মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জবি

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

র‌্যাগিং এড়াতে জবিতে বাস যাতায়াতে কড়াকড়ি

র‌্যাগিং এড়াতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাসে ছাত্রছাত্রী কড়াকড়ি নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের অনুমোদিত বাস কমিটি গঠনে নিষেধাজ্ঞা সহ বাসে ছাত্রছাত্রী আলাদা বসার নিয়মাবলিও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. সিদ্ধার্থ ভৌমিক এসব তথ্য জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে তার স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশও জারি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী বহনকারী নিজস্ব সিলভার (রুপালী) রঙের সব একতলা বাসের সামনের দ্বিতীয় সারি হতে পঞ্চম সারি পর্যন্ত দুই পাশের সব আসন ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে। অন্যান্য সব আসন ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ থাকবে। বিআরটিসি হতে ভাড়াকৃত লাল রঙের দ্বিতল বাসের নিচের তলায় ছাত্রীরা অবস্থান করবে ও উপর তলায় ছাত্ররা অবস্থান করবে।

এতে আরো বলা হয়েছে, বই, খাতা, ব্যাগ বা রুমাল রেখে কোনো আসন দখল করা যাবে না। আগে আসলে আগে বসা সাপেক্ষে বাসে কোনো সিনিয়র-জুনিয়র হিসেবে বসা বা দাঁড়ানো যাবে না এবং ছাত্রছাত্রীদের বাসে কোনো কমিটি গঠন করা যাবে না।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে নবীন শিক্ষার্থীদের ওপর র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রকাশ্যে কেউ কাউকে র‌্যাগ না দিলেও প্রশাসনের চোখের আড়ালে বাসে জুনিয়রদের ওপর চলে মানসিক নির্যাতন। তবে সুনির্দিষ্ট কারো বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় ব্যবস্থা নিতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দূর্জয়, অনির্বাণ, উল্কা-১ সহ শিক্ষার্থীদের যাতায়াতকারী প্রায় সব বাসেই এ ধরনের ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। তবে দূরের গন্তব্যের বাসে র‌্যাগিংয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের ছেলেকে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া সহ এক ডেপুটি রেজিস্ট্রারের মেয়েকে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, আমরা র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ পাচ্ছি। আগেও বলা হয়েছে বাসে কোনো কমিটি হবে না। তবুও বিভিন্নভাবে বাসে কমিটি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শৃংখলার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য প্রজ্ঞাপনটা দেওয়া হয়েছে। এখন কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, বাসে কোনো প্রকার কমিটি হবে না। ছেলেমেয়ে একসাথে বসা নিয়ে যেন সমস্যা না হয় তাই তাদের সীটও আলাদা করে দিয়েছি।

র‍্যাগিংয়ের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, র‌্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। যদি কেউ অভিযোগ দেয়, আর সে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কিছু মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি তার প্রেক্ষিতে প্রক্টরিয়াল টিম ক্যাম্পাসে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন শিক্ষার্থী এলে র‌্যাগিংয়ের ঘটনা বেড়ে যায়। নবাগত যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে, তারা অনেক স্বপ্ন নিয়ে আসে। তাদের সুন্দর স্বপ্ন পূরণ করা আমাদের দায়িত্ব। আর এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা, তাদের নির্দেশনা দিতে পারেন শিক্ষক প্রতিনিধিরা।

তিনি আরো বলেন, ক্যাম্পাসে র‌্যাগিংয়ের অপরাধে কেউ জড়িত হলে ছাত্রত্ব বাতিলের সঙ্গে অভিভাবকদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিংয়ে না জড়ানোর জন্য দাপ্তরিক নির্দেশনা দিয়েছি। এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। এরপরও যদি কেউ র‌্যাগিং করে, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদেরও জবাবদিহি করতে হবে।

র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অভিযুক্তকে বহিষ্কার করা হবে বলে চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close