অনিল মো. মোমিন
ইকো-৩০-এর বন্ধন, আমৃত্যু স্মৃতির স্পন্দন
পাঁচ বছর আগে আজকের মতো উত্তেজনার উষ্ণতায় কুয়াশায় ঢাকা এক শীতের সকাল শুরু হয়েছিল আমাদের। সেদিন কুহেলী মেশানো ১৭৫ একরের সবুজ ক্যাম্পাস ও শিক্ষকরা প্রথমবার আমাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। ওই দিন বিশাল অডিটোরিয়ামে মুহুর্মুহু করতালি আর ফুলেল শুভেচ্ছায় আমাদের আগমনকে অভিবাদন জানানো হয় পরম মমতায়। বুধবার, নভেম্বর ১৬, ২০২২। আজকের সকালটিও সেদিনের মতো শিশির স্নাত। আজকেও উত্তেজনার উষ্ণতা নিয়ে আমরা যাচ্ছি প্রিয় ক্যাম্পাসে; প্রিয় অর্থনীতি বিভাগে। বিগত পাঁচ বছর যেটা ছিল আমাদের প্রাণের স্পন্দন; প্রিয় ঠিকানা। তবে আজকের অনুভূতি সেদিনের তুলনায় ভিন্ন। সেদিনের অনুভূতি ছিল শুরু করার। আজকের অনুভূতি শেষ করার। মানে আজ ছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৩০তম ব্যাচ ‘ইকো-৩০’ অনার্সের শেষ ক্লাস পরবর্তী র্যাগ ডে।
শীত, দূরত্ব, প্রিয় ঘুম, অলসতা ইত্যাদি মাড়িয়ে ৮টার গাড়ি ধরি সকলে। ৯টায় সবাই উপস্থিত হয় ডিপার্টমেন্টে। র্যাগ ডে উপলক্ষে বিশেষ টি-শার্ট ও শাড়ি-পাঞ্জাবির ব্যবস্থা ছিল। সেগুলো বিতরণের পর সাড়ে ৯টায় কেক কাটার মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। কেক কাটার মূহূর্ত প্রাণবন্ত হয় প্রিয় জাহাঙ্গীর স্যার, আরিফুল স্যার ও শাহেদ স্যারের উপস্থিতি। এরপর শুরু হয় কেক খাওয়া, টি-শার্টে বন্ধুত্বের লেখালেখি ও আবির ছিটানো। ফাঁকে ফাঁকে চলে বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি তোলার হিড়িক। বেলা ১১টায় বিভাগ থেকে র্যালি শুরু হয়। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে চক্কর দিয়ে মুজিব চত্বরে এসে শেষ হয় র্যালিটি। তারপর নেচেগেয়ে আর হইহুল্লোড়ে ফ্ল্যাশ মব শুরু হয় দুপুর ১২টায়। সব দ্বিধা-সংকোচ ঝেরে প্রাণের উচ্ছ্বাস প্রকাশে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। দুপুর ১টায় বিশেষ খাবার বিতরণের মাধ্যমে শেষ হয় প্রথম পর্ব।
দ্বিতীয় পর্বে ছেলেরা বিশেষ পাঞ্জাবি ও মেয়েরা বিশেষ শাড়ি পরে পৌনে ৩টায় বিভাগে উপস্থিত হয়। এখানে প্রিয় শিক্ষকদের সঙ্গে ফটোসেশন হয়। বিশেষ করে পার্থ স্যার ও দেবাশীষ স্যারের সহযোগিতা আমাদের উদ্বেলিত করেছে। এরপর বিভাগ থেকে বেরিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরাল, প্রিয় লাল বাস, স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার ও অডিটোরিয়ামে চলে অফিশিয়াল ফটোশুট। এর মধ্যে ‘সততা ফোয়ারা’য় বন্ধু সাঈদ খানের নির্দেশনায় অনুষ্ঠিত হয় একটি র্যাম্প শো। এ এক নতুন ও অন্য রকম অনুভূতি ছিল সবার জন্য। মূহুর্মুহু করতালি আর উচ্ছ্বাসে এই ইভেন্টটি একটু বেশিই উপভোগ্য ছিল। ক্লাসের প্রিয় বন্ধুবান্ধবীর সঙ্গে শেষ একটি মুহূর্ত ক্যামেরায় বন্দি করতে মনোযোগ বাড়ে সবার। ছোট ভাই নাঈম ও অতিথির ক্যামেরায় স্মৃতিবন্দি হতে থাকে অনবরত। এমন সব ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে গোধূলি নামে। নামে সন্ধ্যা। বাড়ে শহরের মেসে কিংবা নিজেদের বাড়ি ফেরার চিন্তা। কারো ২৪ কিমি, কারো ২২ কিমি কিংবা কিছু কম বেশি দূরত্ব পেরিয়ে পৌঁছাতে হবে নীড়ে।
বন্ধুদের থেকে একে একে বিদায় নেয় সবাই, কেউ হাসিমুখে কেউবা কিছুটা আবেগে আপ্লুত হয়ে। অর্থনীতির মতো একটি রস-কসহীন ও অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশের সাবজেক্টে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে একটা কথা প্রায় শোনা যায়- এরা কম আবেগী ও বাস্তববাদী। শিক্ষাজীবনে এর সত্যতা উপলব্ধি করলেও আজকের দিনে তা যেন সসম্পূর্ণ মিথ্যা। ছেড়ে যাওয়ার এই মুহূর্তে আজ সবাই আবেগে ভরপুর। আজকের শেষটা সবার বিষণ্ন। ফেরার পথে একলা হয়ে এই আবেগ যেন আরো ঘনীভূত হয়। সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন স্ট্যাটাসে ফুটে ওঠে প্রাণের স্পন্দনের ছেদ চিহ্ন। মায়া কাটিয়ে এগোতে হবে এটাই সময়ের আহ্বান। তবুও বলতে পারি আজ-কাল-পরশু আমাদের হৃদয়েও শিশির বিন্দুর ন্যায় ক্ষরণ হবে। এর শেষও হবে। শেষ মানেও নতুন কিছু শুরু। কেননা সময়ের প্রয়োজনেই আমাদের ফেরার তাড়া আছে। সবাইকে ফিরতে হবে আজ ও আগামীর জন্য, দেশ ও জাতির জন্য। সর্বোপরি পরিবার ও নিজের জন্য। কেননা এই বন্ধুরাই আলোকিত করবে চারপাশ। ‘Eco-30 is never apart, May be distance but not in heart’
"