সানজিদা জান্নাত পিংকি, গবি

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩

১০ টাকায় জমে আড্ডা

আড্ডা হলো মানুষের জীবনের অন্যতম সুন্দর মুহূর্ত। আর এই আড্ডার কথা যদি বলতেই হয় তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আড্ডাটাই সবচেয়ে সুন্দর। পড়াশোনা, পরীক্ষা, অ্যাসাইমেন্ট, প্রেজেন্টেশন আর ক্লাসের চাপ এড়িয়ে আড্ডা যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রাণে। যেখানে শিক্ষা কার্যক্রমের সব ব্যস্ততা মিলিয়ে যায় কোনো এক জাদুমন্ত্রে। প্রত্যেকের এই বিমোহিত মুহূর্ত কিন্তু এমনি এমনি তৈরি হয় না। কথা, গান, গল্প, হাসাহাসি, মারামারি, দুষ্টুমি, খুনসুটি কত কী। সব চাপিয়ে আড্ডা যদি হয় ১০ টাকার উপলক্ষ কেমন হবে সেটা? অবিশ্বাস্য ব্যাপার নয়, সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে জমে ১০ টাকায় আড্ডা! কেননা এখানে ক্যাম্পাসের রং ছড়ায় চা, পিঠা, ভেলপুরি, ফুচকা, আচার আর ঝালমুড়ি।

সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে চলে ছোটখাটো এসব ভোজের আয়োজন। যে আয়োজন পরে পরিণত হয় আড্ডায়। ক্যান্টিন, বাদামতলা, ট্রান্সপোর্ট চত্বর, আমতলা, সাংবাদিক সমিতির বারান্দা, খেলার মাঠ, বকুলতলা, পিঠা চত্বর, নানির দোকান, ঝালমুড়ি চত্বরে গল্প আড্ডায় মেতে থাকে সবাই। কখনো আড্ডার ফাঁকে জমে ওঠে গানের আসর। গিটারের টুংটাং শব্দে তৈরি হয় রোমাঞ্চকর পরিবেশ। আর এই সবকিছুর মাঝে অন্যমাত্রার জোগান দেয় মামার ঝালমুড়ি।

গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি) ক্যাম্পাসের অন্যতম পরিচিত একটি মুখ হচ্ছেন মনির মামা, আমাদের হিটলার। গবির সবার প্রিয় ঝালমুড়ি মামা। যার হাতের জাদুমাখা ঝালমুড়ির ঝাল নিতে ভিড় করে প্রায় সবাই। এতেই তৈরি হয় আড্ডার অন্যতম অনুষঙ্গ। ঝালের উত্তাপ আর মুড়ি মজা কখন যে হাসি, ঠাট্টা আর খুনসুটিতে মিলিয়ে যায় কেউ বুঝতে পারে না। এদিকে অন্য পাশে কেউ খায় ফুচকা, কেউ আবার খায় ভেলপুরি। কারো খাবার কেউ কেড়ে নিয়ে বাঁধিয়ে দেয় মারামারি। কেউ কেউ আবার আচারে ভাগ বসানো নিয়ে করে কাড়াকাড়ি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফেরদৌস সালেহীন নিয়ন বলেন, ‘সময়ে-অসময়ে হালকা ক্ষুধা মেটানোর জন্য মামার ঝালমুড়ি আমার প্রথম পছন্দ। কাগজের ঠোঙায় মোড়ানো মামার হাতের ১০ টাকার ঝালমুড়ির স্বাদ অন্যসব খাবারকে হার মানায়। ক্লাসের ফাঁকে বন্ধুদের সঙ্গে ছুটে আসি মামার কাছে। খাওয়া শেষে সবাই ভাগাভাগি করে বিল দিই। এই অনুভূতি বলে বোঝানোর মতো নয়।’

লাকি আক্তার নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্যাম্পাসে আসব কিন্তু ফুচকা খাব না, তা কি হয় নাকি! ক্যাম্পাস জীবনের প্রাণ খুঁজে বেড়াই বন্ধুদের আড্ডায় আর সেই আড্ডাকেই চাঙা করে তোলে এই প্রিয় ফুচকা। অনেক সময় ক্লাস না থাকলেও শুধু ফুচকা খেতেই ক্যাম্পাসে চলে আসি।’

এদিকে শীতের তাপ হার মানে সুজিয়া খালার পিঠার উত্তাপের কাছে। ধোঁয়া বের হওয়া গরম পিঠায় দাঁত বসাতে তর সয় না যেন কারোই। শীতার্ত শিক্ষার্থীদের মুখের ধোঁয়াতে আড্ডার গরম যেন বাষ্পীভূত করে ঠান্ডাকেও। নানির দোকানে লাল চায়ের স্বাদ আর ক্যান্টিনের শিঙাড়া, সমুচা মিলেমিশে তৈরি করে অন্যরকম আবেশ। যে আবেশে ভেসে যায় প্রাণবন্ত সময়।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যাবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। সবার পথ হবে আলাদা। কিন্তু মনের কোণে জমে থাকবে নিত্য অভ্যাসে পরিণত হওয়া এই আড্ডার স্মৃতি আর ১০ টাকার অনুভূতি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close