ফাবিহা বুশরা

  ০৬ ডিসেম্বর, ২০২২

ইবিতে শীতের মুগ্ধকর সকাল

ছোটবেলার শীতের সকালগুলোতে মায়ের বানানো ধোঁয়া ওঠা ভাপাপিঠা খেতে খেতে দাদি ছড়া কাটত-

‘হীম হীম শীত, শীতবুড়ি এলোরে,

কনকনে ঠান্ডায়, দম বুঝি গেল রে!’

দম বন্ধ হওয়া কাঁপুনি নিয়ে শীতের সকাল শুরু হলেও বিপরীতে বেশ আমেজের ভাব পাওয়া যেত। শীতের সকাল মনে আসলেই যেন দাঁত হীম করা কনকনে ঠান্ডায় খেঁজুরের রসের জন্য জিভটা শুকিয়ে আসে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্বপ্নীল ক্যাম্পাসে এবার আমার তৃতীয়বারের মতো শীতের সকাল দেখা। জানুয়ারি মাসের কনকনে ঠান্ডার শীতের সকাল দিয়েই এই ক্যাম্পাসে আমার অস্তিত্বের সূচনা। মনে আছে, সেই প্রথমবারের মতো ক্যাম্পাসের নিকটবর্তী এলাকা ‘ত্রিবেণী’তে বন্ধুদের সঙ্গে খেজুরের রসের মিনি অভিযানের কথা। প্রায় প্রত্যেক শীতেই রসের স্বাদ নেওয়া হয়; কিন্তু নিজে অনুসন্ধান চালিয়ে এই রস সংগ্রহ যেন রসের সেই স্বাদকে অমৃত করে তোলে। শীতের সকালের আরামের ঘুম মাড়িয়ে একবার দূর্বাঘাসে পা ফেললেই পাওয়া যায় নৈস্বর্গিক স্পর্শের অনুভূতি। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালের শিউলিদের হাতছানি আর সুগন্ধে পুরো ক্যাম্পাস যেন মেতে থাকে। শিউলির সুভ্রতা যেন পুরা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে দেয় নতুন আন্দোলন। কাঠগোলাপ, গাঁদা, জিনিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, রঙন, আলোকনন্দা এমন নাম না জানা হাজারও ফুলের আমন্ত্রণে মৌমাছির দল যেন একটু বেশি-ই ব্যস্ত থাকে। শীতকালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্রদসংলগ্ন পাখি চত্বরে দেখা মিলে হরেক রকম বিদেশি পাখির। তাদের কিচিরমিচির ডাক আর সাড়া জাগানো কলরবে শুধু সেই চত্বরই নয়, বরং গোটা ক্যাম্পাস মুখরিত থাকে। কবির ভাষায় ‘পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইল’ যার বাস্তবিক চিত্র ফুটে ওঠে এই শীতের সকালেই। সকালের এই কুয়াশার ঘোর কাটতে না কাটতেই সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে পিঠাপুলির আনন্দে। প্রতি বছর শীতকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় আয়োজন করা হয় পিঠা উৎসবের। যেখানে থরে থরে সাজানো থাকে শিক্ষার্থীদের নিজ হাতে বানানো হরেক রকম পিঠা। এগুলোর মধ্যে পাটিসাপটা, দুধপুলি, ক্ষীরপিঠা, তেলপিঠা, চিতইপিঠা, রসপিঠা, নকশিপিঠা ইত্যাদি। এভাবেই কুয়াশা, শিশির, প্রকৃতি, মৌমাছি, অতিথি পাখি আর শিউলিদের আবেশে কনকনে ঠান্ডার আবরণে ইসলমী বিশ্ববিদ্যালয় বরণ করে নেয় শীতের প্রতিটি সকালকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close