মাহমুদা টুম্পা, ইবি

  ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

উথাল-পাথাল ঢেউয়ে আমাদের উচ্ছ্বাস

বৈচিত্র্য সন্ধানী মানুষ কখনো স্থির হয়ে থাকতে পারে না। নতুন আকর্ষণে মানুষ প্রতিনিয়ত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করে। শিক্ষাসফর শিক্ষার্থীদের জ্ঞান সঞ্চয়ের একটি উৎকৃষ্ট পন্থা। এতে অভিজ্ঞতা বাড়ে এবং হৃদয়ের প্রসারণ ঘটে। অজানাকে জানার আগ্রহে অন্তরে পুঞ্জিভূত শক্তি নিয়ে রেডি ইবির ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। ৪০ শিক্ষার্থীর মনে সমুদ্র দেখার বাঁধ ভাঙা আনন্দ। আমাদের দিকনির্দেশক হিসেবে ছিলেন সরফরাজ নেওয়াজ, নাসিম ও সুহাস স্যার। ফোনালাপের মাধ্যমে হান্নান স্যার ট্যুরের দোয়া পড়ে দিলেন। আরো বললেন, সমুদ্রের মতো বিশাল মন নিয়ে ফিরতে।

শান্তিপূর্ণ বার্তার আহ্বানে সাড়ে ৫টায় আমাদের বাস কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা করল। শুরু হলো ট্যুরের মহাআনন্দ। সে কি আনন্দ! যেন আকাশে বাতাসে সুখের স্পর্শ লেগেছে। বাস যত এগোয়, ততই আনন্দের রেশ বেড়ে যায়। বক্সে গান বাজছে, সঙ্গে নাচ চলছে, তাল-লয় কিছুই ঠিক নেই- তবু মনের আনন্দে ঢেউ খেলছে। যাতায়াতের এক পর্যায়ে সুহাস স্যার এক এক করে মাইকে নাম ঘোষণা করলেন, সবাইকে গান গাইতে বললেন। সবাই সিঙ্গেল করে গান গাইল। এর সঙ্গে যুক্ত হলেন বাকি স্যাররাও। প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর আমরা কক্সবাজারে পৌঁছলাম। সকালের নাশতা এখানেই সারলাম। তারপর অগ্রিম বুক করা মোটেল উপল রিসিপশনে গেলাম। যে যার রুমে ফ্রেস হয়ে নিল। লোগো ডিজাইন টি-শার্ট পরে নিল। সাগরের উদ্দেশে রওনা করলাম দুপুর সাড়ে ১২টায়।

ঝাউবন পেরিয়ে লাবণী সি বিচে গেলাম। সমুদ্রে উত্তাল ঢেউ কাছে টানছে। সেই ডাকে সাড়া দিতে অনেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ল সমুদ্রের বুকে। স্রোত মনের মধ্যে পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে। সূর্যটাকেও ফুলঝুরি মনে হচ্ছে। চিকচিক করছে বালি। আবার অনেকেই সেই বালিতে আলপনা আঁকছে। প্রিয়জনের নাম লিখছে। স্রোতের ঢেউ আছড়ে পড়ছে বালির বুকে। ঝিনুকগুলো যেন হীরক। বড় বড় ঢেউ পায়ে দিচ্ছে রোমাঞ্চকর অনুভূতি। হুল্লোড়ে মেতে ওঠা। ছোটাছুটি করে অদূরের ঢেউকে মুঠোবন্দি করা। নীল ঢেউয়ের সাদা ফেনার কারুকার্য মনে রংধনু এঁকেছে। কেউ কেউ কাদা ছোড়াছুড়ি করছে।

বালিতে বসে পোজ দিয়ে ছবি তুলছে। আবার কেউ কেউ সমুদ্র ডুব দিয়ে দুঃখ ভাসিয়ে দিচ্ছে। নতুন করে সঞ্চারিত করছে নিজের সত্তাকে। অনেকেই ঢেউয়ের সঙ্গে পাঙ্গা দিয়ে সারি করে স্মৃতিচিহ্নকে ফোনবন্দি করছে। নাগরিকতার মরুময় তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে আনন্দের হিল্লোল বইছে মনে প্রাণে। বয়সে পাল্লা ভারী হয়ে দাঁড়ায়নি। এ যেন বাল্যকাল। উন্মুক্ত শৈশব বাগিচা। স্বর্গীয় সুষমার দেদীপ্যমান। সুরভিত পুষ্পের রাশি রাশি ঘ্রাণ।

পরের দিন আমরা গেলাম পাটুয়ারটেক, সূর্যাস্ত দেখার জন্য। দুপুরের লাঞ্চ সেখানেই সারলাম। উদগ্রীব নিয়ে অপেক্ষা করছি কখন সূর্যিমামা ডুব দিবে। সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যেন কাটছেই না। অনেকেই ছাতায় বসে সমুদ্রের ঢেউ দেখছে। আবার কেউ কেউ কালো পাথরে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের সঙ্গে মিতালি করছে। অপেক্ষার পালা শেষ হলো। দিবস ও রজনীর আগমনে পৃথিবী যেন মিলন বিরহ খেলায় মেতে উঠল। সূর্যিমামা টুপ করে ডুব দিল সমুদ্রের বুকে। এ যেন নতুন এক আবেশ, অপার্থিব মৌনতা। সমুদ্র শুধু ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২৫তম ব্যাচকে একত্রিত করেনি, স্নেহডোরে বেঁধেছে স্মৃতিকে। যে স্মৃতির ঢেউ এখনো হৃদয়ে উথাল পাথাল করছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close