল অন্যসব দিনের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা।
সবার সঙ্গে আড্ডা মাস্তি করতে করতে কখন যে দুপুর হয়ে গেল, সেদিকে আমরা খেয়ালই করলাম না। এর ফাঁকেই নেয়ামুল কাচ্চি নিয়ে আসার জন্য পাঠিয়ে দেন রবিউল ও সুলতানাকে। আমরা সবাই জোহর নামাজ আদায় করলাম মাদরাসা মসজিদে। নামাজ পড়া শেষ হতে হতে দেখি তারা খাবার নিয়ে হাজির। ততক্ষণে আমাদের সঙ্গে আমাদেরই শিক্ষক মাওলানা হাসান হুজুর (সবাই তাকে রাজবাড়ী হুজুর হিসেবেই চিনেন) তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। হুজুরের সঙ্গে কুশলবিনিময় করি। তারপর মাদরাসার রুমে গিয়ে সবাই একত্র হয়ে বসে তৃপ্তি নিয়ে পেট ভরে খেয়ে নিলাম।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুদের বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠে মাদরাসার প্রাঙ্গণ। দীর্ঘ আড্ডায় হাসিঠাট্টার ঘোরাঘুরি ও পাঠচক্রের ইতি টেনে ফিরে যাই যার যার ঠিকানায়। সব বাধাবিপত্তি পার হয়ে বন্ধু নামের একই ছাতার নিচেই আমরা ফিরে আসি বারবার। এই জীবন চলার পথে কেউ আমরা দীর্ঘস্থায়ী নই। বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে আমরা দূরের বাসিন্দা হয়ে যাব এক দিন। দূর সীমানার বাইরে চলে গেলেও অন্তরে অটুট থেকে যায় যেন আন্তরিক টান। সুখে-দুঃখে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে পাশে থাকুক বিশ্বস্ত হয়ে বন্ধুত্বের হাত। অনন্তকাল ভালোবাসার বন্ধনে মজবুত হয়ে থাকুক আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধন।
"