
হাবিপ্রবির ২৫ বছরে পদার্পণে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

১১ সেপ্টেম্বর ছিল হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫তম জন্মদিন তথা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে অপার সম্ভাবনা অর্জনে এগিয়ে চলছে এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে উত্তরবঙ্গের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে হাবিপ্রবি। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়টি তার প্রতিষ্ঠার ২৪ বছর পার করে ২৫ বছরে পা দিয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অভিমত তুলে ধরেছেন হাবিপ্রবির শিক্ষার্থী রাহাত হোসেন
শুধু শিক্ষা নয় গবেষণাতেও এগিয়েছে হাবিপ্রবি
আব্বুর অনেক ইচ্ছে ছিল ছেলেকে বাকৃবি তে পড়ানোর। কিন্তু ছেলের ইচ্ছা ইঞ্জিনিয়ারিং। ভর্তি হয়েছিলাম বশেমুরবিপ্রবিতে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে। পরে চান্স হয় হাবিপ্রবির কৃষি অনুষদে। অনেক ভাইয়ের কাছে পরামর্শ নিলাম। তাদের মুখে হাবিপ্রবির কৃষি অনুষদের অনেক সুনাম শুনেই এখানে ভর্তি হওয়া। ভর্তি হওয়ার পরে হাবিপ্রবির কৃষি অনুষদ আমায় হতাশ করেনি। পর্যাপ্ত শিক্ষক মন্ডলী এবং ল্যাব ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে কৃষি অনুষদ এগিয়ে চলছে তার গতিতে। বঙ্গবন্ধুর অবদান কৃষিবিদ ক্লাস ওয়ান তৈরিতে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। শুধু শিক্ষা নয় গবেষণায়ও হাবিপ্রবি এগিয়েছে অনেকদূর। উচ্চ ফলনশীল ধান সহ, উন্নত জাতের টমেটো, করলা জাত উদ্ভাবন করেছে হাবিপ্রবির গবেষকরা। শুধু কৃষি অনুষদই নয় মাননীয় ভিসি স্যারের প্রচেষ্টার হাবিপ্রবির প্রত্যেকটি অনুষদ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীদের তালিকায় স্থান পেয়েছে হাবিপ্রবির ১০০ এর অধিক শিক্ষকবৃন্দ। বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৫ বছরে পদযাত্রায় আমার চাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় তার এই সুনাম ধরে রেখে এগিয়ে যাক এবং গবেষণা সহ বিভিন্ন উদ্ভাবনের মাধ্যমে এগিয়ে যাক আমাদের হাবিপ্রবি।
নাহিদুল ইসলাম হৃদয়
শিক্ষার্থী
কৃষি অনুষদ।
সুনিপুণ দক্ষতায় পরিণত হবে দক্ষ মানবসম্পদে
সবুজ, শ্যামল, সুশোভিত বৃক্ষে আচ্ছাদিত উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১১ সেপ্টেম্বর ২৫ বছরে পদার্পণ করেছে সেই সঙ্গে অভিজ্ঞতার থলিতে যুক্ত হয়েছে আরো একটি নতুন বছর। কিন্তু এই ২৫ বছরে আমাদের কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে কি?
উত্তর টি হ্যাঁ ও না এর মাঝামাঝি। প্রত্যাশার পারদ যদি বাস্তবতার সীমায় রাখি তবে অনেকটাই পূরণ হয়েছে। সময়ের পালাক্রমে শিক্ষা, সংস্কৃতি, আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় পরিমন্ডলে সুদুরপ্রসারী ভূমিকা রেখে চলছে। পাশাপাশি গবেষণার বিষয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অবদান দৃশ্যমান। হাবিপ্রবির ফ্যাকাল্টি অব ভেটেরিনারি আনিমেল সায়েন্স এর জেনেটিক্স এবং ব্রিডিং ডিপার্টমেন্ট এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে নিজস্ব রিসার্চ সেন্টার; গত ১১ ই জুলাই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম উপায়ে উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো সম্ভব হয়েছে যার মাধ্যমে নতুন একটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হল যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। তাছাড়াও ৮৫ একরের এই ক্যাম্পাস যেন বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য আস্থার জায়গা কেননা প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি বিদেশী শিক্ষার্থী পড়তে আসেন আমাদের এই ক্যাম্পাসে। আশা করি ভবিষ্যতেও এই ধারা বজায় থাকবে। কিন্তু উন্নতির সাথে প্রত্যাশার পারদের উচ্চতাও বাড়ে স্বাভাবিকভাবে। আমরা চাই আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে থাকবে হাবিপ্রবি, আবাসন সুবিধা পাবে সব শিক্ষার্থী, পর্যাপ্ত ক্লাসরুম ও ল্যাব সংকট নিরসন হবে, প্রযুক্তির উন্নয়নের যুগে সার্টিফিকেটের সঙ্গে সঙ্গে সুনিপুণ দক্ষতা নিয়ে বের হবে প্রতিটি শিক্ষার্থী, পরিণত হবে দক্ষ মানবসম্পদে।
বিশ্বাস করি এর প্রত্যেকটি পূরণ হবে একদিন। জ্ঞানের মশাল জ্বেলে বছরের পর বছর বেঁচে থাকুক প্রাণের ক্যাম্পাস এই প্রত্যাশায়।
সুমাইয়া সুলতানা সুরভী
শিক্ষার্থী
ভেটেরিনারি আনিমেল সায়েন্স।
শিক্ষার্থীদের সংকট নিরসন হোক দ্রুত সময়ে
হাবিপ্রবি একটা আবেগের নাম। ছোট্ট পরিপাটি আমাদের এই ক্যাম্পাসটায় শিক্ষার্থীদের স্বপ্নগুলো আকাশচুম্বী। সেগুলোকে মনে প্রাণে লালন করে কঠোর পরিশ্রমে অনেকেই সফল হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। যদিওবা আবাসন ও পরিবহন সংকট, মাদক, এলামনাই এসোসিয়েশন গঠন ও কনভোকেশন আয়োজন করতে না পারা, সেশনজটসহ আরো বেশ কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। তথাপি সব বাধা বিপত্তি মোকাবিলা করে শিক্ষা, গবেষণাসহ সব দিক থেকেই এগিয়ে যাবে আমাদের প্রিয় হাবিপ্রবি আমি তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি।
হাবিপ্রবিতে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ যাত্রা শুরু করে ২০০৫ সালে। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির মাধ্যমে ১৯টি ব্যাচের ভর্তি কার্যক্রম সুসম্পন্ন হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ দক্ষ গ্রাজুয়েট সরবরাহ করে আসছে। স্নাতক সম্পন্ন করে যাওয়া সম্মানিত বড় ভাই-আপুরা ইতোমধ্যে বিদেশে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, বিসিএস, ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ করে নিয়েছেন এবং নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। যা মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ তথা হাবিপ্রবির জন্য গর্বের। আশা রাখি আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
মো. নাজমুল শাকিল
শিক্ষার্থী , মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ।
শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার প্রতাশা
১৯৯৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পথচলা শুরু করে গুটি গুটি পায়ে ২৫ বছরে পদার্পণ করল প্রিয় বিদ্যাপীঠটি। ৯টি অনুষদের ৪৫টি বিভাগের অধীনে ২৩টি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করছে দেশ ও বিদেশের প্রায় এগারো হাজারের অধিক শিক্ষার্থী। বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে আমাদের এই প্রাণের বিদ্যাপিঠটিতে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় দেশে-বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইনকিউবেটরে উটপাখির বাচ্চা জন্মদান উল্লেখযোগ্য, যা বাংলাদেশে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই প্রথম সাফল্য পেয়েছেন। এছাড়া বিতর্ক, বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক, সাংগঠনিক ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমেও বরাবরই অনেকটা এগিয়ে রয়েছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিবছর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে সাফল্যের সঙ্গে অবদান রাখছে। তবে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কিছু সমস্যার এখনো সমাধান হয়নি যা খুবই হতাশাজনক। শিক্ষক স্বল্পতা, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী সেমিনার কক্ষ বা ব্যবহারিক কক্ষে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, আবাসন সংকট বিশেষ করে ছাত্রীদের হল পেতে অনেক বিলম্ব হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে। উল্লিখিত সমস্যাগুলোর দ্রুত অবসান ঘটানো এবং শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের আধার শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, শহিদ মিনার চত্তর, প্রধান ফটক সংলগ্ন প্রসস্থ রাস্তা, প্রসানিক ভবনের সম্মুখের উন্মুক্ত সবুজ প্রান্তর, লিচুবাগান ও ভেটেরিনারি অনুষদের পাখিদের গবেষণাগার শুধু শিক্ষার্থী নয় দর্শনার্থীদেরও মুগ্ধ করে। সমগ্র দেশে পরিচিতি লাভ করেছে উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে। সামনের দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়টির এই সাফল্য ধারা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতেই দেশ-বিদেশেও এই সবুজে ঘেরা বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা শক্তিশালী অবস্থান অর্জন করবে। দেশের স্বনামধন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে অবস্থান গ্রহণ করুক বিশ্ব মানচিত্রে। শিক্ষা, গবেষণা, শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রম ও স্বীয় স্বকীয় গুণাবলীতে দেশে-বিদেশে সর্বত্রই অনন্য হয়ে উঠুক আমাদের প্রাণের স্পন্দন স্বরূপ। আশা করব বিগত দিনগুলোর মতোই সুন্দর ও শৃঙ্খলাপূর্ণ অবস্থায় থাকবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ বছর পদার্পণে একটাই চাওয়া এভাবেই হাজারো স্বপ্নসারথীর সোপান হয়ে এগিয়ে যাক হাবিপ্রবি।
বেলায়েত হোসেন
শিক্ষার্থী
গণিত বিভাগ।
"