reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৫ মার্চ, ২০২৩

সম্ভাবনাময় দুই তরুণের গল্প

বাস্তবতার চাপাকলে পিষ্ট চারপাশে তাকালে অনেক ঘটনাই চোখে পড়ে। সমাজে দীপ্তিমান আলোগুলো চুষে খাওয়া ব্ল্যাক হোলের সংখ্যাও কম নয়। সম্ভাবনার তারকাগুলো পুঁজিবাদী সমাজে হারিয়ে যায় হরহামেশাই, যারা নিজেদের অবস্থান তুলে আনতে পারেন না অন্য দশ-পাঁচটা মানুষের সামনে। তাদের নিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (গবিসাস) আয়োজন করে ‘লিখি নিজের কথা’ প্রতিযোগিতার। বিজয়ী দুই তরুণকে নিয়ে লিখছেন সানজিদা জান্নাত পিংকি

‘ছোটবেলার স্বপ্নপূরণ হয় না সবার’

আনসারুজ্জামান সিয়ামের জন্ম রাজশাহীর নবাবগঞ্জে। গ্রামের মেঠোপথে বন্ধুদের সাথে খেলাধুলাই ছিল তার নেশা। স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ডাক্তার হবে। পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ৭ম স্থান অর্জন করে। পড়াশোনার সুযোগ পায় শতবর্ষী হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে। মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হয়। তারপর? হঠাৎ তার বাবা অসুস্থ হন। শুরু হয় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। উচ্চমাধ্যমিকে ফলাফল বিপর্যয় ঘটে। কিছুদিন পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন সময় কাটায়। করোনাকালে টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যায় তার পরিবার। এরই মধ্যে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। একটি আসনও নিজের করে নিতে পারিনা সিয়াম।

পরে গ্রামীণ জনপদকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ভর্তি হয় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদে। তিনি বলেন, ‘প্রাণিজগতের সাথে আত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার এক উন্নত মাধ্যম পশু চিকিৎসক হওয়া। পশু-পাখির চিকিৎসার মাধ্যমে গণমানুষের সাথে এক প্রকার আত্মিক সম্পর্ক হয়ে যায়। ছোটবেলার স্বপ্নপূরণ হয় না সবার।’

বর্তমানে তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাণী নিয়ে কাজ করছেন। অসুস্থ পশু-পাখি দেখলেই ছুটে যান। সিয়ামের বিশ্বাস, প্রাণী সেবা এক দিন তাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।

‘ক্যামেরার গপ্প’

কুষ্টিয়ার ছেলে স্বাগত সরকার সৈকত। যখন নিজের মোবাইল ছিল না, তখন থেকে তার ফটোগ্রাফির হাতেঘরি। ছবি তুলতেন কখনো বাবার ফোনে, কখনো বোনের ফোনে। এভাবেই কেটে যায় বছরখানেক। ২০১৯ সালে এক ছবি প্রতিযোগিতায় তার ছবি এক্সিবিশনে নির্বাচিত হয়। তবে সৈকতের কাছে রেজিস্ট্রেশনের টাকা ছিল না। অঝোরে কান্না করেই থমকে যায়নি স্বাগত।

এখন পড়াশোনা করছেন সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগে। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। ছবি তুলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে পেয়েছেন সম্মাননা ও পুরস্কার। ছবির ফ্রেম, অ্যাওয়ার্ড, সার্টিফিকেটসহ ঝুলিতে যোগ হয়েছে নানা অর্জন। বর্তমানে তিনি গণ বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রচার ও প্রদর্শনী সম্পাদকের দায়িত্বেও রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মন খারাপের দিনে ছুটে যেতাম ছবি তোলার জন্য। একটি ছবি জন্য কয়েক কিলোমিটার সাইকেল চালিয়েছি। ছবি তুলে এনে বাবাকে দেখাতাম। যদিও বাবা খুব একটা ছবি বুঝত না, তবুও দেখাতাম।’ তিনি আরো বলেন, ‘দিন শেষে সুন্দর একটি ছবি মনের প্রশান্তি দেয়। এজন্যই ছুটে চলেছি ছবির পেছনে। পরবর্তীতে ফটোগ্রাফি পেশা হিসেবে নেওয়ার ইচ্ছা আছে।’

উল্লেখ্য, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দশম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত জমকালো অনুষ্ঠানে বিজয়ী দুজনকে গবিসাস সম্মাননা প্রদান করে দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যাত্রা শুরু করা সাংব্লাদিক সংগঠনটি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close