মাদারীপুরের একটি কৃষক পরিবারে জন্ম আয়েশার। কৃষক ঘরে বেড়ে ওঠা আয়েশা আজ একজন সফল উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা মসৃণ ছিল না তার জন্য। অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে, নানা মানুষের কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু দমে যাননি তিনি। উচ্চশিক্ষা লাভ করেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরিবারের সচ্ছলতা থাকলেও ২০১৭ সালের দিকে একবার পড়তে হয়েছিল আর্থিক সংকটে। তখন থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা করার ঝোঁক পেয়ে বসে তাকে। চাকরি খুঁজতে থাকেন বিভিন্ন জায়গায়। একটি কোম্পানিতে পেয়েও যান। কিন্তু বেশি দিন কাজ করা হয়নি সেখানে। পরে ভাবলেন নিজেই কিছু একটা করবেন। অন্যের অধীনে চাকরি না করে বরং চাকরি দেওয়ার দৃঢ় ইচ্ছা তাকে তাড়া করে। কমার্স নিয়ে পড়াশোনা করায় উদ্যোক্তা হওয়ার ঝোঁক ছিল তার আগে থেকেই।

একদিন ফেসবুকে কারুশৈলী নারী উন্নয়ন সংগঠন নামক একটি ফেসবুক পেজের সঙ্গে পরিচয় হয় আয়েশার। এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নেয় সে। এ সময় হাতের অনেক কারুকাজ আয়ত্ত হয়ে যায় তার। প্রশিক্ষণ শেষে অন্য একজনকে নিয়ে বিজনেস আরম্ভ করেন। বিদেশি কয়েকটি কোম্পানির সাথেও কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে আয়েশার। এলাকার এক ভাইয়ের পরামর্শে বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন আয়েশা। নিজের ক্রিয়েটিভিটির মাধ্যমে প্রশিক্ষকদের নজর কারতে সমর্থ হন। পরিচয় হয় নজরুল স্যার ও জসিম স্যারের সঙ্গে। এ দুজন ব্যক্তির কাছ থেকে কাজ করার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। করোনাকালে যখন সবকিছু স্থবির হয়ে যায়। তখনো আয়েশা করতে চেয়েছিল ভিন্ন কিছু। হঠাৎ এক দিন পেয়ে যান ১৫০ মণ মাছের একটি অর্ডার। নারী হয়ে এ কাজটি সম্পন্ন করতে তাকে পদে পদে পড়তে হয়েছিল নানা চ্যালেঞ্জের। নারী বলে কেউ তাকে মাছ দিতে আস্থা পাচ্ছিল না। পরে একজনের মাধ্যমে মাছ কিনতে সক্ষম হন এবং ঠিকঠাকভাবে সেগুলো ডেলিভারি দিতে পেরেছিলেন। অনেকের অনেক কটু কথা শুনলেও নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছিলেন, সেদিন। যারা তাকে মাছ দিতে চায়নি পরবর্তীকালে তাদের অনেকেই তাকে মাছ নেওয়ার প্রস্তাব দেন। অনেকেই তো বলেই ফেলেন, তোমার যত মাছ প্রয়োজন আমাদের কাছ থেকে নেবে।

আয়েশার কাজের পরিধি বেড়েছে। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন বিভিন্ন জিনিস নিয়ে। পুঁতির তৈরি ব্যাগ, ডোর হ্যাংগিং ও অন্যান্য কারুকাজ, বাটিকের তৈরি শাড়ি, থ্রি-পিস, বিছানার চাদর, পর্দার কভার, কাপড়ে নকশা তৈরি, কাঠের গহনা, কুশিকাটার বেবি ফ্রগ, ব্লকের শাড়ি, থ্রি-পিসসহ নানা পণ্য তৈরি করছেন। শিশুদের নকশিকাঁথাও রয়েছে আয়েশার কাজের তালিকায়। নিজের তৈরি পণ্যে ভিন্নতা আনয়নে আয়েশাকে যেতে হয়েছিল বিভিন্ন মেলার স্টলে স্টলে, পোশাকের শো-রুমে। কঠোর পরিশ্রম আর নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আজ অনেকের কাছেই সে অনুপ্রেরণা। দেশি-বিদেশি কসমেটিকস, রুপার জুয়েলারির বিজনেসও রয়েছে আয়েশার।

এ ছাড়া সেবামূলক কাজেও সক্রিয় এ নারী। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত রয়েছেন। কয়েকটি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত আছেন। বৃক্ষরোপণ, অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো, দরিদ্র্য ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থাসহ নানা সেবামূলক কার্যক্রমে তিনি সক্রিয়।

"