রায়হান আবিদ

  ২৯ মার্চ, ২০২৩

বাকৃবিতে দুই টাকার সাইকেল

বাংলাদেশের চিরসবুজ ক্যাম্পাস বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। ১২১০ একর নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পাশে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ে এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যেতে যেন দিন পেরিয়ে রাত হয়ে যায়। বিশাল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ প্রান্তে অবস্থিত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল। হলটি ১৯৬৯ সালে স্থাপিত ও প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থীর আবাসন সেখানে। তবে হল থেকে যার যায় অনুষদীয় ভবনে ক্লাস করতে যেতে বেশ সময় লাগে। এ বিষয়টি সমাধানে এক ভিন্ন ধর্মী পদক্ষেপ নিয়েছেন সোহরাওয়ার্দী হল প্রশাসন ও হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

শুরুটা ছিল হলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা সাইকেলগুলো নিয়ে। অব্যবহৃত এই সাইকেলগুলো যেমন হলের গ্যারেজের জায়গা নষ্ট করছে, তেমনি কাজেও আসছিল না। এ বিষয়টি নিয়ে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রবিউল করিমের সহযোগিতায় হলের ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্যোগে যে সাইকেলের মালিক নেই ও অব্যবহৃত সেগুলো আলাদা করে। এরপর সাইকেলগুলোর সারিয়ে পুনরায় ব্যবহারের জন্য জয় বাংলা বাই-সাইকেল সার্ভিস নামক সেবাটি চালু করা হয়। একজন শিক্ষার্থী নামমাত্র ২ টাকার বিনিময়ে ৮ ঘণ্টা এই সাইকেল সেবাটি ব্যবহার করতে পারবেন। সাইকেল গ্যারেজ থেকে শিক্ষার্থীরা নিজের নাম ও আইডি লিখে প্রয়োজন অনুয়ায়ী সাইকেল ব্যবহার করতে পারছেন। সেবাটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাজে যেমন আসবে, তেমনি হলের গ্যারেজগুলোও পরিষ্কার থাকবে। বিশাল ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসগুলো সাধারণত অ্যাকাডেমিক ভবন থেকে বেশ কিছু দূরে ফার্মে অনুষ্ঠিত হয়।

বাকৃবির ছাত্রলীগ সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ বলেন, হলে অনেক পুরোনো সাইকেল থাকে, যেগুলো অনেক সিনিয়ররা রেখে চলে যান অথবা বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে দীর্ঘদিন মালিক ছাড়া হলে পড়ে থাকে। হলে যাদের সাইকেল নেই ও আর্থিকভাবে কিছুটা অসচ্ছল তারা এই সাইকেলগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। মূলত, সেই সাইকেলগুলোকে কাজে লাগাতে এই উদ্যোগ। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য এই সেবাটি খুব উপকারে আসবে। ক্যাম্পাসে নতুন শিক্ষার্থীদের আগমন হচ্ছে। তারা ক্লাসে যাওয়ার জন্য বাইসাইকেল সেবাটি ব্যবহার করতে পারবেন। জয় বাংলা বাই-সাইকেল সার্ভিসের মতো সেবা অন্য হলগুলোতে নেওয়া যেতে পারে। হলের যেসব সাইকেলের কোনো মালিকানা নেই ও যেগুলো পরিত্যক্ত সেই সাইকেলগুলো মেরামত করে ছাত্রদের জন্য ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

সাইকেল সেবাটি ব্যবহার করে সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এম এ ইউসুফ বলেন, পুরাতন জিনিসকে সুন্দরভাবে ব্যবহার উপযোগী করার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত মানব প্রজ্ঞার পরিচয়। যে নষ্ট সাইকেলগুলো একসময় হলের জায়গা দখল করে অবহেলায় পড়ে থাকত, সেই সাইকেলগুলো এখন শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনের বন্ধু। হল থেকে অনেক সময় জরুরি ভিত্তিতে হেলথ কেয়ারে যেতে হয়। আবার অনেকের ফার্মে ক্লাস হয়। ফার্মগুলো হল থেকে দূরে হওয়ায় সেখানে যেতে শিক্ষার্থীদের অনেক টাকা খরচ হয়। একদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, অন্যদিকে এতদূর রিকশা কিংবা অটোতে যেতে অনেক টাকা ভাড়া দিতে হয়। জরুরি কাজে কিংবা ক্লাস-পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীরা মাত্র দুই টাকায় এ সেবাটি পাচ্ছেন।

সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মিশু মোরশেদ বলেন, জয় বাংলা বাই-সাইকেল সার্ভিসটি হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ভিন্ন ধরনের সেবা। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়া সাইকেলগুলোকে কাজে লাগাতে এই উদ্যোগ। এই সাইকেল সুবিধার ফলে একজন শিক্ষার্থীর ফার্মের ক্লাসে যেতে সময় বাঁচিয়ে ক্লাস করতে পারবে। এ ছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে শিক্ষার্থীদের শহরে যেতে হয় আর এই জ্যামের শহরে সাইকেল ব্যবহার করে শহরে যাওয়া একদিকে যেমন টাকা সঞ্চয়, অন্যদিকে সময়ের অপচয় রোধ হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close