মো. মারুফ মজুমদার, চবি

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

চবি লেখক ফোরামের চড়ুইভাতি উৎসব

‘হিল্লোল তুলে কল্লোলে চলিয়া যায়’, প্রান্তর গহীন সবুজ আর ফুলেল হয়ে ওঠে সজীব। দেশ-বিদেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে বিভোর চবির বুকে একবিংশ শতাব্দীর বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ লেখকদের নৈসর্গের আবহে শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন দিনে তথা ইংরেজি নববর্ষের প্রারম্ভে আয়োজিত হয় গ্রামীণ ঐতিহ্যের অন্যতম অংশ চড়ুইভাতি। সৃষ্টিশীল লেখকদের দেশ-কাল নির্ভেদে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ককে ইস্পাত সদৃশ সুদৃঢ় করার অভিপ্রায় নিয়ে নয়নাভিরাম চবির বুকে ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চড়ুইভাতির মাহাত্ম্য কতখানি তা বলা বেশ মুশকিলই বটে।

কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালে দিগবিদিক যখন জবুথবু অবস্থা তখন ঠিক সাড়ে ৯টায় চবির লেখক ফোরামের সৃষ্টিশীল তারুণ্যের সক্রিয় উপস্থিতি যেন চবির নৈসর্গিকীয় স্থান বোটানিক্যাল গার্ডেনের সৌন্দর্যের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে গেল। সবার সক্রিয় অংশগ্রহণে ১০টা থেকে শুরু হয় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ইভেন্ট।

এগুলোর মধ্যে বালিশ খেলা, হাঁড়ি ভাঙা, বেলুন ফোঁটানো অন্যতম; খেলা শেষে পুরস্কারের ব্যবস্থা ছিল। তবে মজার বিষয় হচ্ছে একটি ইভেন্ট ছিল এইরকম যেখানে সবাইকে বিভিন্ন সেগমেন্ট দেওয়া থাকবে। সেগমেন্ট অনুসারে কেউ অভিনয়, কেউ গান, কেউ কমেডি, মূকাভিনয় করে। এতে করে শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করতে অপ্রতুল ভূমিকা রাখবে তা বলাবাহুল্য। হয়তো এজন্যই, সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার ব্রতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ তরুণ লেখক ফোরাম। দুপুর গড়ার আগ মুহূর্তে আসে ফোরামের উপদেষ্টা চবির বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শ্রদ্ধাভাজন শেখ সাদী স্যার, তার কাব্যিক ভঙ্গিমায় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য মুখ নিঃসৃত বাণীগুলো যেকোনো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের এগিয়ে চলার পাথেয় সমতুল্য। উপস্থিত ছিলেন প্রিয় কৌশিক স্যার, যিনি মধ্যাহ্নভোজ পরবর্তী সুরেলা কণ্ঠে গান গেয়ে সবার মন জয় করে নিয়েছিলেন।

মধ্যাহ্নভোজ শেষে শুরু হয় ফটোসেশন। ফটোসেশন পরবর্তী সবচেয়ে বড় চমক অপেক্ষায় থাকে উপস্থিত লেখকবৃন্দ। আর তা হচ্ছে র‌্যাফেল ড্র। লেখক ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. নেজাম উদ্দিনের চমৎকার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের অন্তিমদশায় উপস্থিত স্যারদের দিকনির্দেশকমূলক বক্তব্যে অনুষ্ঠানের ইতি টানা হয়। বলতেই হয়, চড়ুইভাতি আয়োজনে চবির লেখক ফোরামের বর্তমান সভাপতি, মো.আকিজ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক মো. মুরাদ হাসান, শেখ রফিক উজ্জামান, সিফাত তালুকদার, তাওহিদা আক্তারসহ সংশ্লিষ্ট সবার নিরলস প্রচেষ্টার চড়ুইভাতি প্রশংসার দাবি রাখে। বিকালের গোধূলি লগ্নে পশ্চিমাাকাশে রক্তিম আভা আমাদের জানিয়ে দিল এবার ফেরার পালা। সারা দিনের পরিশ্রমে সূর্যি মামা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেও ক্লান্তির কোনো ছাপ ছিল না উজ্জীবিত তারুণ্যের চোখে-মুখে। যেন মাঠের সীমাহীনতা ও বাতাসে সামিয়ানার চঞ্চলতা একদম তুচ্ছ হয়ে পড়েছে একঝাঁক তরুণের উচ্ছ্বলতার কাছে।

বলতে দ্বিধা নেই, গ্রামীণ আবহে ছোট্টবেলার সেই চড়ুইভাতির ঐতিহ্য আজকের প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় যেন বিলীন হয়ে যেতে বসেছে। তরুণ প্রজন্মের সামনে নিজের গ্রামীণ প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরা উচিত। পলিসরায়ত অংশ চড়ুইভাতির আসল রূপ-রস, সৌন্দর্য, তাৎপর্য জানাতে হবে সবাইকে। এতে করে বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে বহুকাল। সবশেষে, কবির ছন্দে মন গেয়ে ওঠে, একটি দিনের মুছলো স্মৃতি, ঘুচল চড়ুইভাতি,/পোড়াকাঠের ছাই পড়ে রয়, নামে আঁধার বাতি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close