ইসরাত জাহান ইভা, গবি

  ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩

নারী অগ্রযাত্রায় গণ বিশ্ববিদ্যালয়

প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পৃথিবী সভ্যতার পথে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু আধুনিক যুগে এসেও পুরুষশাসিত সমাজে নারীর এই অবদান খুব একটা স্বীকার করা হয় না। নারীর প্রতি এই অবমূল্যায়ন নিয়েই হয়তো কবি নজরুল বলেছিলেন, ‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর / অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’ হ্যাঁ, কবি ঠিকই বলেছেন। কেননা মানবসভ্যতার ইতিহাস বলে, আধিকাল থেকে আজকের যে সভ্যতা তাতে নারী-পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। অথচ সমাজ ব্যবস্থায় নারী যে একজন মানুষ সেটাই মনে হয় উপলব্ধি হয় না। তবে এসব কিছু চাপিয়ে ব্যতিক্রমভাবে এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকার অদূরে সাভারে গড়ে ওঠা অন্যতম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গণ বিশ্ববিদ্যালয়। সুস্থ-দুস্থ, অসহায়-গরিব, যুদ্ধাহত-তরুণ প্রজন্ম। সব ধরনের নারীদের সুযোগ সৃষ্টি করে কর্মসংস্থান গড়ে তোলার এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। শুধু তাই নয়, সমাজে অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়েও বিশ্বে আলোড়ন তুলছেন।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে একটি অলাভজনক ও ব্যতিক্রম প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি নিয়েই এর জন্ম ১৯৯৮ সালে। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, গ্রাম ও শহরের সম্মিলিত এক অতুলনীয় পরিবেশে ঘিরে রয়েছে ক্যাম্পাসটি। বংশী নদী তীরে অবস্থিত ৩২ একরের সুবিশাল ক্যাম্পাসেও নারীরা যেন কোনো সীমাবদ্ধতা ছাড়াই এগিয়ে যেতে পারে তার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাইতো নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ব্যতিক্রম একটি নাম অর্জন করেছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষকতায় নারী : এই প্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীর আধিক্য পুরুষের তুলনায়ও বেশি। নারীরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারে সে পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছ।

কর্মকর্তা নারী : প্রশাসনিক থেকে অ্যাকাডেমিক, ট্রাস্ট থেকে পরিচালক সব ক্ষেত্রেই নারীর ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। এগুলো পরিচালনায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে।

কর্মচারী নারী : প্রশাসন থেকে মাঠকর্মী, অ্যাকাডেমিক থেকে সাধারণ পর্যায়, লাইব্রেরিয়ান থেকে আইটি কর্মকর্তা, নিরাপত্তারক্ষী থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী, আয়া-বুয়া থেকে গাড়ির চালক, ইলেকট্রিশিয়ান থেকে সুপারভাইজার সব জায়গায় যেন নারীর জয়জয়কার।

নারী শিক্ষায় নানা সুযোগ : গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধরনের বৃত্তি চালু রয়েছে। অসহায়, দরিদ্র, আদিবাসী, উপজাতী সম্প্রদায়সহ নানা কারণে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা এখানে বৃত্তির সুযোগ পায়। এক্ষেত্রে, বেশিরভাগ নারী শিক্ষার্থীরা উপকার ভোগ করেন। থাকার জন্য কম মূল্যে হোস্টেল ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা থাকায় অনেক নারী শিক্ষার্থী এখানে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে।

খেলাধুলায় নারী : বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করলে ২৫ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফের সুযোগ রয়েছে। এতে নারী শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করছে এবং বিভিন্ন টুর্নামেন্টে জয়লাভ করছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু স্পোর্টস চ্যাম্পে নারীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সারা দেশে পদক তালিকা অনুযায়ী তৃতীয় স্থান লাভ করে এই প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও মেয়েদের সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে বিশাল জয় অর্জন করেছে বাংলাদেশের নারীরা। যেখানে মূলধারার চারজন খেলোয়াড়ই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। অধিনায়ক সাবিনা খাতুনসহ মারিয়া মান্দা, মার্জিয়া, শিউলি আজিম এবং একজন ফিজিও এই প্রতিষ্ঠানের কৃতী শিক্ষার্থী।

নারীর প্রতি মূল্যবোধ তৈরি : বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের একটি পাশ পুরোটাই তৈরি করা হয়েছে সমাজের আইডল কিছু নারীর প্রতিকৃতি দিয়ে। বেগম রোকেয়া, ইলা মিত্র, নভেরা আহমেদ, সুফিয়া কামাল থেকে শুরু করে বড় বড় সব নামের এই নারীরা যেমন নারীর প্রতি মূল্যবোধ তৈরিতে সাহায্য করছে, তেমন নারী শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণায় কাজ করছে।

নারী নেতৃত্ব : এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো সংগঠন রয়েছে। সাংবাদিক সমিতি, অগ্নিসেতু, ডিবেটিং সোসাইটি ইত্যাদি। সব জায়গাতেই নারীরা নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এর পেছনেই রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী সহায়ক ভূমিকা।

দক্ষতায় নারী : এখানকার নারী শিক্ষার্থীরা শুধু পড়াশোনা, খেলাধুলা, সাংগঠনিক কার্যক্রমেই দক্ষ নয়, যেকোনো প্রোগ্রাম আয়োজন এবং তার নেতৃত্বেও ভূয়সী প্রশংসার দাবিদার। এছাড়া শিক্ষকরা শিক্ষাদানে এবং কর্মচারীরা তাদের কাজে এতটাই দক্ষ যে, যান মাধ্যমে যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

নারী পরিচালক : বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিএসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিভাগ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, গুরুত্বপূর্ণ পদে এবং গণস্বাস্থ্যের বিভিন্ন অংশে নারীদের পরিচালনায় চলছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

সব মিলিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ব্যতিক্রম একটি নাম অর্জন করেছে নানা খ্যাতির ক্যাম্পাসটি। এখানে নারীরা গড়ে তুলছে তাদের নিজস্ব পরিচয়, প্রতিটি জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রমাণ করে দিচ্ছে তাদের যোগ্যতা। সমাজ, দেশকে উন্নতির পেছনেও নারীদের যে অবদান রয়েছে তা তারা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন। নারীর অগ্রযাত্রায় গণ বিশ্ববিদ্যালয় যে ভূমিকা রাখছে তা সমাজে নারীর অবস্থান আরো পরিষ্কার করছে প্রতিনিয়ত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close