মোহাম্মদ ইয়াছিন ইসলাম, জবি

  ০৫ জুন, ২০২৩

শিক্ষা ভ্রমণে সোনারগাঁয়ে এক দিন

ভ্রমণ মানুষের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করে। ভ্রমণে রয়েছে আনন্দের সঙ্গে শিক্ষা। মানবজীবনের পুরোটাই ছাত্রজীবন। কেননা পাঠ্যবই ছাড়াও মানুষ মানুষের কাছ থেকে, প্রকৃতির কাছ থেকেও কিছু না কিছু শিক্ষা লাভ করে থাকে। ছাত্রজীবন শিক্ষালাভের সময়। তবে এ শিক্ষা লাভ শুধু পাঠ্যপুস্তকের নয়। কবির ভাষায়- ‘গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন/নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন।’ এজন্য ছাত্রজীবনে শিক্ষামূলক ভ্রমণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের ধরাবাঁধা একঘেয়ে জীবনকে নতুন মাত্রা দান করে। শিক্ষামূলক ভ্রমণের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান অথবা কোনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান অবলোকনের সুযোগ পাই। এসব স্থান সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও তত্ত্ব জানতে পারি। এ ভ্রমণ জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে। সেই শিক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নরত এবং সাবেক মাদারীপুরের শিক্ষার্থীদের সংগঠন মাদারীপুর জেলা ছাত্রকল্যাণের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় শিক্ষা ও আনন্দ ভ্রমণ। ২৬ মে আমাদের ভ্রমণের দিন নির্ধারিত হয়। আমাদের ভ্রমণের স্থান ছিল সোনারগাঁ এবং পানাম সিটি। নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মোগড়াপাড়া ক্রসিং থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার উত্তরে সোনারগাঁ অবস্থিত। সবুজ বন-বনানী আর অনুপম স্থাপত্যশৈলীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নান্দনিক ও নৈসর্গিক পরিবেশে ঘেরা বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁ। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে হিন্দু আমলের রাজধানী এখানেই অবস্থিত ছিল বলে ধারণা করা হয়। পরবর্তীকালে মুসলিম শাসকদের পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল। প্রাচীন সুবর্ণগ্রাম থেকে সোনারগাঁ নামের উদ্ভব বলে কারো কারো ধারণা রয়েছে। অন্য ধারণা মতে বারো ভূঁইয়া প্রধান ঈশা খাঁর স্ত্রী সোনাবিবির নামানুসারে সোনারগাঁ নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশের প্রাচীন জনপদের মধ্যে শিল্পকলা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে সোনারগাঁ একটি গৌরবময় জনপদ। আনুমানিক ১২৮১ খ্রিস্টাব্দে এ অঞ্চলে মুসলিম আধিপত্যের সূচনা হয়। মধ্যযুগে এটি মুসলিম সুলতানদের রাজধানী ছিল। ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে ঢাকা সুবে বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পূর্ব পর্য়ন্ত সোনারগাঁ ছিল পূর্ববঙ্গের রাজধানী। ঈশা খাঁ ও তার বংশধরদের শাসনামলে সোনারগাঁ ছিল পূর্ববঙ্গের রাজধানী। সোনারগাঁর আরেকটি নাম ছিল পানাম। সোনারগাঁ থেকে খানিকটা দূরেই রয়েছে পানামাসিটির সেসব নিদর্শন। সাড়ি সাড়ি পুরোনো বাড়ি আর তাতে স্পষ্ট রয়েছে আদিমতার ছাপ। বাড়িগুলো দেখলে মনে হয় আমি ফিরে গিয়েছি সেই পুরোনো দিনে। সেই সঙ্গে আমাদের নিজস্ব উদ্যোগে ছিল কিছু সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অন্ধকারে হাঁড়ি ভাঙা, পিলো পাসিংসহ নানা মজার খেলা। এসব আনন্দ উপভোগ ও সারাদিন আদিম জনপথের সৌন্দর্য অবলোকন করতে করতে সময় ফুরিয়ে এলো। খুব ভোরে রওনা হয়ে আবার ঠিক সন্ধ্যা নামার আগেই ধরেছিলাম ফেরার পথ।

সোনারগাঁ আমাদের জানাল তার সুদীর্ঘকালের ইতিহাস আর অবলোকন করাল তার প্রাকৃতিক সব নৈসর্গিক দৃশ্য। ভ্রমণ থেকেই আমাদের মাঝে প্রসার ঘটে শিক্ষার। আসে সৃজনশীল চিন্তা। বাংলার ইতিহাস জানতে তাই এসব প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ভ্রমণের গুরুত্ব অপরিসীম। সোনারগাঁয়ের শিক্ষা ভ্রমণ সত্যিকার অর্থেই আমাদের শিক্ষার জায়গাটি আরো সমৃদ্ধ করেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close