মো. মিরাজুল ইসলাম, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

  ১৬ জুন, ২০২৪

পরিবেশ সচেতনতায় অনন্য এক অ্যাসাইনমেন্ট

‘অ্যাসাইনমেন্ট’ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের খুব পরিচিত এক শব্দ, যা শিক্ষকদের হাতে থাকা ধারাবাহিক মূল্যায়নের চল্লিশ মার্কের অংশ। শব্দটি জুড়ে আছে বিরক্তিকর অনুভূতি। কেননা এটি করতে গিয়ে ক্লান্তি এসে যায় পড়তে হয় মানসিক চাপে, যা শিক্ষার্থীদের কাছে অতিরিক্ত চাপেরও মনে হয়। তবে এমন মনে হলেও এটির গুরুত্ব অনেক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দেওয়া এসব অ্যাসাইনমেন্ট সাধারণত গবেষণা প্রকল্প, প্রবন্ধ কিংবা কেস স্টেডি হয়ে থাকে।

সম্প্রতি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক আতিকুর রহমানের এনভাইরনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোর্সে ভিন্ন ধরনের এক অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছেন, যা বিরক্তিকর হওয়ার বদলে হয়েছে আনন্দদায়ক। এতেই তিনি সবার দৃষ্টি কেড়ে হচ্ছেন প্রশংসিত।

বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের তিনি গাছ লাগানোর অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছেন, যা পরিবেশ সুরক্ষা ও সচেতনতা তৈরিতে কাজে দেবে। বিষয়টি এই কোর্সের সঙ্গে খুবই প্রাসঙ্গিক, যা সত্যিকার অর্থেই অনন্য ও ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ। বিভিন্ন প্রজাতির নানা রকম গাছ হাতে শিক্ষার্থীদের দেখা মেলে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে। কেউ খুঁড়ছে মাটি, কেউ আনছে খুঁটি, কেউবা লাগানো গাছে ডালছে পানি। প্রাণচঞ্চল হাস্যোজ্জ্বল মুখে ছোটাছুটি করে বেশ উৎসাহের সঙ্গেই করছে তারা এ কাজ। এ যেন এক প্রাণবন্ত উদ্যমের মেলা। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোনো একটি পরীক্ষার (অ্যাসাইনমেন্ট) অংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাসকে আরো সবুজময় করার কী দারুণ এক প্রয়াস!

অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে তাদের লাগানো এগারো ধরনের প্রায় চল্লিশটি গাছের মধ্যে ছিল কাঁঠাল, জলপাই, আম, আতা, জাম্বুরা, বকুল, কৃষ্ণচূড়া, নিম, হরীতকী, কড়ই ও মেহগনিগাছ। ফুল, ফলদ, বনজ ও ঔষধি কী ছিল না এ তালিকায়।

অ্যাসাইনমেন্টে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী সিদরাতুল জান্নাত রিফা বলেন, আমরা আগে থেকেই জানি আমাদের এ সবুজ ক্যাম্পাস নানা ধরনের গাছপালায় সুসজ্জিত। তারপরও আমাদের এই শিক্ষাঙ্গন আরো সবুজ ও সুন্দর রূপে দেখার প্রত্যাশা সবার। সে জন্যই আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় অ্যাসাইনমেন্টের এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছি।

আরেক শিক্ষার্থী ইউসা তাহসিন বলেন, এই অ্যাসাইনমেন্ট আমাদের শুধু বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি। এটি আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করেছে। সে জন্য স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। গাছ লাগানো এবং তার যত্ন নেওয়া সত্যিই আনন্দের।

শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এভাবে বাস্তবভিত্তিক শিক্ষায় নতুন এক অভিজ্ঞতা অর্জন হলো। প্রতিবার অ্যাসাইনমেন্ট করতে চাপ এবং বিরক্তিকর লাগত কিন্তু এবার একটুও তেমন মনে হয়নি। এতে একদিকে যেমন বাস্তবতার নিরিখে আনন্দের সঙ্গে শেখা হচ্ছে, তেমন মার্কও যুক্ত হচ্ছে। গতানুগতিক ধারার বাইরে এমন শেখার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ায় আমাদের প্রিয় শিক্ষক আতিকুর রহমান স্যারের প্রতি অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞ। তিনি সব সময়ই আমাদের ভিন্নভাবে শেখান, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

প্রকৃতির গুরুত্ব বুঝতে, পরিবেশ সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা ও পড়ানো বিষয়গুলো বাস্তবতার নিরিখে আরো ভালোভাবে বোঝাতেই এনভাইরনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোর্স শিক্ষক প্রভাষক আতিকুর রহমান এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আজকাল হতাশা ও লেখাপড়ায় অতিরিক্ত চাপ অনুভব একটি ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ব্যাধিতে কেউ যেন আক্রান্ত না হয় এবং শিক্ষর্থীরা যেন লেখাপড়ায় আগ্রহী হয়ে ওঠে, তাই তিনি বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের জন্য এমন সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার শিক্ষার্থীরা সমাজের প্রতি একজন দায়িত্ববান মানুষ হয়ে উঠবে। এ গাছ লাগানো শুধু পরিবেশের জন্যই নয়, বরং এটি ব্যক্তিগত উন্নয়নেও সহায়তা করে। কারণ এটি ধৈর্য, দায়িত্ববোধ এবং সৃজনশীলতার চর্চার একটি মাধ্যম।

তিনি আরো বলেন, এমন উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের আগ্রহই বেশি ছিল। তাদের এই বৃক্ষরোপণ শেষে আমার মনে হয়েছে এই অ্যাসাইনমেন্ট ভালোভাবে সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. কামরুল আলম স্যার শিক্ষার্থীদের জন্য এমন উদ্যোগে সব সময়ই আমাদের সমর্থন করেন, তেমনি আজকেও এ বৃক্ষরোপণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সফঙ্গ থেকেছেন, যা আমাদের এ ধরনের কাজের প্রতি আরো উৎসাহিত করেছে। স্যারের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞ আমরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. কামরুল আলম খান বৃক্ষরোপণ উদ্বোধনে এসে মুগ্ধ হন। এ সময় তিনি বলেন, গাছের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করতে হবে এবং পৃথিবীটাকে বাঁচাতে হবে কারণ এ দায়িত্ব আমাদেরই। বৃদ্ধদের সোনার সঙ্গে এবং তরুণদের ডায়মন্ডের সঙ্গে তুলনা করে তিনি আরো বলেন, তরুণদের এ ধরনের কার্যক্রম পরিবেশ সুরক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। কোর্সের শিক্ষক আতিকুর রহমানের এমন অনন্য উদ্যোগ যেমন শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া আরো মনোযোগী করবে, তেমনি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। প্রভাষক আতিকুর রহমান অ্যাসাইনমেন্ট-প্রেজেন্টেশনের গতাগতিক ধারায় পরিবর্তন এনেছে। বিগত দিনও তার অন্য কোর্সগুলোয় এভাবেই নতুনত্ব এনে শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও যত্নশীল তিনি। তার এমন উদ্যোগ অন্যদের কাছেও অনুকরণীয় হয়ে উঠছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close