
ক্যাম্পাসে সংগঠন সংকট ও প্রতিবন্ধকতা

একটি সংগঠন একজন শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। নিজেকে দক্ষ নেতৃত্ব, যোগ্য ও প্রগতিশীল হিসেবে গড়ে তুলতে সংগঠনের বিকল্প নেই। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অবস্থানে এসেও ক্যাম্পাসগুলোতে সংগঠনের সংকট দেখা যায়, যা আছে সেগুলোতেও তৈরি হয় নানা প্রতিবন্ধকতা। এ বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের ভাবনাগুলোই তুলে ধরেছেন পলাশ চন্দ্র রায়
প্রয়োজন সক্রিয় ও দক্ষ জনবল
একটি সংগঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হলো দক্ষ জনবল। সক্রিয় ও দক্ষ জনবল ছাড়া কোনো সংগঠনই ক্যাম্পাসে তাদের কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে না। আপনার সংগঠনের প্রশিক্ষিত করে তুলতে প্রয়োজন নিয়মিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও ইভেন্ট আয়োজন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অধিকাংশ সংগঠনের জন্য পর্যাপ্ত ও সুপরিসর রুম নেই। অধিকাংশ সময়ে সংগঠনগুলোকে দেওয়া হয় না প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ। ফলে ক্যাম্পাসভিত্তিক সংগঠনগুলোর কাজকর্মে চলে আসে এক ধরনের নিষ্ক্রিয়তা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত কাজের পরিধি বিবেচনা করে সংগঠনগুলোকে নিজস্ব রুম এবং প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া। পাশাপাশি অনেক সংগঠনে স্বজনপ্রীতি, আঞ্চলিকতা এবং বিভাগভিত্তিক গ্রুপিং সংস্কৃতি দেখা যায়। এগুলো একটি সংগঠনের গতিশীলতাকে রোধ করে। যোগ্যতা ও সংগঠনে সক্রিয়তাকে মানদণ্ড বিবেচনা করলে এ ধরনের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব।
মো. ফাহাদ হোসেন
স্কুুল ও কলেজ বিতর্ক সম্পাদক, নোবিপ্রবি ডিবেটিং সোসাইটি
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াতে হবে
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, এর বিকাশ ও বুদ্ধিমত্তার সুষ্ঠু চর্চার জন্য প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং তা নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর ভূমিকা সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে চিন্তা করলে মুক্তচিন্তার সোপান হতে পারে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের একত্র হওয়া, বিভিন্ন মতাদর্শের প্রয়োগ, শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা অন্বেষণ কিংবা পছন্দের ও আগ্রহের ক্ষেত্রগুলোতে নিজেদের আরো দক্ষ করে তোলা এই সবকিছুই সম্ভব সুপরিচালিত এবং গতিশীল সংগঠনের সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে। একটি সংগঠনকে গতিশীল রাখার ব্যাপারে অবশ্যই তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে। শুধু নিবেদিতপ্রাণই নয়, থাকতে হবে সাংগঠনিক দক্ষতা এবং পরিশ্রমের মনোবল। ক্যাম্পাসে পরিচালিত বিভিন্ন সহশিক্ষা সংগঠনের বিষয়ে প্রশাসনের উদাসীনতা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া সংগঠন সংশ্লিষ্ট সবার ক্ষীণ তৎপরতা এবং প্রচারের ঘাটতি শিক্ষার্থীদের কাছে সংগঠনকে পৌঁছানোর ক্ষেত্রেও একটি বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। এই সবকিছু থেকে উত্তরণের উপায় হলো ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা। তাহলেই প্রশাসন উদ্যোগী হবে, শিক্ষার্থীরাও আগ্রহী হবে। বর্তমান প্রজন্মে নিজেকে সেরা প্রমাণের চেষ্টায় শিক্ষার্থীদের অনুশীলনের পথ অনেকখানি সুগম হবে।
তৌসিফ ফারহান
সাংগঠনিক সম্পাদক, গণ বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি
গণ বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষার্থীদের সংগঠনমুখী করাতে হবে
বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সামাজিক সংগঠনগুলোর গতিশীলতা হয়ে পড়ছে মন্থর। যেমন : অদক্ষ ও অযোগ্য ব্যক্তি সংগঠনের নেতৃত্ব পেলে সে সংগঠনের সমন্বয় সঠিক হয় না। আবার সংগঠনের যদি পদলোভী ব্যক্তিরা যুক্ত থাকে তাও সংগঠনের জন্য হানিকর। সংগঠনের কর্মীরা যদি নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয় তাহলে তা সংগঠনের গতিশীলতাকে বাধা দেয়। এ ছাড়া সংগঠনের স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত না হওয়া বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের সঙ্গে সংগঠনকে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। প্রতিবন্ধকতা যেমন আছে, তেমনি উত্তরণের পথও রয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে সংগঠন মুখী হয় সেজন্য সংগঠনের কার্যকারিতা বোঝাতে হবে। সংগঠনে একজন কর্মী নেতৃত্বদান, বিভিন্ন পরিস্থিতির মোকাবিলা, হঠাৎ উৎপন্ন সমস্যার সমাধান, অর্থ ও সময়ের সমন্বয় করা শিখতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাননির্ভর সংগঠনগুলোর প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার সচেতনতা। কিন্তু আমরা ভুলে যাই আপাতদৃষ্টিতে সংগঠন পরীক্ষার মার্ক না দিলেও দিনশেষে একজন ভালো সংগঠক যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে শিক্ষার্থীদের সংগঠনমুখী করার জন্য। শিক্ষার্থীরা যদি সংগঠনবান্ধব হয়ে থাকে তবে সংগঠনের গতিশীলতার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতাই বড় হয়ে দাঁড়াবে না।
পল্লী মণ্ডল
সাধারণ সম্পাদক, বায়স্কোপ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
বাস্তবমুখী কার্যক্রম বাড়াতে হবে
সংগঠনের গতিশীল বৃদ্ধির প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বাস্তবমুখী কার্যক্রমের অভাব। সংগঠনগুলোতে প্রাথমিক অবস্থায় সবার আগ্রহ থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আগ্রহ কমতে থাকে। অধিকাংশ সময়ে পদমর্যাদার পেছনে ছুটতে দেখা যায়। অযোগ্য ও অদক্ষ ব্যক্তি নেতৃত্বে এলে আনুগত্যহীনতা ও পরামর্শ ছাড়া কাজ করতে দেখা যায়। যার ফলে নিবেদিত ্রাণ কর্মীরা কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। অভাব দেখা দেয় দায়িত্ব পালনে সক্ষম কর্মীর। প্রতিবন্ধকতা উত্তরণের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে মেধাবী ও নেতৃত্ব গুণসম্পন্ন ছাত্রদের সংগঠনে অন্তর্ভুক্তকরণ। এজন্য সংগঠনের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের হাল না ছেড়ে সংগঠনের গতিশীলতা আনয়নে কাজ করে যেতে হবে। নবীন কর্মীদের আগ্রহ ধরে রাখার জন্য তাদের যথাযথ নার্সিং করতে হবে। সঠিক ব্যক্তিকে সংগঠনের নেতৃত্বে আনয়নে কাজ করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।
সাব্বির হোসেন
সাধারণ সম্পাদক, বাঁধন
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
"