শেখ আবদুল্লাহ
বৃক্ষপ্রেমিক ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী তানভীর হোসেন
বৃক্ষপ্রেমিক ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী তানভীর হোসেন। ছোটবেলা থেকে তার শখে বৃক্ষ রোপণ করা। দিন যাচ্ছে সময়ের সঙ্গে তার এ শখ ও বৃক্ষের প্রতি ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে গাছের চারা সংগ্রহ করে তাদের বাড়ির আঙিনায় লাগাতেন এবং পড়াশোনার পাশাপাশি সেগুলোর পরিচর্যা করতেন। স্কুল-কলেজে পড়াকালে তিনি নিজ হাতে স্কুল-কলেজ প্রাঙ্গণে অনেক গাছ লাগিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসেও তিনি শত ব্যস্ততার মধ্যে তার শখকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। এখন তানভীর হোসেন পড়াশোনা করছেন ঢাকা কলেজে অনার্স চতুর্থ বর্ষে। তিনি ঢাকা কলেজের দক্ষিণ ছাত্রাবাসের একজন আবাসিক ছাত্র।
কলেজ কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলার জন্য প্রতিবছর ক্যাম্পাসে কিছু গাছ লাগান। কিন্তু সঠিক পরিচর্যার অভাবে গাছগুলো মারা যায়। তানভীর হোসেন সময় পেলে এসব গাছের যত্ন নেন। আবাসিক হলের থাকার সুবাদে ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে তিনি গাছের যত্ন নিতে পারেন। তিন শুধু কলেজ কর্তৃপক্ষের লাগানো গাছের পরিচর্যা করেন না, নিজের লাগানো গাছেরও পরিচর্যা করেন।
পড়াশোনা খরচ থেকে তিনি টাকা বাঁচিয়ে গাছ কিনেন এবং নিয়মিত সে গাছগুলো পরিচর্যা করেন। ইতিমধ্যে ক্যাম্পাসে তিনি বেশ কিছু গাছ লাগিয়েছেন। তানভীর হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাছ লাগানো এখন তার শখের জায়গায় সীমাবদ্ধ নেই। ছোটবেলায় তিনি গাছ লাগিয়েছেন শখের বসে; এখন গাছ লাগান পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজনবোধে। তিনি গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেন, বর্তমানে আমাদের মধ্যে চলছে গাছ কাটার প্রতিযোগিতা। গাছ কেটে শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে, ইটের ভাটায় ব্যাপক হারে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু যেভাবে গাছ কাটা হচ্ছে, সেভাবে কেউ গাছ লাগানোর দিকে দৃষ্টি দিচ্ছেন না। প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য উপাদান অক্সিজেন, যেটি আমরা গাছ থেকে পাই। যদি এভাবে আমরা গাছ কাটতে থাকি তাহলে একসময় চরম অক্সিজেন সংকট দেখা দেখা দেবে এবং প্রাণিজগৎ একসময় ধ্বংস হয়ে যাবে।
এ ছাড়া তিনি আরো বলেন, প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিকভাবে প্রতিনিয়ত কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্যাস সৃষ্টি হয়। এ কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্যাস বায়ুমন্ডলের তাপ বৃদ্ধি করে। গাছ বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্যাস শোষণ করে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখে। যদি আমরা এভাবে গাছ কাটতে থাকি তাহলে বায়ুমন্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীতে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করবে এবং স্থলভাগ থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। একসময়ে ধীরে ধীরে স্থলভাগ পানির নিচে চলে যাবে এবং পুরো জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে।
তানভীর হোসেন সবাইকে গাছের প্রতি যত্নশীল হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। তিনি নিজে গাছ লাগান এবং অন্যকে গাছ লাগানোর জন্য উৎসাহ দেন। তিনি বলেন, গাছ কাটা বন্ধ করতে এবং নতুন গাছ লাগাতে আমাদের সবার একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ইতিমধ্যে ‘গ্রিন ভয়েস’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছের গুরুত্বের দিকে লক্ষ রেখে কাজ করে যাচ্ছে। গ্রিন ভয়েসের স্বেচ্ছাসেবীরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাছ লাগাচ্ছেন এবং সে গাছের পরিচর্যা করছেন। তানভীর হোসেন গ্রিন ভয়েসের একজন সক্রিয় সদস্য।
তিনি বলেন, গ্রিন ভয়েসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আমার অনেক ভালো লেগেছে। বর্তমান গাছ কাটার যে প্রতিযোগিতা বেড়েছে, সেটি দমনের জন্য এ রকম একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রয়োজন ছিল। আমি এ রকম একটি সংগঠনের আশায় ছিলাম। গ্রিন ভয়েসের সঙ্গে কাজ করে আমার বেশ ভালো লাগছে। আমি আজীবন গ্রিন ভয়েসের সঙ্গে গাছ কাটা দমন এবং গাছ লাগানো ও পরিচর্যার লক্ষ্যে কাজ করে যেতে চাই।
তাই, আমাদেরও উচিত গাছ কাটা বন্ধে এবং গাছের পরিচর্যায় তানভীর হোসেনের মতো গাছের প্রতি যত্নশীল হওয়া। বিভিন্ন সভা-সেমিনার আয়োজন করে সাধারণ মানুষকে গাছ লাগানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করা।
"