reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে তারুণ্যের ভাবনা

জনসংখ্যা বৃদ্ধি রীতিমতো ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। কোথাও জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অন্যদিকে আবার কোথাও সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়া। আমাদের দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম শুরু হয় স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই। তবে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে এই ব্যাপারে সচেতনতা নেই বললেই চলে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে তারুণ্যের ভাবনা তুলে ধরেছেন শিক্ষার্থী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

জনসংখ্যা সংক্রান্ত নীতি-পরিকল্পনার দুর্বলতাণ্ডসমন্বয়হীনতা দূর করা জরুরি

জনসংখ্যার ঘনত্বের ওপর একটি দেশ বা জাতির শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, যাতায়াত ব্যবস্থা ও নাগরিক জীবন নির্ভর করে। জনসংখ্যা আমাদের দেশের একটি প্রধান সমস্যা। বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারে এক ধরনের স্থিতাবস্থা লক্ষ করা যাচ্ছে। জনসংখ্যা পরিমাণগত দিক থেকে গুণগত দিকে চলে এসেছে। পরিবার পরিকল্পনাকে মানবাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। পরিবার পরিকল্পনার বিষয়টি হচ্ছে শুধু জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার নয়, বরং স্বামী-স্ত্রী সমঝোতার মাধ্যমে কয়টি সন্তান নেবেন না-নেবেন, সন্তান নেওয়ার মধ্যে বিরতি থাকবে কি না, কার সিদ্ধান্তে সন্তান হবে, যৌথভাবে সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে যাওয়া এবং পদ্ধতি বেছে নেওয়ার ক্ষমতা থাকা, ইনফরমেশন, এডুকেশন, আন্তঃযোগাযোগের বিষয়টা রয়েছে। সময়ের পরিবর্তনে বিবাহিত দম্পতির সংখ্যা বেড়েছে। নতুন এ জনগোষ্ঠীর মাইন্ড সেটে পরিবর্তন এসেছে। তাদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনার মেসেজে নতুন ইনোভেটিভ আইডিয়া নিয়ে আসতে হবে। শিক্ষিত দম্পতি ও সম্ভাব্য টার্গেট জনগোষ্ঠীর কাছে তৃণমূল পর্যায়ে কীভাবে পৌঁছানো যায়, তা নিয়ে কর্মসূচি নিতে হবে। জনসংখ্যার বিষয়টিকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে পরিকল্পনা করতে হবে। বিশেষ করে জনসংখ্যার বয়স কাঠামো বিবেচনায় নিতে হবে। বয়স্ক লোক, কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা বাড়ছে, তাদের কীভাবে উন্নয়নের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায় তা নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। বয়স্কদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাযুক্ত সমাজ তৈরি করার দিকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। জনসংখ্যার আকার সীমিত রাখার পাশাপাশি গুণগত উন্নয়নের দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। জনসংখ্যা সংক্রান্ত পলিসিগুলোর মধ্যে দুর্বলতা ও ব্যবধান রয়েছে, তা খুঁজে সমাধানে উদ্যোগ বের করা জরুরি।

রিদুয়ান ইসলাম

শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

পরিকল্পিত জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে হবে

বিশ্বে প্রতিদিনই বাড়ছে জনসংখ্যা; কিন্তু সে হারে বাড়ছে না মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান, তাই প্রতিটি রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। নগরায়ণ, শিল্পায়ন, শিক্ষা, কর্মসংস্থানে নারীর অগ্রযাত্রা, নারীর ক্যারিয়ার, শিশু লালন-পালন ও শিক্ষার ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি, কাজের সন্ধানে দেশ ত্যাগ, ভোগবাদিতা, জীবনযাত্রা ক্রমে কঠিন থেকে কঠিনতর হওয়ায় উন্নত দেশের অনেক নারী সন্তান ধারণ এমনকি বিয়েতে পর্যন্ত আগ্রহ হারাচ্ছেন। এসব কারণে বিভিন্ন দেশে জনসংখ্যা দ্রুত কমে আসছে। একদিকে যেমন বাড়ছে জনসংখ্যা অন্যদিকে আবার হ্রাসও পাচ্ছে, উভয় সংকটে বিশ্ব। জনসংখ্যা অধিক বৃদ্ধি যেমন আমরা চাই না, তেমনি চাই না জনসংখ্যা একেবারেই কমে যাওয়া। বাংলাদেশে যেহেতু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি, তাই এ বিষয়ে আরো গুরুত্ব দিয়ে জনসাধারণের কাছে পৌঁছাতে হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ, বাল্যবিয়ে ও দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনতে হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে দেশে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে থাকবে। দেশের উন্নয়নের জন্য যত পরিকল্পনাই করি না। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে, সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়বে। এটা মাথায় রেখে আমাদের মতো জনবহুল দেশে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

আকিনা ইসলাম

শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

বিশ্বের অনেক দেশেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি রীতিমতো ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। আবার কোথাও জনসংখ্যা বৃদ্ধি নয়, বরং হ্রাস পাওয়াটাই সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বর্তমানে দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছেড়ে দেওয়ার হার যেমন আছে, তেমনি সক্ষম দম্পতির সংখ্যাও অনেক। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম এদেশে ফলপ্রসূ হয়নি। দক্ষ জনসম্পদই হচ্ছে রাষ্ট্রের মূল শক্তি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তিগত আলোড়ন মানুষের চিন্তার জগৎ, পণ্য উৎপাদন, সেবা প্রদান, এমনকি সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য প্রযুক্তি জীবনমান নিয়ন্ত্রণে প্রভাব বিস্তার করবে। এই শিল্প বিপ্লব বাংলাদেশের জন্য বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পরিবেশ ও দক্ষতাকে আগে থেকে অনুমান করা অনেক কঠিন। তারপরও যথাসম্ভব এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। বিশ্বে আগামী দক্ষতার মানদণ্ড নির্ণয় করা অনেক কঠিন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতির জন্য রাষ্ট্রের জনগণকে দক্ষ করার মূল মাধ্যম হলো শিক্ষা। শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষাক্রম নিয়ে নতুন করে ভাবনা জরুরি। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্বও এ ক্ষেত্রে অত্যাধিক। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ বা সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে শিক্ষাভাবনা ও বিনিয়োগ আরো বেশি করতে হবে। তবে অধিক সফলতার জন্য সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট এবং সুবিধাভোগীদের প্রতিনিধি পরিকল্পনা প্রণয়নেই সম্পৃক্ত রাখা প্রয়োজন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই।

শ্রেয়সী সিকদার

শিক্ষার্থী, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সোনালি ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে উদ্যোগী হোন

রাষ্ট্র নামক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানটি যে চারটি উপাদান নিয়ে গঠিত, এর প্রধানটি হলো জনসমষ্টি। মানুষের জন্যই সমাজ, মানুষের জন্যই রাষ্ট্র। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা স্তরে ডিসিপ্লিন হিসেবে জনসংখ্যা বিজ্ঞান এখনো দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারেনি। অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে আমাদের সক্রিয় কর্মশক্তি বেড়ে যাচ্ছে। ফলে জাতীয় উৎপাদন এবং জাতীয় আয় বেড়ে যাবে। অন্যদিকে, অতিরিক্ত যুবশক্তি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে। রাষ্ট্রীয় প্রচার এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কাজে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কর্মীদের সদিচ্ছা, ঐকান্তিক পরিশ্রম ও মানসিক দৃঢ়তার কারণে জনসংখ্যা নামক পাগলা ঘোড়াটির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা আজ বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। বেকারত্ব থেকে দারিদ্র্য, খাদ্যশস্যের প্রাপ্যতা থেকে শুরু করে পড়াশোনা, স্বাস্থ্য সুবিধা থেকে শুরু করে ট্রাফিকের বোঝা পর্যন্ত জনগণের কাছে চ্যালেঞ্জ কতটা তা সহজেই বোঝা যায়। প্রকৃতির সব মাধ্যমের একটি সীমা রয়েছে। তবে ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কোনো সীমা নেই। দেশের ক্রমবর্ধমান নিরবচ্ছিন্ন জনসংখ্যার জন্য কঠোর আইন তৈরি করা, সব রাজনৈতিক দলকে বর্ণ, ধর্ম এবং সম্প্রদায় থেকে ঊর্ধ্বে উঠতে এবং জাতীয় স্বার্থে একটি কঠোর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করতে হবে। আমাদের দেশে বর্ধিত জনসংখ্যা হ্রাস করার কাজে নেমে পড়তে হবে। আমাদের মাতৃভূমিকে বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ থেকে এখনই মুক্তি দিতে হবে। সোনালি ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে উদ্যোগী হওয়ার এখনই সময়।

নিপা রানী সাহা

শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়

সঠিকভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে কোনোভাবেই বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশকে এগিয়ে নিতে টেকসই উন্নয়নের বিকল্প নেই। তবে আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশের জন্য টেকসই উন্নয়নের বড় চ্যালেঞ্জ জনসংখ্যা বিস্ফোরণ। বাড়তি জনসংখ্যার জন্য বাড়তি খাদ্য যোগানে আমরা প্রতি বছর দুই লক্ষাধিক হেক্টর কৃষি জমি হারাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে ১০ বছর পর দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাখা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশে প্রতি মিনিটে জনসংখ্যা বাড়ছে চারজন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। আমাদের দেশে জনসংখ্যা বর্তমানে যা রয়েছে, সেটা আয়তনের তুলনায় অনেক বেশি। তাছাড়া বাংলাদেশ বিশ্বে একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। সুতরাং এই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে টেকসই অবস্থানে নিয়ে আসতে না পারলে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনের সর্বক্ষেত্রে বর্ধিত জনসংখ্যা ভবিষ্যতে নানামুখী সমস্যা সৃষ্টি করবে। তাই একে নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা থেকে উত্তরণ জরুরি। তার জন্য দরকার হচ্ছে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা থেকে মানুষকে দূরে রাখা এবং যথাযথ প্রচারণা ও উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে সব স্তরের মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করে তোলা। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মতৎপরতা জোরদার করার পাশাপাশি দরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকে একটা সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করা।

আবু সুফিয়ান সরকার শুভ

শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close