reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

সামাজিক সংগঠন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

একটা সময় ছিল যখন সামাজিক সংগঠনগুলো শুধু শহরকেন্দ্রিক ছিল। এখন সে সময়টা বড্ড সেকেলে হয়ে গেছে। এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও অসংখ্য সামাজিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। সমাজের নানা সংকটে সামাজিক সংগঠনগুলো নিরলসভাবে কাজ করছে। এইসব সংগঠন থেকে বহু অসহায় মানুষ উপকৃত হচ্ছে। এসব সংগঠনের সহযোগিতায় কখনো গৃহহীনরা পাচ্ছে মাথা গোঁজার ঠাঁই কখনো অনাহারি পাচ্ছে পর্যাপ্ত খাবার। সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা পাচ্ছে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ। একটি সমাজে সামাজিক সংগঠন থাকা অনিবার্য। করোনাকালে এই কথাটি সমাজকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সামাজিক সংগঠনগুলো। একটি সমাজে সামাজিক সংগঠনের কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত সংগ্রহ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মু. আবদুল্লাহ সরকার

‘সামাজিক সংগঠন সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ’

সমাজ হচ্ছে একটা শৃঙ্খলাবদ্ধ সংগঠনের মতো, যেখানে বিভিন্ন শ্রেণি, ধর্ম, পেশা, বয়স এবং চিন্তাধারার মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে। ভৌগোলিক অবস্থান সমাজের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে, তাই অঞ্চলভেদে সমাজব্যবস্থার পার্থক্য দেখা যায়। সমাজের সদস্যদের মননের উন্নয়ন কিংবা অবনতির ওপরেও সমাজের অবস্থা নির্ভর করে। আবার কোনো সমাজের গতি-প্রকৃতি কেমন হবে তা নির্ভর করে ওই সমাজের যুবক বা তরুণ শ্রেণির মানসিকতা কীভাবে বেড়ে উঠছে। সামাজিক সংগঠন মূলত সমাজ নিয়ে কাজ করে; সমাজের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উন্নয়ন, প্রচার-প্রসার এবং সমাজে নতুন কিছু উদ্ভাবনের জন্য সংগঠনগুলো কাজ করে থাকে, যার মূল চালিকাশক্তিই থাকে তারুণ্য। সামাজিক সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডের মধ্যে থাকে মাদকবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন, রাস্তাঘাট সংস্কারের কাজ, সাঁকো মেরামতের কাজ ইত্যাদি। এসব কাজের সঙ্গে তরুণরা যুক্ত থাকলে তারা কোনো অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার সময় পায় না। উপরন্তু সমাজকে বলা হয় দ্বিতীয় পরিবার, সেখানে সামাজিক সংগঠনগুলো সেতুবন্ধনের কাজ করে। বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে আধুনিকায়নের এই যুগে সমাজের প্রায় শতভাগ মানুষ আধুনিকতার নামে কৃত্রিমতার দিকে চলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, এগুলো সমাজের অবক্ষয়ের অংশ। এই অবক্ষয়ের রোধ করতে হলে সক্রিয় হতে হবে সামাজিক সংগঠনগুলোকে। সংগঠনগুলো তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করলে, সমাজের মানুষ বিভিন্ন অফলাইন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এবং এর মাধ্যমে সামাজিক বন্ধনের তথা সর্বোপরি সমাজের উন্নয়ন সাধিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।

ফাহিম মুনতাসির রাফিন

শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

‘সামাজিক সংগঠন সংগঠকদের আত্ম উন্নয়ন করে’

মানুষ সামাজিক জীব তাই স্বভাবতই মানুষকে সমাজবদ্ধ হয়ে থাকতে হয়। শুধু নিজের ভালো থাকাটাই মানুষের প্রধান লক্ষ্য হতে পারে না। সমাজে বাস করে সমাজের জন্য কিছু করার ক্ষেত্রে মানুষ দায়বদ্ধ। সেদিকটা লক্ষ্য রেখেই সমাজের উন্নয়নকাজে বহুকাল থেকেই মানুষ সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশ নিয়ে আসছে।

আমাদের দেশেও বর্তমানে বিভিন্ন ধরসের সামাজিক সংগঠন সমাজের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। কার্যক্রমগুলো হলো- শারীরিক ও মানসিকভাবে অসমর্থ ব্যক্তিদের কল্যাণ, সমাজবিরোধী কার্যকলাপ হতে জনগণকে বিরত রাখা, সামাজিক শিক্ষা, ভিক্ষুক ও দুস্থদের কল্যাণ, দরিদ্র রোগীদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন, বৃদ্ধ ও দৈহিকভাবে অসমর্থ ব্যক্তিদের কল্যাণ। এসব সংস্থা সরকারের পাশাপাশি উন্নয়নমূলক আরো বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করে সমাজের উন্নয়নের পাশাপাশি আত্ম উন্নয়নও সম্ভব। সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকলে মানসিক চাপ-মুক্তি, নিজের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি, পরমত সহিষ্ণুতা এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়। এখনকার সময়ে উঠতি বয়সের তরুণদের মধ্যে বেপরোয়া আচরণ যেমন উদ্ধত আচরণ, মাদকাসক্তি, ছিনতাই ইত্যাদি লক্ষ করা যায়। যা মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, জনকল্যাণমূলক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকলে এ ধরনের বিপথগামীতা থেকে তরুণসমাজ মুক্ত থাকবে, মানুষের কল্যাণার্থে কাজ করাই যে জীবনের আসল লক্ষ্য, এই বোধ তৈরি হবে।

সর্বোপরি এ কথা বলাই বাহুল্য, সামাজিক সংগঠনগুলো সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তো রাখছেই, সঙ্গে সংগঠনের সদস্যদের আত্ম উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে এসব সংগঠন বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু সমাজকল্যাণমূলক কাজে অংশ নিলেও বিস্তৃতভাবে সমাজের কোনো উন্নয়ন করতে পারছে না, তবে এ ধারণাটি ভুল, এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাই ধীরে ধীরে মহীরুহের আকার ধারণ করছে, মানুষের জন্য বিনাস্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনগুলো যা সমাজের অন্যান্য মানুষকেও অনুপ্রানিত করছে।

নাসিম সরকার

শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

‘সমাজের উন্নয়নে সামাজিক সংগঠনের গুরুত্ব’

সামাজিক জীব হিসেবে আমাদের অন্যতম কাজ হচ্ছে সামাজিক উন্নয়ন। সামাজিক উন্নয়ন সঠিক ও সাবলীলভাবে বাস্তবায়ন করতে সামাজিক সংগঠনের ভূমিকা অপরিসীম। একটি মানবিক সংগঠন মানে অনেক মানবিক মানুষের সম্মেলন। একাধিক বিশুদ্ধ মানবিক আত্মার কেন্দ্রীভূত উদ্যোগে সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সহজে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে, একইভাবে লাভবান হয় সুবিধাবঞ্চিত মানুষরা। শুধু মানবিক বিকাশের জন্য সামাজিক সংগঠনগুলো কাজ করে না, বরং মানুষের সাংগঠনিক জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং তার সুফল ব্যক্তি তার কর্মজীবনে ভোগ করে থাকে। জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সামাজিক সংগঠনের বিকল্প নেই। ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে নাগরিক জীবন পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ধাপে নিজের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে সামাজিক সংগঠনগুলো বড় অবদান রাখে। প্রত্যেক ধর্ম সমাজ কর্মকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দিয়েছে। ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে থাকে। সর্বোপরি একটি সামাজিক সংগঠন যেন অনেকগুলো সুশীল সমাজের অনুঘটক।

সাইয়াদুর রহমান শাওন

শিক্ষার্থী, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।

‘স্বেচ্ছায় রক্তদান নিয়ে কাজ করছে সামাজিক সংগঠন’

বর্তমানে সমাজের মানুষের উন্নয়নে দলবদ্ধভাবে কাজ করতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। কিছু উদ্যমী তরুণের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে এসব সামাজিক সংগঠন উদ্দেশ্য পূরণে সফল হয়ছে। সমাজের নানা সংকটে সামাজিক সংগঠনগুলো নিরলসভাবে কাজ করছে। এসব সংগঠন থেকে বহু অসহায় মানুষ উপকৃত হচ্ছে। যখন আমাদের সমাজে কোনো বিপর্যয় নেমে আসে বিশেষ করে মহামারি, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের মতো কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় নানা স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠন। তাদের অনেক কার্যক্রমের মধ্যে রক্ত সরবারহের ব্যবস্থাটাই ধরুন- বাংলাদেশে প্রতি বছর মোট রক্তের চাহিদার চেয়ে একটা বড় অংশ ঘাটতি থেকে যায়। কিন্তু বর্তমানে কিছু উদ্যমী তরুণের নিরলস পরিশ্রমের ফলে স্বেচ্ছায় রক্তদানে অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। অনলাইনে ও অফলাইনে অসংখ্য স্বেচ্ছায় রক্তদান সংক্রান্ত সংগঠন গড়ে উঠেছে। ফেসবুকে গড়ে উঠেছে লাখ লাখ সদস্যের গ্রুপ। এইসব গ্রুপে তরুণদের স্বেচ্ছায় রক্তদানে নানাভাবে উৎসাহিত করা হয়। এখন অসংখ্য তরুণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রক্তদানের মতো মহৎ কাজে অংশগ্রহণ করছে। সমাজের মানুষের উন্নয়নে ও ঘাটতি নিরসনে সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা নিবেদিত প্রাণ।

বর্তমানে সমাজে অসংখ্য সামাজিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। যাদের একমাত্র লক্ষ্যই হলো সমাজের উন্নয়নে কাজ করা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংগঠনগুলোকে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দিলে তাদের কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে।

শাহ্ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ

শিক্ষার্থী, দারুন্নাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা

ডেমরা, ঢাকা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close