আতিকুর রহমান, ইবি

  ২২ জানুয়ারি, ২০২৩

মিনি কক্সবাজারে আমরা

পৌষের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে শীতের প্রভাবও বেড়েছে। সব শ্রেণির মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন শীতের তীব্রতায় ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষের। ট্যুরে যাওয়ার মনমানসিকতা থাকা সত্ত্বেও শীতের কারণে হয় না। সাধারণত পরীক্ষার পর কোনো জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে যাওয়ার একটা পরিকল্পনা থাকে। তৃতীয় সেমিস্টারের পর হুট করে সাজেক ভ্যালি থেকে ঘুরে আসলাম।

চতুর্থ সেমিস্টার দিয়ে এক প্রকার ক্লান্তই। নোট তৈরি করা, অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়া, পরীক্ষার জন্য রিভাইস দেওয়া ইত্যাদি কাজে নিজেকে সব সময় ব্যস্ত রেখেছিলাম। পরীক্ষার মাঝে হকসাব কাকা একদিন কল দিয়ে বলল, ‘অনেকদিন হয় আমাদের ঘোরাঘুরি হয় না। তুই এবার আসলে কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিন যাব।’ ক্যাম্পাস থেকে আসার সময় ঘোরাঘুরির মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই বাড়িতে আসছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে আর যাওয়া হয়নি। ট্যুর বাতিল হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল তীব্র শীত। তারপর স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেখা ও মাওয়া ফেরিঘাটে ইলিশ খাওয়ার পরিকল্পনাও বাতিল হয়ে যায়। এদিকে আমার ছুটি ফুরিয়ে আসছে।

আমররা সবাই মিলে চিন্তা করলাম ট্যুরের জন্য পরিকল্পনা করলেই কোনো না কোনো তা বাতিল হয়ে যায়। তাই পরিকল্পনাবিহীন ট্যুরের জন্য বের হতে হবে। এক দিন আমরা কয়েকজন বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এমন সময় আমান মামা বলল, চলো মামা আমরা আমাদের আগের মতো সংক্ষিপ্ত ট্যুরগুলো চালু করি। সঙ্গে সঙ্গে সবাই একমত হলাম।

সকালের দিকে আমি আর আমান মামা মেঘনার তীরে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। পরিকল্পনাটা শুধু আমাদের দুজনের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। এমন সময় হকসাব কাকা ও আরিফকে ঘুরতে যাওয়ার কথা জানালে তারাও একমত হয়। হাঁটতে হাঁটতে সবাইকে সময় ও একত্রিত হওয়ার স্থান জানিয়ে দেওয়া হলো। দুপুরের খাবারের পর সবাই নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত জায়গায় একত্রিত হয়ে যাই।

তারপর শুরু হয় আমাদের যাত্রা। প্রথমে আমরা বাড়ি থেকে গ্রামের আঁকাবাঁকা পথ ধরে মেঘনা নদীর দিকে যেতে শুরু করি। রাস্তার দুপাশে সরিষা ফুলের হলুদ রং। দীর্ঘতার কারণে মনে হচ্ছে দিগন্তের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। মৌমাছিরা সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে আপন নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। সরিষা ফুলের গন্ধ আমাদের বিমোহিত করে দিচ্ছে। মাঠের পর মাঠ সবুজের সমারোহ যেকোনো পথিককে আকৃষ্ট করবে। আমরা বিভিন্ন ধরনের গল্পগুজব করতে করতে সন্ধ্যা সাড়ে চারটার দিকে মেঘনার তীরে উপস্থিত হই। ওই জায়গাটি আলোক বালীর স্থানীয় মানুষের নিকট মিনি কক্সবাজার নামে পরিচিত। জায়গাটি আলোক বালী ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে অবস্থিত। নরসিংদী শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আলোক বালী ইউনিয়ন। মেঘনা নদীর মাঝে অবস্থান। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো নৌপথ। বিনোদন কেন্দ্র নেই বললেই চলে। আশপাশের বাজারই বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। মেঘনার তীর। এক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে। অবসর সময় কাটানোর জন্য জায়গাটি সবার নিকট প্রিয়। ঈদের ছুটিতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন এসে ভিড় করে জায়গাটিতে। রায়পুরা, নরসিংদী সদর ও বাঞ্চারামপুর এই তিন উপজেলার মিলনস্থলে অবস্থিত। তথ্য মতে, অতীতকালে এই জায়গা গভীরতম জায়গা ছিল। কালের বিবর্তনে চড় জেগেছে। মেঘনা নদী দিয়ে নিয়মিত লঞ্চ, স্টিমার, স্পিডবোট, নৌকা চলাচলের ফলে শান্ত জায়গাও অশান্ত হয়ে যায়। সমুদ্রের বিশাল ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ে ফলে পর্যটকদের মনে এক ধরনরে আনন্দ অনুভূতি তৈরি করে। নানা কবি নদীর ঢেউ নিয়ে লিখেছেন কবিতা, ছড়াকার লিখেছেন ছড়া, উপন্যাসিক লিখেছেন উপন্যাস। আমরা নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নানা গান, কবিতার সুর মিলাচ্ছিলাম। ধরনীতে রাতের আগমনী বার্তা নিয়ে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে আমরা চলে আসি লোকালয়ে। স্থানীয় বাখরনগর বাজার আলুর চপ ও পিয়াজুর জন্য বিখ্যাত। সেগুলোর স্বাদ নিতেও ভুলিনি। এর মাধ্যমে আমাদের সংক্ষিপ্ত ট্যুরের সমাপ্তি ঘটে। যদিও অল্প সময়ের জন্য ছিল কিন্তু জীবনের স্মৃতির পাতায় আজীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close