জীবন কুমার সরকার

  ১৯ মার্চ, ২০২৩

কেমন আছি চীনে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা!

বাড়ি থেকে পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরের শহরে শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে দারুণ মুহূর্ত কাটছে বর্তমানে আমার। উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে বর্তমানে অধ্যয়নরত আছি চীনের হুনান প্রদেশের চাংশা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

আমরা যারা চীনে পড়াশোনা করছি এবং করোনা-পরবর্তী সময়ে বর্তমানে চীনে চলে আসতে পেরেছি সেটা সত্যি স্বপ্নের মতো। ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে অনেক আশা নিয়ে যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু তারপরই করোনার ভয়াল তীব্র থাবা। একে একে তিনটা সেমিস্টার অনলাইনেই শেষ হয়ে গেল। আশা করেই নিয়েছিলাম বাকি সেমিস্টারগুলো আমাদের অনলাইনের শেষ করতে হবে না। তীব্র হতাশা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ৬ হাজারের বেশি চীনে পড়ুয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করছিলাম সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার।

অবশেষে সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পর চীনে ফিরতে শুরু করেছি আমরা। আমি নিজের ক্যাম্পাসে এসেছি গেল বছর ডিসেম্বরে।

চীনে প্রবেশের পর আমার স্বল্প দিনের অভিজ্ঞতা : চীনে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বড় একটি সমস্যা হলো চীনের সাধারণ মানুষ সাধারণ ইংরেজি শব্দগুলো সম্পর্কে বেশ অজ্ঞ। তবে, চীনের মানুষেরা সত্যি অনেক আন্তরিক। আমরা দোভাষী সফটওয়্যার ব্যবহার করে যদি কোনোভাবে বোঝাতে পারি আমাদের কী প্রয়োজন, তারা বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে আমাদের সাহায্য করেন। আমি একদম আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাকেশনের শুরুর সময়টায় প্রবেশ করেছি। যেহেতু ক্লাস বন্ধ এবং হাতে যথেষ্ট সময় রয়েছে। এ সময়টাকে কাজে লাগানোর জন্য প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে হেঁটেই চেনার চেষ্টা করলাম। বিকেল হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাইমস টাওয়ার, সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনের লেকের পাড়ে বসে গিটার হাতে নিয়ে গান গাওয়ার চেষ্টা করতাম। বেশ কিছু চাইনিজ বন্ধুও জুটল এই স্বল্প সময়ের আড্ডায়। তাদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে শেখার চেষ্টা করলাম তাদের সংস্কৃতি এবং ভাষাটাও।

ক্যাম্পাসের প্রথম প্রোগ্রাম বসন্ত উৎসব এবং হুনান আর্ট মিউজিয়ামে আর্ট এক্সিবিশন : বসন্ত উৎসবের যখন নোটিস দেওয়া হলো তখন খুব উৎফুল্ল ছিলাম। অংশগ্রহণ করলাম চীনা সংগীত, হানফু শো এবং কবিতা আবৃত্তিতে। বাংলা গান মাঝেমধ্যেই গাওয়া হলেও প্রথমবার সেই উৎসবেই পরিবেশন করলাম একটি চীনা গান। খুব প্রশংসাও কুড়ালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং উপস্থিত সবার কাছ থেকে। তার কিছুদিন পরই চাইনিজ আর্ট, পেইন্টিং এবং চীনা বিখ্যাত পেইন্টার চি বাইসি সম্পর্কে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই গিয়েছিলাম হুনান আর্ট মিউজিয়ামে।

চাংশা শহরকে জানার চেষ্টা : তীব্র শীত ছিল ভ্যাকেশনের সময়টাতে। যখনই বাইরের আবহাওয়া একটু অনূকূলে তখনই বন্ধুদের সাথে অথবা ক্যাম্পাসে জ্যেষ্ঠ ভাইদের সাথে চলে যেতাম ঘুরতে। এরই মধ্যে ঘুরেছি কমলা দ্বীপ, ইয়োলো মাউন্টেন, কাইফু মন্দির, সেন্ট্রাল সাউথ ইউনিভার্সিটি, হুনান ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি স্থানে। চেনার চেষ্টা করেছি চাংশা শহরটাকে।

বাঙালি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট : আমাদের ক্যাম্পাসে প্রায় দেড় হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাঙালি শিক্ষার্থীই শতাধিক। যে কারণে চলতে-ফিরতে মনে হয় নিজের দেশেই অবস্থান করছি। প্রতিদিন বিকেল হলেই আমাদের নিয়মিত ক্রিকেট খেলা চলে। এর মাঝেই অনুষ্ঠিত হয়েছে বাঙালি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। মাঝে দুদিন পার্শ্ববর্তী সেন্ট্রাল সাউথ ইউনিভার্সিটির বাঙালি শিক্ষার্থীদের সাথেও অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রীতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট।

শিক্ষকরা যথেষ্ট আন্তরিক : চীনে ভর্তির আগে একটা সমীক্ষায় দেখেছিলাম, এখানে প্রতি সতেরোজন শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় একজন শিক্ষক পরিশ্রম করেন। আমাদেরও শিক্ষা প্রদানের জন্য এবং শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন সহযোগিতার জন্য আন্তর্জাতিক কলেজে অনেক শিক্ষক রয়েছেন। কোনো পাঠে অসুবিধা হলে শিক্ষকরা আন্তরিকতার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে সমস্যাগুলোর সমাধান করে দেন।

দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর ক্যাম্পাসে ফিরে কেমন আছি আমরা : ভর্তির পর অনলাইনে ক্লাস ছিল আমাদের কাছে নরকের মতো। আমাদের অনেক সিনিয়র রয়েছেন, যারা মাত্র একটি সেমিস্টার সরাসরি ক্লাস করার পরেই দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাদের অনেকে হতাশায় আত্মহত্যার চিন্তাও করেছিলেন। সব হতাশা কাটিয়ে এখন আমরা সনাই চীনে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফিরতে সক্ষম হয়েছি। ওপরের গল্পগুলো ছিল আমার বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে মাত্র তিন মাসের বৃত্তান্ত। এখন সময়টাকে কাজে লাগিয়ে স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে দৌড়ানোর পালা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close