মো. নাজমুল ইসলাম, ইবি

  ২৭ নভেম্বর, ২০২২

শৈশবের চড়ুইভাতি

কেন জানি ছেলেবেলায় ফিরে যেতে ইচ্ছা করছে খুব। সেই চড়ুইভাতি, কলাপাতার ছাউনি, কচুরিপানার মাছ, মাটির হাঁড়ি-পাতিল, মিছিমিছি ভাত রান্না করা আবার ফিরে পেতে ইচ্ছা করছে খুব। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে হয়তো কলাপতার ঘর, নারিকেলের আচায় ভাত রান্না করা সম্ভব নয়। কিন্তু বন্ধুরা মিলে তার স্বাদ নিতে দোষ কোথায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে শ্রীরামপুর গ্রাম। যেখানে রয়েছে গ্রাম বাংলার ছোঁয়া। পল্লী কবি জসিমউদ্দীনের ‘রাখাল ছেলে’ কবিতার ন্যায় বিশাল সবুজ মাঠ। মাঠের বুকচিরে আঁকাবাঁকা পথ। রাখালেরা ভাটিয়ালি গান গেয়ে গোধূলি সন্ধ্যায় এ পথ বেয়ে নীড়ে ফেরে। তার পাশেই ছোট নদী। নদী পার হতেই রয়েছে বিশাল এক বটবৃক্ষ, বছরের পর বছর গ্রামের রাখাল, কৃষক ও মুসাফিরদের নিস্বার্থ ছায়া দিচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে এখানে আড্ডা জমায়। চড়ুইভাতির জন্য এ যেন উৎকৃষ্ট স্থান। ইবির দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের বন্ধুরা সবাই সেখানে একত্রিত হলাম। সেই ছেলে বেলার ন্যায় কারো হাতে পাতিল, কেউ পেঁয়াজ কাটছে, গাছ থেকে কাঠ কেটে আনছে, কেউ আবার গান গাইছে তার সঙ্গে সবাই সুর মিলাচ্ছে। আর কবির ভাষায় বললে, কেউবা বসে হলদি বাটে কেউবা রাঁধে ভাত, কেউবা বলে ধুত্তরি ছাই পুড়েই গেল হাত। বিনা আগুন দিয়েই তাদের হচ্ছে যদিও রাঁধা, তবু সবার দুই চোখেতে ধোঁয়া লেগেই কাদা। কোর্মা পোলাও কেউবা রাঁধে, কেউবা চাখে নুন, অকারণে বারে বারে হেসেই বা কেউ খুন। রান্নার রেসিপি ছিল দারুন: বাসমতি চালের পোলাউ, সঙ্গে সোনালি মুরগির রোস্ট, একটি করে ডিম ও মুগডাল ভুনা। পথের ধারে গাছের ছায়ায় প্রবল ধোয়া উড়িয়ে রান্না করছে কয়েকজন। বাকিরা বসে থাকলে চলবে না, এবার শৈশবের গভীরে ফিরে যাওয়ার সময়।

শুরু হলো মোরগ লড়াই। তুমুল লড়াই শেষে হাঁড়ি ভাঙার পালা। কেউ হাঁড়ি ভাঙতে পারেনি, অনেকেই উল্টো পথে হাঁটা শুরু করেছে। তারপর তপ্তদুপুরে অনুষ্ঠিত হলো এক জমজমাট ফুটবল ম্যাচ। পথচারীরাও দাঁড়িয়ে এটি উপভোগ করেছে। এত কিছুর পরে নদীতে গোসল না করলে আনন্দটা কেমন যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এবার দল বেঁধে নদীতে নামার পালা, পানিতে অনুষ্ঠিত হলো সাঁতার প্রতিযোীিতা ও গোল্লাছুট। অনেক হয়েছে এবার উঠতে হবে। ঘড়িতে প্রায় ৩টা বাজে। সবাই ফিরে এসেছে খাবারের কাছে। ততক্ষণ খাবারও প্রস্তুত। বন্ধুরা মিলে সবাই এক সঙ্গে গাছতলা বসে খাবার খাওয়ার আনন্দটাই অন্য রকম, যা লিখে বোঝানো অসম্ভব। পরিশেষে নীলকান্তের একটি কবিতা দিয়ে শেষ করতে চাই: যাহ! তোকে চাইব না আর ডাকতে কাছে, ভ্যান্না তলায়, কলারপাতার ঘর বানাতে। আমন খরের জাজিম পেতে ডাকব না আর, চাইব না আর বউ বানাতে। গোলমরিচের তরকারি আর জংলি কচুরশাক, বলব না আর রাঁধতে তোকে বালি মাটির ভাত। করব না আর মাটির থালায় মিছি মিছি বউভাত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close