আশিকুজ্জামান, বাকৃবি

  ১৬ নভেম্বর, ২০২৩

মীমের মেডিকেলে ভর্তিযুদ্ধের গল্প

সৃষ্টিকর্তার পরে মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসযোগ্য হলেন একজন ডাক্তার। তাই তো অনেকেই সাদা অ্যাপ্রোন, গলায় স্টেটোস্কোপ ঝুলিয়ে মুমূর্ষু রোগীর সেবা করার স্বপ্ন লালন করেন। ছোটবেলায় যখন কেউ প্রশ্ন করত বড় হয়ে কী হতে চাও? এক নিঃশ্বাসে বলে দিত আমি বড় হয়ে ডাক্তার হব।

গত ৪ অক্টোবর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিশাল একটা অংশের ইচ্ছা মেডিকেলে পড়ার, ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু চাইলেই তো তা আর সম্ভব নয়! সুযোগ পেতে মুখোমুখি হতে হয় এক কঠিন পরীক্ষার। যেটাকে রীতিমতো যুদ্ধ বলা হয়। ভর্তিযুদ্ধ! আসন্ন এই কঠিন যুদ্ধে কীভাবে অন্যদের থেকে নিজেকে এগিয়ে রাখবে, কীভাবে পড়লে ভর্তিযুদ্ধটা কিছুটা সহজ হবে সেসব বিষয় নিয়ে জানিয়েছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মীম মনি।

মেডিকেলে কেন পড়তে চাই এর উত্তরটা সবার আগে খুঁজে বের করতে হবে। অনেকেই পারিবারিক চাপে মেডিকেলের প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু এতে বেশির ভাগ সময় হিতে বিপরীত হয়। আমি মেডিকেলেই পড়তে চাই এই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এক মনে দুই আশা নিয়ে এগোলে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সফল হওয়া খুব কঠিন। মেডিকেলে পড়ার সর্বপ্রথম ধাপই নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা। ধৈর্য ধরে ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে একটানা পরিশ্রম করার মানসিকতা না থাকলে মেডিকেলের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত না। আমি পারিবারিকভাবে ছোটবেলা থেকে খাজা মোজাম্মেল হক্ (র.) ফাউন্ডেশন নামে একটি অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এই ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে একটি হচ্ছে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান। তাই ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল নিজেকে ডাক্তার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব এবং এই সংগঠনের মাধ্যমে মানবতার কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করব। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ৩০০ নম্বরে হয়ে থাকে। এর মধ্যে ২০০ নম্বর আসে মাধ্যমিকের জিপিএ ১৫ দ্বারা ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জিপিএ ২৫ দ্বারা গুণ করে। বাকি ১০০ নম্বরে মূল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১০০টি প্রশ্ন থাকে (জীববিজ্ঞান ৩০টি, রসায়ন ২৫টি, পদার্থবিজ্ঞান ২০টি, ইংরেজি ১৫টি, সাধারণ জ্ঞান থেকে ১০টি)। প্রতি একটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা হয় এবং যারা দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত নম্বর থেকে অতিরিক্ত ৫ নম্বর কাটা হয়।

ভর্তিপ্রত্যাশীদের প্রস্তুতি নিয়ে বলে, যারা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ভালো ফলাফল করে মূলত তারাই মেডিকেলে ভর্তির প্রস্তুতি নেয়। জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানের প্রস্তুতি অনেকটা কলেজে পড়াকালেই হয়ে যায়। তবে বিগত দুই বছরে প্রশ্নের ধরনে ভালোই পরিবর্তন এসেছে। অধিক গুরুত্বপূর্ণ, কম গুরুত্বপূর্ণ বলে কোনো অধ্যায় নেই। সব অধ্যায় সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোনোভাবেই কোনো অধ্যায় পড়া বাদ দেওয়া যাবে না। প্রতি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ লাইনগুলো ভালোভাবে বারবার পড়ে চর্চার মধ্যে রাখতে হবে। পদার্থবিজ্ঞানের কঠিন কঠিন গাণিতিক সমস্যাগুলো নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। পদার্থবিজ্ঞানে সূত্র সম্পর্কিত সহজ বহুনির্বাচনী প্রশ্নগুলো পারলেই হবে। তিন বিষয়ের সবগুলো অধ্যায় আয়ত্তে চলে এলে বিগত ১০ বছরের মেডিকেল প্রশ্নব্যাংক সমাধান করতে হবে। কারণ বিগত বছরের অনেক প্রশ্ন হুবহু পরীক্ষায় চলে আসে।

ইংরেজি আর সাধারণ জ্ঞান নিয়ে অনেক পরিক্ষার্থীই বেশ চিন্তিত থাকে। কলেজে ইংরেজি পড়ানো হলেও ভর্তি পরীক্ষার ইংরেজি প্রশ্নের ধরন ভিন্ন হওয়ায় ইংরেজি অনেকটা নতুনের মতোই লাগে। বিগত সালের ইংরেজি প্রশ্নগুলো পর্যালোচনা করলেই ধারণা পাওয়া যাবে। নিয়মিত রুটিনমাফিক ইংরেজি চর্চা করতে পারলেই প্রস্তুতি অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। তবে সবচেয়ে বেশি চিন্তা থাকে সাধারণ জ্ঞান নিয়ে কারণ কলেজে সাধারণ জ্ঞান নিয়ে কিছুই পড়ানো হয় না। সাধারণ জ্ঞানে শুধু বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয় থেকেই প্রশ্ন আসে। বাজার থেকে ভালো একটা বাংলাদেশ-বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান বই কিনে ও নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করলেই সাধারণ জ্ঞানে ভালো করা সম্ভব। এখানেও বিগত সালের প্রশ্নগুলোর ওপর অধিক জোর দিতে হবে।

তবে এতদূর আসার পথটি মোটেই মসৃণ ছিল না। প্রস্তুতি নেওয়ার সময় প্রচন্ড হতাশা কাজ করেছে। বারবার মনে হয়েছে, আমাকে দিয়ে হবে না। অনেকেরই এমন হতাশা কাজ করে। কিন্তু ভুলেও মনোবল হারানো চলবে না। নিয়মিত সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে হবে। পরিবারকেও পরীক্ষার্থীর প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল হতে হবে। পরীক্ষার্থীদের সময়কে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে হবে। একই জিনিস বারবার পড়ায় কোনো অনাগ্রহ আনা যাবে না এবং নিজের শরীরের যথাযথ যত্ন নিতে হবে।­

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close