মো. শাকিল আহমদ, চবি

  ০৬ ডিসেম্বর, ২০২২

প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সন্ধিক্ষণে প্রাণের ক্যাম্পাস

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি পাহাড়বেষ্টিত দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬৬ সালে ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় এটির যাত্রা শুরু হয়। চারটি বিভাগে মোট সাতজন শিক্ষক ও ২০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে ৪৮টি বিভাগ ও ছয়টি ইনস্টিটিউটে ৯০৬ জন শিক্ষক এবং ২৭ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।

১৮ নভেম্বর ক্যাম্পাসটি প্রতিষ্ঠার ৫৬ বছর অতিক্রম করে ৫৭তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। যদিও এই দীর্ঘ পথচলা কখনোই মসৃণ ছিল না। অনেক বাধা আর প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েই কুড়িয়ে এনেছে অনেক অনেক সাফল্য। এই সুদীর্ঘ সময়ের অগ্রযাত্রায় স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে। প্রতিষ্ঠানটির সূচনালগ্ন থেকেই দেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে প্রতিনিয়িত। এই পাহাড়ি ক্যাম্পাস থেকেই উদ্ভব হয়েছে দেশ বরেণ্য বহু শিক্ষাবিদ, কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী ও গবেষক। এসব গুণীজনের মধ্যে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ভৌত বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলাম, সৈয়দ আলী আহসান, অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক আবুল ফজলসহ বহু খ্যাতনামা ব্যক্তি। যাদের সুখ্যাতি দেশের গন্ডি পেড়িয়ে বিস্তৃত লাভ করেছে বিশ্বপরিমণ্ডলে। এছাড়াও মহান মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব থেকে দেশের প্রত্যেকটি ক্রান্তিলগ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রেখেছে সক্রিয় ভূমিকা। যা প্রতিনিয়ত আমাদের অনুপেরণা দেয়।

তবে হাজারো প্রাপ্তির ভিড়ে জমা পড়েছে অনেক অপ্রাপ্তির বোঝাও। বর্তমানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে কতটা সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পেরেছে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সেরা বিশ্ববিদ্যালগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিতে পারেনি। এড়াছাও শিক্ষা ও গবেষণামুখী শিক্ষার্জনে আজ অনেকটাই পিছিয়ে আছে। প্রতিষ্ঠার এত দিন পরেও নেই কোনো ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)। যেটি ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে সম্পর্ক মজবুদ ও সৃজনশীলতা বিকাশে বিশাল ভূমিকা রাখে। এছাড়াও প্রতিনিয়তই শিক্ষার্থীরা স্থানীয়দের দ্বারা হয়রানির স্বীকার হচ্ছে। সমাবর্তন অনুষ্ঠান এখনো আটকে আছে চারের কোঠায়। অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনিয়মের। আবাসন সংকট, খাবারের নিম্নমান, শাটল ট্রেনের ভোগান্তি, প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি, বিভিন্ন বিভাগে সেশনজট, স্বচ্ছ জবাবদিহির অভাব, সেকেলের পাঠ্যসূচি, শিটনির্ভর পড়াশোনার পাশাপাশি এখনো চলছে অ্যানালগ পদ্ধতিতে দাপ্তরিক কাজকর্ম। ফলে প্রতিনিয়ই শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী করতে নেই কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ। সুতরাং কর্তৃপক্ষের কাছে চাওয়া থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম সমুন্নতি রাখতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ শতভাগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি উপরোক্ত সংকটগুলো কাটিয়ে ওঠা।

সর্বোপরি, প্রাণের ক্যাম্পাসের এই শুভক্ষণে প্রত্যাশা রইল সব অসংগতি গুছিয়ে শিক্ষা-সংস্কৃতির উর্বর চারণভূমিতে পরিণত হোক। সৃজন হোক জগৎবিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ, যারা অবদান রাখবে দেশ ও দশের জন্য।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close